মারিশদা, 11 অক্টোবর : রাতের দিকে হঠাৎই "আমাকে বাঁচাও" বলে এক নাবালক ঢুকে পড়ল থানায় ৷ লুটিয়ে পড়ল পুলিশের সামনে ৷ চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারাল সে ৷ হাতে পায়ে আঘাতের চিহ্ন ৷ কেটে গেছে অনেক জায়গায় ৷ রক্ত পড়ছে ৷ নাবালকের এমন অবস্থা দেখে হকচকিয়ে যান পুলিশ অফিসাররা ৷ হইচই পড়ে যায় থানার মধ্যে ৷ তড়িঘড়ি তুলে চোখে মুখে জল দেওয়া হয় তার ৷ জ্ঞান ফিরলে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ ৷ জ্ঞান ফিরলে প্রথমে যা জানায় তা শুনে প্রায় শিউরে উঠেছিলেন পুলিশকর্তারা ৷ পুলিশকে ওই নাবালক জানায়, টানা 8 দিন তাকে খেতে দেয়নি তার মা ৷ মঙ্গলবার তাকে কাচ দিয়ে গলার নলি কেটে মেরে ফেলারও চেষ্টা করেছে ৷ এরপর কোনওরকমে প্রাণে বাঁচার জন্য থানায় চলে আসে সে ৷ পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদার রানিয়া গ্রামের ঘটনা ৷
বছর 12-র ওই নাবালক জানিয়েছে, পুজোয় ভালো জামা-প্যান্ট কিনতে চেয়ে বায়না ধরেছিল সে ৷ তার বাবা রাজমিস্ত্রি ৷ কর্মসূত্রে তিনি কেরালায় থাকেন ৷ মা বিড়ি শ্রমিক ৷ তার দাবি, পুজোর কিছুদিন আগে তার বাবা জামা-কাপড় কেনার জন্য কিছু টাকা পাঠান অ্যাকাউন্টে ৷ এরপর মাকে জামা প্যান্ট কিনে দিতে বলে সে ৷ মা কম দামের জামা কাপড় কিনে দেন ৷ সেগুলি তার পছন্দ হয়নি ৷ ভালো জামা-প্যান্ট কিনে দেওয়ার জন্য বায়না ধরে ৷ কিন্তু মা রাজি হয়নি ৷ অভাবের সংসারে আর কিছু কিনে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানায় তার মা ৷ এরপরই মাকে না জানিয়ে মামার সঙ্গে যোগাযোগ করে ৷ অনলাইনে জামা অর্ডারের জন্য বাড়িতে থাকা ATM কার্ড, পিন নম্বর ও CVV নম্বর মামাকে বলে দেয় ৷ ঘটনার কথা জানতে পেরে রেগে গিয়ে তাকে বাড়িতে আটকে রাখে মা ৷ দাবি, মা তাকে খেতেও দেয়নি ৷ ঘরেতে মুড়ি ছিল সেটাই সে খায় ৷ এছাড়াও এর আগে মা তাকে বেধড়ক মারধর করেছিল বলে দাবি করেছে সে ৷ অবশেষে দশমীর দিন খিদে সহ্য করতে না পেরে কোনওরকমে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে পিসির বাড়ি ভাত খেতে যায় ৷ এরপরে বাড়ি ফিরলে আরও রেগে যায় তার মা ৷ আয়নার কাচ ভেঙে তার গলার নলি কেটে মেরে ফেলার চেষ্টা করে ৷ চিৎকার করতে থাকে সে ৷ তার চিৎকার শুনে সেখানে আসেন স্থানীয়রা ৷ কোনওরকমে মায়ের হাত থেকে পালিয়ে সোজা ছুটতে ছুটতে থানায় চলে আসে ৷
ওই নাবালকের বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছে পুলিশ ৷ আপাতত তাকে একটি হোমে পাঠানো হয়েছে ৷ তবে সে আর মায়ের কাছে ফিরে যেতে রাজি নয় ৷ তার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে ৷ বয়ানানুযায়ী পুলিশ একটি কেস ডায়েরিও করেছে ৷ ওই নাবালকের মা মানসিক ভারসাম্যহীন কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷