মহিষাদল : 1778 সালে মহিষাদল রাজবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো ৷ রানি জানকী দেবী-প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেন ৷ আজও রাজবাড়ির ঠাকুর দালানে পুজোর কয়েকদিন শাঁখ বাজে, দেবীর পুজো হয় সাড়ম্বরে ৷ ষষ্ঠীতে মায়ের বোধন থেকে শুরু করে দশমীর বরণ , সবই করেন রাজবাড়ির মহিলারা ৷ কিন্তু তাঁরা থাকেন পরদার আড়ালে ৷ 245 বছর ধরে এই নিয়ম পালন করে আসছেন তাঁরা ৷ ঠাকুর দালানের দেওয়ালে নতুন করে রং করা হয়েছে ৷ ঝাড়বাতির আলোয় রাজবাড়ির ঠাকুরদালান নতুন হয়ে উঠলেও পুরানো নিয়ম এখনও কেন মেনে চলা হয় ? রাজবাড়ির সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ জানান, এটিই তাঁদের বাড়ির নিয়ম ৷ পুজোয় মঙ্গল হয় ৷
পারিবারিক রীতি অনুযায়ী দেবীর গায়ের রং হলুদ ৷ তাঁর পটল চেরা চোখ ৷ বৈষ্ণব মতে মহালয়ার পরদিন থেকে দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয় । মায়ের পুজো শুরু হওয়ার আগে পূজিত হন কুলদেবতা গোপাল । রাজবাড়ির রীতি অনুযায়ী এখনও সপ্তমী, অষ্টমী , নবমীতে বসে গানের আসর । যা দেখতে ভিড় জমান আশপাশের আট-দশটি গ্রামের বাসিন্দারা । অনেক প্রজন্ম আগে, অষ্টমীর সন্ধিপুজো সূচনা এবং শেষের সময় কামান দেগে প্রজাদের পুজোর নির্ঘণ্ট জানান দেওয়া হত । আজ আর তা হয় না, বাজি ফাটিয়ে শুরু হয় সন্ধিপুজো । অষ্টমী পুজোর জন্য কেদারনাথ থেকে আসত 108টি নীল পদ্ম ।
প্রতিমা বিসর্জনের আগে দেবীকে দেওয়া হত 'গার্ড অফ অনার' । রূপনারায়ণ নদীতে দুই নৌকায় দেবীর নিরঞ্জনও আজ অতীত । বিসর্জনের শোভাযাত্রায় বন্দুক হাতে পেয়াদারা নেই আজ । এখন ঐতিহ্যই এই রাজবাড়ির পুজোর জনপ্রিয়তার কারণ ।
মহালয়ার পরদিন কলকাতা থেকে সপরিবারে মহিষাদলের বাড়িতে আসেন রাজপরিবারের সদস্যরা । ওইদিন ঘট স্থাপন করে শুরু হয় পুজোর কাজ । আজ 53 বছর ধরে প্রতিমা গড়ার কাজ করছেন গোপাল চন্দ্র ভুঁইঞা । প্রতিমা দর্শনের জন্য অতিরিক্ত ভিড় শুরু হওয়ায় বর্তমানে রাজবাড়ির তরফে প্যান্ডেল তৈরি করা হয় প্রতিবছর ।