ETV Bharat / state

আমফানের দাপটে তছনছ ঝাউবন, "শ্মশান-সৈকত" দিঘায় সংকটে পর্যটন - বন দপ্তর

আমফানের দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে দিঘা সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ ঝাউবন। প্রায় 400 একর জমির কয়েক লাখ ঝাউ গাছ উপড়ে গিয়েছে ঝড়ে। সংকটে দিঘার পর্যটন ব্যবসা, চিন্তিত প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা, মন খারাপ পর্যটকদের। নতুন করে বৃক্ষ রোপণ শুরু করেছে বন দপ্তর।

Jhau forest of Digha beach is destroyed
দীঘা
author img

By

Published : May 23, 2020, 6:55 PM IST

Updated : May 24, 2020, 9:24 AM IST

দিঘা, 23 মে: আমফানের দাপটে শ্মশান হয়ে গিয়েছে দিঘার ঝাউবন। শুধু ঝাউয়ের মৃত্যু তো নয়, বরং চিরকালীন বাঙালি রোমান্টিকতারও মৃত্যু। কম খরচে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির প্রিয় সৈকতের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। সুপার সাইক্লোন আমফানের দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে সমুদ্র সৈকতের পুরোটাই। সবচেয়ে বড় কথা, দিঘার যে সিগনেচার ঝাউবন, সেই বিষয়টিই পড়ে গিয়েছে অস্তিত্বের সংকটে। দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর সহ উপকূলবর্তী এলাকার লক্ষাধিক ঝাউগাছ সাইক্লোনে ভেঙে পড়েছে বলে জানাচ্ছে বন দপ্তরও। স্বভাবতই এই ঘটনায় মন ভালো নেই দিঘার পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলেরই। বন দপ্তরের তরফে নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে অবশ্য। কিন্তু, সেই গাছ কবে বড় হয়ে পরিপূর্ণ ঝাউবন হয়ে উঠবে, কবে ফিরবে দিঘার যৌবন? এই প্রশ্ন কঠিন এবং উত্তরও আপাতত কারো জানা নেই।

বনদপ্তর এবং স্থানীয়দের বক্তব্য, ইতিমধ্যে একাংশের মানুষের অতিরিক্ত চাহিদায়, তথা আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিঘার সৌন্দর্য্যহানি হয়েছিল। এর উপর ভাঙনের ফলে দিঘা হারিয়েছে একাধিক বালিয়াড়ি ও ঝাউবন। তবুও কংক্রিটের জঙ্গলের বিপরীতে মাথা উঁচু করে লড়াই দিচ্ছিল কয়েক লাখ ঝাউগাছ। সমুদ্র এবং তারাই দিঘার অস্তিত্ব হয় উঠেছিল। কিন্তু, দানব আমফানের দাপটে সেই অস্তিত্বই এখন সংকটে। লাখ লাখ ঝাউয়ের লাশ যেন সুন্দরী দিঘাকে রাতরাতি শ্মশানে ভূমিতে পরিণত করেছে!

Jhau forest of Digha beach is destroyed
আমফানের দাপটে তছনছ দিঘার ঝাউবন।

লকডাউনের পর থেকেই সরকারি বিধি নিষেধে দীর্ঘদিন পর্যটকশূন্য দিঘা। আশা করা গিয়েছিল, কোরোনার প্রকোপ কাটলেই ফের প্রিয় ঝাউ ঘেরা সমুদ্র সৈকতের টানে পর্যটক আসবে, জম উঠবে পর্যটন ব্যবসাও। কিন্তু, তার আগেই আমফানের দাপট দিঘা নিজেই যেন নিজেকে হারাল! শুধু কী দিঘা? এইসঙ্গে শংকরপুর, তাজপুর, জুনপুট, মন্দারমণি থেকে হলদিয়া অবধি মারণ ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত সমুদ্র তীরবর্তী সবুজ। সমুদ্র উপকূলবর্তী 400 হেক্টর জমির ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। পাশাপাশি হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, জেলিংহাম সহ সমুদ্র ও নদী সংলগ্ন বহু ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্ষতিগ্রস্ত। বন আধিকারিকদের কথায়, শিল্প শহর হলদিয়া সহ জেলাজুড়ে যেভাবে সবুজ ধ্বংস হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে প্রকৃতিক ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা হবে তা রীতিমতো এক চিন্তার বিষয়। নতুন চারাগাছ দ্রুত লাগালেও বড় হতে সময় লাগবে। হতাশ বন দপ্তর আধিকারিকদের বক্তব্য, কিছু দুষ্প্রাপ্য গাছ হয়তো চিরকালের মতো হারিয়ে গেল! নতুন প্রজন্ম যে বৈচিত্রের কথা কোনওদিন জানতে পারবে না! এইসঙ্গে এমন বিপুল পরিমাণ গাছ ধ্বংস হওয়ায় শিল্প শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েও চিন্তায় প্রশাসন।

চারদিকে ভাঙা ঝাউ। তারই মধ্যে সৈকতে দাঁড়িতে দিঘার বাসিন্দা তথা পরিবেশপ্রেমী সত্যব্রত দাস বলেন, আমফান আমাদের মূল্যবান সম্পদ কেড়ে নিল। ঝড়ের পর থেকে কেবল সমুদ্রের গর্জনই শোনা যাচ্ছে, পাখিদের কলতান নেই। ওদের ঘর ভেঙেছে। বেঁচে থাকলে হয়তো অন্য কোথাও ঘর বেঁধেছে। বহু হোটেল গজিয়ে ওঠায় এমনিতেই বহু গাছ নষ্ট হয়েছে। যেটুকু ছিল তাও শেষ হয়ে গেল। সমুদ্র আর ঝাউগাছের মেলবন্ধনেই তো পর্যটন ব্যবসা গড়ে উঠেছিল দিঘায়। এই ধ্বংসলীলার পর পর্যটন আর জমে উঠবে কি না সেটাই এখন চিন্তার।

আমফানের দাপটে তছনছ ঝাউবন...

সৈকতের চিত্র দেখে মন ভালো নেই স্থানীয় ব্যবসায়ী সুধীর জানারও। তিনি বলেন, প্রায় সমস্ত ঝাউ গাছ ভেঙে পড়েছে। চারিদিকে যেন হাহাকার পড়ে গিয়েছে। এমনিতেই লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ। আমফানে ঝাউগাছ ভেঙে যাওয়ায় দিঘার সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়েছে। মানুষ না এলে ব্যবসা হবে কীভাবে? আমরা খেতে পাবো তো?

পর্যটন ব্যবসা যে চরম সংকটে পড়ে গেল, তা মানছে বন দপ্তরও। তবে, দিঘাকে তার পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দিতে ইতিমধ্যে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বন বিভাগ। জেলার বন আধিকারিক জানান, উপকূলবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে 50 থেকে 52 হাজার দুবছর বয়সি ঝাউ গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। ঝড়ে যেভাবে সবুজ ধ্বংস হয়েছে তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরো বর্ষাকাল সহ সারা বছর ধরে আমরা গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলদিয়ার নিজস্ব জমিতে গড়ে ওঠা শিল্প সংস্থাগুলিকে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। আমরা গাছ লাগিয়ে সেই ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে তা সময় সাপেক্ষ।

"চলো না দিঘার সৈকত ছেড়ে ঝাউ বনের ছায়ায় ছায়ায়", বাঙালির চেনা গান। ভাগ্যিস, পিন্টু ভট্টাচার্যের কণ্ঠে 1968 সালেই জন্মেছিল এই গান। কারণ, 2020 সালের মে মাসের 20 তারিখ রাতের পর আর এই গান লেখা সম্ভব হত না।

দিঘা, 23 মে: আমফানের দাপটে শ্মশান হয়ে গিয়েছে দিঘার ঝাউবন। শুধু ঝাউয়ের মৃত্যু তো নয়, বরং চিরকালীন বাঙালি রোমান্টিকতারও মৃত্যু। কম খরচে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির প্রিয় সৈকতের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। সুপার সাইক্লোন আমফানের দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে সমুদ্র সৈকতের পুরোটাই। সবচেয়ে বড় কথা, দিঘার যে সিগনেচার ঝাউবন, সেই বিষয়টিই পড়ে গিয়েছে অস্তিত্বের সংকটে। দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর সহ উপকূলবর্তী এলাকার লক্ষাধিক ঝাউগাছ সাইক্লোনে ভেঙে পড়েছে বলে জানাচ্ছে বন দপ্তরও। স্বভাবতই এই ঘটনায় মন ভালো নেই দিঘার পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলেরই। বন দপ্তরের তরফে নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে অবশ্য। কিন্তু, সেই গাছ কবে বড় হয়ে পরিপূর্ণ ঝাউবন হয়ে উঠবে, কবে ফিরবে দিঘার যৌবন? এই প্রশ্ন কঠিন এবং উত্তরও আপাতত কারো জানা নেই।

বনদপ্তর এবং স্থানীয়দের বক্তব্য, ইতিমধ্যে একাংশের মানুষের অতিরিক্ত চাহিদায়, তথা আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিঘার সৌন্দর্য্যহানি হয়েছিল। এর উপর ভাঙনের ফলে দিঘা হারিয়েছে একাধিক বালিয়াড়ি ও ঝাউবন। তবুও কংক্রিটের জঙ্গলের বিপরীতে মাথা উঁচু করে লড়াই দিচ্ছিল কয়েক লাখ ঝাউগাছ। সমুদ্র এবং তারাই দিঘার অস্তিত্ব হয় উঠেছিল। কিন্তু, দানব আমফানের দাপটে সেই অস্তিত্বই এখন সংকটে। লাখ লাখ ঝাউয়ের লাশ যেন সুন্দরী দিঘাকে রাতরাতি শ্মশানে ভূমিতে পরিণত করেছে!

Jhau forest of Digha beach is destroyed
আমফানের দাপটে তছনছ দিঘার ঝাউবন।

লকডাউনের পর থেকেই সরকারি বিধি নিষেধে দীর্ঘদিন পর্যটকশূন্য দিঘা। আশা করা গিয়েছিল, কোরোনার প্রকোপ কাটলেই ফের প্রিয় ঝাউ ঘেরা সমুদ্র সৈকতের টানে পর্যটক আসবে, জম উঠবে পর্যটন ব্যবসাও। কিন্তু, তার আগেই আমফানের দাপট দিঘা নিজেই যেন নিজেকে হারাল! শুধু কী দিঘা? এইসঙ্গে শংকরপুর, তাজপুর, জুনপুট, মন্দারমণি থেকে হলদিয়া অবধি মারণ ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত সমুদ্র তীরবর্তী সবুজ। সমুদ্র উপকূলবর্তী 400 হেক্টর জমির ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। পাশাপাশি হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, খেজুরি, জেলিংহাম সহ সমুদ্র ও নদী সংলগ্ন বহু ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্ষতিগ্রস্ত। বন আধিকারিকদের কথায়, শিল্প শহর হলদিয়া সহ জেলাজুড়ে যেভাবে সবুজ ধ্বংস হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে প্রকৃতিক ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা হবে তা রীতিমতো এক চিন্তার বিষয়। নতুন চারাগাছ দ্রুত লাগালেও বড় হতে সময় লাগবে। হতাশ বন দপ্তর আধিকারিকদের বক্তব্য, কিছু দুষ্প্রাপ্য গাছ হয়তো চিরকালের মতো হারিয়ে গেল! নতুন প্রজন্ম যে বৈচিত্রের কথা কোনওদিন জানতে পারবে না! এইসঙ্গে এমন বিপুল পরিমাণ গাছ ধ্বংস হওয়ায় শিল্প শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েও চিন্তায় প্রশাসন।

চারদিকে ভাঙা ঝাউ। তারই মধ্যে সৈকতে দাঁড়িতে দিঘার বাসিন্দা তথা পরিবেশপ্রেমী সত্যব্রত দাস বলেন, আমফান আমাদের মূল্যবান সম্পদ কেড়ে নিল। ঝড়ের পর থেকে কেবল সমুদ্রের গর্জনই শোনা যাচ্ছে, পাখিদের কলতান নেই। ওদের ঘর ভেঙেছে। বেঁচে থাকলে হয়তো অন্য কোথাও ঘর বেঁধেছে। বহু হোটেল গজিয়ে ওঠায় এমনিতেই বহু গাছ নষ্ট হয়েছে। যেটুকু ছিল তাও শেষ হয়ে গেল। সমুদ্র আর ঝাউগাছের মেলবন্ধনেই তো পর্যটন ব্যবসা গড়ে উঠেছিল দিঘায়। এই ধ্বংসলীলার পর পর্যটন আর জমে উঠবে কি না সেটাই এখন চিন্তার।

আমফানের দাপটে তছনছ ঝাউবন...

সৈকতের চিত্র দেখে মন ভালো নেই স্থানীয় ব্যবসায়ী সুধীর জানারও। তিনি বলেন, প্রায় সমস্ত ঝাউ গাছ ভেঙে পড়েছে। চারিদিকে যেন হাহাকার পড়ে গিয়েছে। এমনিতেই লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ। আমফানে ঝাউগাছ ভেঙে যাওয়ায় দিঘার সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়েছে। মানুষ না এলে ব্যবসা হবে কীভাবে? আমরা খেতে পাবো তো?

পর্যটন ব্যবসা যে চরম সংকটে পড়ে গেল, তা মানছে বন দপ্তরও। তবে, দিঘাকে তার পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দিতে ইতিমধ্যে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বন বিভাগ। জেলার বন আধিকারিক জানান, উপকূলবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে 50 থেকে 52 হাজার দুবছর বয়সি ঝাউ গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। ঝড়ে যেভাবে সবুজ ধ্বংস হয়েছে তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরো বর্ষাকাল সহ সারা বছর ধরে আমরা গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলদিয়ার নিজস্ব জমিতে গড়ে ওঠা শিল্প সংস্থাগুলিকে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। আমরা গাছ লাগিয়ে সেই ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে তা সময় সাপেক্ষ।

"চলো না দিঘার সৈকত ছেড়ে ঝাউ বনের ছায়ায় ছায়ায়", বাঙালির চেনা গান। ভাগ্যিস, পিন্টু ভট্টাচার্যের কণ্ঠে 1968 সালেই জন্মেছিল এই গান। কারণ, 2020 সালের মে মাসের 20 তারিখ রাতের পর আর এই গান লেখা সম্ভব হত না।

Last Updated : May 24, 2020, 9:24 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.