হলদিয়া, 15 মে : দিনরাত সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের তরফে প্রচার করা হচ্ছে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র ঢাল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী । লড়াইয়ের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সেই যোদ্ধাদের সম্মান জানান , কোনও অসহযোগিতা বা হেনস্থা করবেন না । পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য কর্মীদের হেনস্থা হওয়ার খবর উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এবার খোদ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেই আবাসনের অন্যান্য আবাসিকদের হেনস্থার মুখে পড়তে হল কোরোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসার কারণে । ইতিমধ্যেই হলদিয়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দিব্যজ্যোতি বসু থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় বছর পাঁচেক ধরে হলদিয়া টাউনশিপের একটি আবাসনে ভাড়ায় রয়েছেন দিব্যজ্যোতি বাবু । পাঁচতলার এই আবাসনে 8 পরিবার বসবাস করেন । 4 তলায় চিকিৎসক, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন । দেশজুড়ে লকডাউন চলায় আবাসনের তরফেও বেশকিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । বাইরের কোনও ব্যক্তি বা আত্মীয়কে বর্তমানে প্রবেশের জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । কিন্তু প্রত্যেক বাসিন্দাই তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তাগিদে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন । অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকারই মানুষদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বাড়ির বাইরে যেতে হচ্ছে চিকিৎসককে । হলদিয়াতে ইতিমধ্যেই 10 জনেরও বেশি মানুষ কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছেন । অধিকাংশ মানুষই চিকিৎসকদের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে দিব্য জ্যোতি বাবুর পেশাকে ভাল নজরে দেখেনি আবাসনের অন্যান্য বাসিন্দারা । আর তাই স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে । ইতিমধ্যেই আবাসনের লিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । এমনকী স্বাস্থ্য আধিকারিকের তিন বছরের সন্তান যাতে ছাদে গিয়ে খেলতে না পারে তারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । তিনি যাতে ওই আবাসন ছেড়ে অন্যত্র চলে যান সেজন্য তাঁকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে আবাসিকদের তরফে । যে কারণে দিব্যজ্যোতি বাবু 12 মে হলদিয়া টাউনশিপ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ জানান। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন তিনি শুধু ডাক্তার এবং কোরোনা পজ়িটিভ দের এলাকায় যাচ্ছেন বলেই তাঁর পরিবারের প্রতি আবাসনের অন্যান্য আবাসিকরা এই বিদ্বেষ মূলক আচরণ করছেন ।
এই বিষয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, " গত 5 বছর ধরে এই আবাসনে ভাড়ায় রয়েছি । প্রত্যেকেই নিজের পরিবারের মতো ভাবতাম সবার সঙ্গে আনন্দ করতাম । কোনও দিন এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি । দেশে কোরোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই চিকিৎসক হওয়ার অপরাধে আমাকে আবাসন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সবাই চাপ দিচ্ছেন । আমি সরে যেতে রাজি হচ্ছি না বলে আমার পরিবারকে আমার অবর্তমানে হেনস্থা করা হচ্ছে । এটা খুব অপমানজনক । আমি এখানেই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই।" যদিও চিকিৎসকের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই আবাসনের সভাপতি সৌম্যকান্তি প্রধান। তার বক্তব্য, চিকিৎসক যে অভিযোগ করছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা । ওঁর ব্যক্তিগত আচরণের কারণে আমরা সবাই অসন্তুষ্ট । তাই সমস্ত আবসিকরা মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আবাসনের মালিকের কাছে নালিশ করে এখান থেকে ওঁকে সরিয়ে দিতে । এর সঙ্গে কোরোনা রোগীদের কাছে চিকিৎসক হিসাবে যাওয়ার কোনও বিষয় নেই । এ বিষয়ে হলদিয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক তন্ময় মুখার্জি জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় তদন্ত শুরু হয়ছে ।