হলদিয়া, 19 মে: ধেয়ে আসছে আমফান। আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জারি করা হয়েছে সর্তকতা। সেই সতর্ক বার্তা মেনে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করল হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধে থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বন্দরের সমস্ত পণ্য ওঠা-নামার কাজ। সেইসঙ্গে বন্দরে থাকা জাহাজ ও পণ্য খালাসের ক্রেনগুলিকে মোটা লোহার চেন দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে। যাতে সাইক্লোনের প্রভাবে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অপরদিকে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ঝড়ের দাপটে কারখানাগুলির রাসায়নিক সরবরাহের পাইপলাইন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার ব্যবস্থা করেছে কারখানাগুলি।
আগামীকাল সন্ধের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে আছড়ে পড়ার কথা অতি শক্তিশালী ঘূর্ণঝড় আমফানের। ঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা ও কলকাতার । এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকছে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ের দাপট থেকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে বন্দরের 25টি জাহাজকে মোটা চেন দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে। বন্দরের বাইরে থাকা আরও 2টি জাহাজকে বন্দরের ভেতরে আনা হয়েছে। জাহাজের কাজে ব্যবহৃত বড় কার্গো ক্রেন ও অন্য যন্ত্রগুলিকেও মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে। হলদিয়া বন্দরের তরফে জানানো হয়েছে, আজ ও আগামীকাল বন্দরে জাহাজ ঢোকা ও বেরোনোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত জাহাজের মালপত্র ওঠানামাও স্থগিত রাখা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর ক্ষেত্রে বুধবার সকাল 6টা পর্যন্ত আংশিক কাজ হবে। তারপর থেকে সমস্ত কাজ বন্ধ রাখা হবে। এদিকে, হলদিয়া বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা 11টি পণ্যবাহী জাহাজ ও 3টি খনিজ তেল ও LPG বহনকারী 3টি জাহাজকে বন্দরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেগুলিকে সাইক্লোন মুক্ত এলাকা মায়ানমার অভিমুখে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলায় বন্দর কর্তৃপক্ষ তৈরি রেখেছে গাছ কাটার মেশিন, প্রস্তুত থাকছেন দমকলের কর্মীরাও।স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও তৈরি থাকছেন সাহায্যের জন্যে।
এদিকে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের 22 টি শিল্প সংস্থাকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আগেই রাসায়নিক-নিরাপত্তায় জোর দিতে বলেছে। এছাড়াও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের তরফে হলদিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাসায়নিক সরবরাহের পাইপ লাইনগুলিতে আপতকালীন তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো কাজ চলছে। অন্যদিকে হলদিয়া পৌরসভার তরফে হলদি নদীর তীরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে আনা হয়েছে ।
মঙ্গলবার হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডের আধিকারিক সোমনাথ দত্ত বলেন, সাইক্লোন কারখানার যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কারখানার বাইরে থাকা টুকরো যন্ত্রাংশগুলিকে ইতিমধ্যে কারখানার ভেতরে সরিয়ে আনা হয়েছে। রাসায়নিক কারণে যাতে বিপদ না ঘটে সে ব্যাপারে আগাম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (মেরিন) উদয়ন রায় জানান, আমফানের প্রভাব থেকে বন্দরকে রক্ষা করতে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নদীর জল যাতে বন্দরের ভেতরে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করতে না পারে সে কথা ভেবে লকগেটগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ের প্রভাব না কাটা পর্যন্ত বন্দরের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।