ETV Bharat / state

পোড়া মাছ, নোটে শাকের ডাটার বড়া, পোড়া রুটি ! মহামায়াকে এমনই ভোগ দেওয়া হয় এখানে - east medinipur pujo

পূর্ব মেদিনীপুরের কাশীজোড়া রাজবাড়ির পুজো ৷ এখানে পোড়া রুটি ও মাছ পোড়া দেওয়া হয় দুর্গাপুজোর ভোগে ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Sep 8, 2020, 8:43 AM IST

Updated : Oct 3, 2020, 10:14 AM IST

পাঁশকুড়া, 7 সেপ্টেম্বর : পুজোর ভোগে মাছ পোড়া, লাল নোটে শাকের ডাটা দিয়ে তৈরি বড়া, তেতুঁলের টক, পোড়া রুটি ! শুনেছেন কখনও ? হ্যাঁ ঠিক । এই রকমই 25 বা কখনও কখনও 50 রকমের পদ দিয়ে দেবী মহামায়ার ভোগ তৈরি হয় কাশীজোড়া রাজবাড়ির পুজোয় ৷ কিন্তু কেন ?

কথিত আছে, সেনা অধ্যক্ষ হয়ে পুরীর মন্দিরকে কালাপাহাড়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে ওড়িশার রাজার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ কাশীজোড়া পরগনার রাজত্ব পেয়েছিলেন গঙ্গানারায়ণ রায় । তবে, রাজত্ব পেলেও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় রাজপাঠ কীভাবে চালাবেন তা ভেবেই কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না গঙ্গানারায়ণ । সেই সময় তাঁর স্বপ্নে আসেন মহাময়া । আদেশ দেন তাঁর পুজো শুরু করলেই মঙ্গল হবে প্রজাদের এবং সুন্দরভাবে চলবে রাজ্যপাট । কিন্তু দুর্গাপুজো ব্যয়বহুল । পুজোর খরচ আসবে কোথা থেকে? রাজার এহেন প্রশ্নের উত্তরে দেবি নাকি জানিয়েছিলেন , ভোগে তেমন কিছু দিতে হবে না । শুধুমাত্র মাছ পোড়ো, লাল নোটে ডাটা দিয়ে ডালের টক ও পোড়া রুটি । তাতেই সন্তুষ্ট তিনি ।

সেই স্বপ্নাদেশের পর থেকে 1573 সাল থেকে কাশীজোড়া রাজ পরগনায় শুরু দেবী দুর্গার আরাধনা । 447 বছরের রাজবাড়ীর অষ্টমীর সন্ধিপুজোর ভোগে সেই রীতিতে ছেদ পড়েনি । বর্তমানে দেবীর ভোগে পঞ্চাশ ধরনের ব্যঞ্জন সাজিয়ে দেওয়া হলেও পোড়া মাছ, টক ও পোড়া রুটির ভোগ আবশ্যিক ।

ইতিহাস বলছে, পঞ্জাবের সিরহিন্দ প্রদেশের বাসিন্দা গঙ্গানারায়ণ পায়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন । পৌঁছে গিয়েছিলেন ওড়িশায় ৷ সেই সময় গোটা দেশে শাসন করছেন মুঘল সম্রাট আকবর । সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটাতে ভেঙে ফেলা হয়েছে একের পর এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, ধর্মীয়স্থান । সেই সময় কালাপাহাড়ের নেতৃত্বে পুরীর মন্দিরও ধ্বংস করে ফেলার ছক কষে মুঘলরা । তাঁদের হাত থেকে জগন্নাথ দেবের মন্দির রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত সেনাপতির খোঁজ শুরু করেন ওড়িশার রাজা । তখনই রাজার নজরে আসেন পুরীতে যাওয়া যুবক গঙ্গানারায়ণ রায় । পরে যুদ্ধে কালাপাহাড়কে প্রতিহত করে রক্ষা করেন পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির । আর তাতেই ওড়িশার রাজা রামচন্দ্র দেব খুশী হয়ে গঙ্গা নারায়নকে কাশীজোড়া রাজ পরগনার রাজত্ব ভার উপহার দেন । যা এলাকায় বর্তমানে পূর্বদিকে কোলাঘাটের রূপনারায়ন নদীর পার থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ও উত্তর দিকে দাসপুর ও দক্ষিণে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না ব্লক পর্যন্ত বিস্তৃত। দায়িত্ব পেয়ে ঘোড়ায় করে কাশীজোড়া পরগনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন গঙ্গানারায়ণ । কিন্তু কীভাবে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা ও প্রজাদের মঙ্গল করবেন তা ভেবে গাছের ছায়ায় পথেই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন তিনি । তখনই নিঃস্ব রাজাকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন তাঁর পুজো করার । তারপর থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলে আসছে রাজবাড়ীর দুর্গাপুজো ।

পূর্ব মেদিনীপুরের কাশীজোড়া রাজবাড়ির পুজো

রাজবাড়ীর বর্তমান প্রজন্মের সদস্য অমিতা রায় জানান, " বংশপরম্পরায় ভাবে আমরা এখনও দেবীর স্বপ্নাদেশের আচার মেনে ভোগ নিবেদন করে আসছি । ভোগের মাছ পোড়া, লাল নোটে ডাটা বড়া দিয়ে তেতুঁলের টক ও পোড়া রুটি অত্যন্ত সুস্বাদু। " তবে যে দুশ্চিন্তা দিয়ে শুরু হয়েছিল রাজবাড়ীতে পুজোর শুভ আরম্ভ বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই দুশ্চিন্তাই ফের কপালে ভাঁজ ফেলেছে রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্যদের। ঐতিহ্যের পুজো কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড় সামলাবেন তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে রাজবাড়ীর অন্দরে। রাজবাড়ীর বড় ছেলে প্রতাপ নারায়ন রায় জানান, "এলাকার অনেক পুজোই বর্তমানে হবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা হয়েছে কোথাও পুজো হোক বা না হোক রাজবাড়ির পুজো নিশ্চিত হবে। বংশ-পরম্পরায় চলে আসা প্রথা আমরা কোনও ভাবেই বন্ধ করতে পারি না ৷ তাই পুজো হবেই । তবে সরকারের সমস্ত নিয়ম ও জায়গা বাড়িয়ে সামাজিক দূরত্বের বিধি নিষেধ মেনে সুষ্ঠুভাবে পুজো সম্পন্ন করা টাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা নিশ্চিত সুষ্ঠুভাবেই আমরা মায়ের পুজো সম্পন্ন করতে পারব।"

পাঁশকুড়া, 7 সেপ্টেম্বর : পুজোর ভোগে মাছ পোড়া, লাল নোটে শাকের ডাটা দিয়ে তৈরি বড়া, তেতুঁলের টক, পোড়া রুটি ! শুনেছেন কখনও ? হ্যাঁ ঠিক । এই রকমই 25 বা কখনও কখনও 50 রকমের পদ দিয়ে দেবী মহামায়ার ভোগ তৈরি হয় কাশীজোড়া রাজবাড়ির পুজোয় ৷ কিন্তু কেন ?

কথিত আছে, সেনা অধ্যক্ষ হয়ে পুরীর মন্দিরকে কালাপাহাড়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে ওড়িশার রাজার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ কাশীজোড়া পরগনার রাজত্ব পেয়েছিলেন গঙ্গানারায়ণ রায় । তবে, রাজত্ব পেলেও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ায় রাজপাঠ কীভাবে চালাবেন তা ভেবেই কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না গঙ্গানারায়ণ । সেই সময় তাঁর স্বপ্নে আসেন মহাময়া । আদেশ দেন তাঁর পুজো শুরু করলেই মঙ্গল হবে প্রজাদের এবং সুন্দরভাবে চলবে রাজ্যপাট । কিন্তু দুর্গাপুজো ব্যয়বহুল । পুজোর খরচ আসবে কোথা থেকে? রাজার এহেন প্রশ্নের উত্তরে দেবি নাকি জানিয়েছিলেন , ভোগে তেমন কিছু দিতে হবে না । শুধুমাত্র মাছ পোড়ো, লাল নোটে ডাটা দিয়ে ডালের টক ও পোড়া রুটি । তাতেই সন্তুষ্ট তিনি ।

সেই স্বপ্নাদেশের পর থেকে 1573 সাল থেকে কাশীজোড়া রাজ পরগনায় শুরু দেবী দুর্গার আরাধনা । 447 বছরের রাজবাড়ীর অষ্টমীর সন্ধিপুজোর ভোগে সেই রীতিতে ছেদ পড়েনি । বর্তমানে দেবীর ভোগে পঞ্চাশ ধরনের ব্যঞ্জন সাজিয়ে দেওয়া হলেও পোড়া মাছ, টক ও পোড়া রুটির ভোগ আবশ্যিক ।

ইতিহাস বলছে, পঞ্জাবের সিরহিন্দ প্রদেশের বাসিন্দা গঙ্গানারায়ণ পায়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন । পৌঁছে গিয়েছিলেন ওড়িশায় ৷ সেই সময় গোটা দেশে শাসন করছেন মুঘল সম্রাট আকবর । সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটাতে ভেঙে ফেলা হয়েছে একের পর এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, ধর্মীয়স্থান । সেই সময় কালাপাহাড়ের নেতৃত্বে পুরীর মন্দিরও ধ্বংস করে ফেলার ছক কষে মুঘলরা । তাঁদের হাত থেকে জগন্নাথ দেবের মন্দির রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত সেনাপতির খোঁজ শুরু করেন ওড়িশার রাজা । তখনই রাজার নজরে আসেন পুরীতে যাওয়া যুবক গঙ্গানারায়ণ রায় । পরে যুদ্ধে কালাপাহাড়কে প্রতিহত করে রক্ষা করেন পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির । আর তাতেই ওড়িশার রাজা রামচন্দ্র দেব খুশী হয়ে গঙ্গা নারায়নকে কাশীজোড়া রাজ পরগনার রাজত্ব ভার উপহার দেন । যা এলাকায় বর্তমানে পূর্বদিকে কোলাঘাটের রূপনারায়ন নদীর পার থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ও উত্তর দিকে দাসপুর ও দক্ষিণে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না ব্লক পর্যন্ত বিস্তৃত। দায়িত্ব পেয়ে ঘোড়ায় করে কাশীজোড়া পরগনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন গঙ্গানারায়ণ । কিন্তু কীভাবে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা ও প্রজাদের মঙ্গল করবেন তা ভেবে গাছের ছায়ায় পথেই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন তিনি । তখনই নিঃস্ব রাজাকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন তাঁর পুজো করার । তারপর থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলে আসছে রাজবাড়ীর দুর্গাপুজো ।

পূর্ব মেদিনীপুরের কাশীজোড়া রাজবাড়ির পুজো

রাজবাড়ীর বর্তমান প্রজন্মের সদস্য অমিতা রায় জানান, " বংশপরম্পরায় ভাবে আমরা এখনও দেবীর স্বপ্নাদেশের আচার মেনে ভোগ নিবেদন করে আসছি । ভোগের মাছ পোড়া, লাল নোটে ডাটা বড়া দিয়ে তেতুঁলের টক ও পোড়া রুটি অত্যন্ত সুস্বাদু। " তবে যে দুশ্চিন্তা দিয়ে শুরু হয়েছিল রাজবাড়ীতে পুজোর শুভ আরম্ভ বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই দুশ্চিন্তাই ফের কপালে ভাঁজ ফেলেছে রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্যদের। ঐতিহ্যের পুজো কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড় সামলাবেন তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে রাজবাড়ীর অন্দরে। রাজবাড়ীর বড় ছেলে প্রতাপ নারায়ন রায় জানান, "এলাকার অনেক পুজোই বর্তমানে হবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা হয়েছে কোথাও পুজো হোক বা না হোক রাজবাড়ির পুজো নিশ্চিত হবে। বংশ-পরম্পরায় চলে আসা প্রথা আমরা কোনও ভাবেই বন্ধ করতে পারি না ৷ তাই পুজো হবেই । তবে সরকারের সমস্ত নিয়ম ও জায়গা বাড়িয়ে সামাজিক দূরত্বের বিধি নিষেধ মেনে সুষ্ঠুভাবে পুজো সম্পন্ন করা টাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা নিশ্চিত সুষ্ঠুভাবেই আমরা মায়ের পুজো সম্পন্ন করতে পারব।"

Last Updated : Oct 3, 2020, 10:14 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.