ETV Bharat / state

"পৃথিবীর সবথেকে দুখী মা আমি"

author img

By

Published : May 25, 2020, 9:18 AM IST

Updated : May 25, 2020, 10:28 AM IST

চারদিন আগে পর্যন্ত স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ওই কুঁড়েঘরে সাধের সংসার ছিল অর্চনার । কিন্তু এখন সবটাই স্মৃতি । আমফান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে অর্চনার সাধের সংসার । কেড়ে নিয়েছে দুই ছেলেকে । তাই ঘটনার চারদিন পরেও হাহাকারে বুক ফাটছে অর্চনার ।

Amphan effect in Haldia
অর্চনা সিং

হলদিয়া, 25 মে : অভাবের সংসার হওয়ায় এক থালাতেই ভাত বেড়ে দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে খেতে বসেছিলেন । সবেমাত্র খাওয়া শেষ হয়েছে । তখনই একটা প্রচণ্ড আওয়াজ । নিমেষের মধ্যে সব শেষ! তারপর থেকে কেটে গেছে চারদিন। কেমন যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই দুই সন্তানের মা । কখনও চুপ করে কী সব আকাশকুসুম চিন্তা করছেন । আবার, কখনও পড়ে থাকা একটি কুঁড়েঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কী যেন খুঁজে চলেছেন ।

অর্চনা সিং। ওই দুই সন্তানের মা । চারদিন ধরে নিজের কুঁড়েঘরের ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে । ওই কুঁড়েঘরেই চারদিন আগে পর্যন্ত স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সাধের সংসার ছিল তাঁর। কিন্তু, সেই সাধের সংসার আজ কোথায় ? গত কয়েকদিন ধরে কুঁড়েঘরের ধ্বংস্তূপে কী যেন খুঁজে চলেছেন অর্চনা। না, কোনও জরুরি নথি বা জিনিসপত্র নয়। ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে খুঁজে চলেছেন নিজের দুই সন্তানকে । আসলে ওই কুঁড়েঘরের নিচেই নিজের দুই সন্তানকে চাপা পড়তে দেখেছিলেন স্বচক্ষে । অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারেননি । তাই এখনও দুই সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় ওই ধ্বংসস্তূপ হাতড়াতে দেখা যায় তাঁকে ।

আমফান কেড়ে নিয়েছে দুই ছেলেকে, নিজেকে ''পৃথিবীর সবথেকে দুখী মা'' বলছেন অর্চনা...

আসলে যে বিকেলে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে এক থালায় ভাত খেতে বসেছিলেন অর্চনা । যে বিকেলে প্রচণ্ড আওয়াজ শুনেছিলেন । সেই বিকেলে আমফান এসেছিল তাঁদের দোরগোড়ায় । তার জেরেই কুঁড়েঘরের উপর ভেঙে পড়েছিল এক বিশাল ইউক্যালিপটাস গাছ । মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে যায় অর্চনার সাধের কুঁড়েঘর । আর তাতেই চাপা পড়ে যায় তাঁর সংসারও । চাপা পড়ে যান তাঁর স্বামী , সন্তান ও তিনি নিজে ।

স্বামী চন্দন সিং মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও ওই পরিস্থিতিতে নিজেকে কোনওরকমে শান্ত রাখতে পেরেছিলেন । নিজেকে সামলে নিয়ে কুঁড়েঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছিলেন স্ত্রী অর্চনাকে । তারপর অর্চনা নিজেকে সামলে নিয়ে স্বামীকে সঙ্গে করে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে দুই সন্তানকে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন । কিন্তু, সফল হননি। বের করতে পারেননি দুই ছেলেকে । চোখের সামনেই বড় ছেলে রঞ্জিত (18) ও ছোটো ছেলে প্রসেনজিৎ(16) -কে শেষ হতে দেখেন অর্চনা ও চন্দন । তারপর থেকেই বাকরুদ্ধ চন্দন । আর অর্চনা ? এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিজের দুই ছেলেকে খুঁজে চলেছেন ।

Amphan effect in Haldia
এই ধ্বংসস্তূপই আগে অর্চনার কুড়ে ঘর ছিল

হলদিয়া পৌরসভার 1 নম্বর ওয়ার্ডের মহম্মদপুর এলাকায় অর্চনার ওই ছোট্ট কুঁড়েঘর । আমফান থেকে বাঁচাতে দুই ছেলেকে পাড়ারই একটি ক্লাবঘরে সকালেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । স্বামী চন্দনকেও পাঠাতে চেয়েছিলেন । কিন্তু অর্চনাকে ছেড়ে যেতে চাননি চন্দন । তাই স্বামীর সঙ্গে ওই কুঁড়েঘরেই থেকে গিয়েছিলেন তিনি । এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল । কিন্তু, বিকেলে খিদের জ্বালায় ফিরে আসে সিং দম্পতির দুই ছেলে রঞ্জিত ও প্রসেনজিৎ । আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় । দুই ছেলেকে খিদে পেটে দেখে ফেরত পাঠাতে পারেননি অর্চনা । এক থালায় ভাত খেতে বসে চারজন । আর তখনই প্রচণ্ড একটা আওয়াজ । ঘরের উপর ভেঙে পড়ে ইউক্যালিপটাস গাছ । ব্যাস, নিমেষের মধ্যে শেষ সব কিছু ।

ঘর-বাড়ি, দুই সন্তানকে হারিয়ে তাই এখন দিশেহারা অর্চনা ও চন্দন দু'জনেই । বর্তমানে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন । কিন্তু ঘটনার চারদিন পরেও যেন নিজেকে স্থির রাখতে পারছেন না অর্চনা । বার বার জানাচ্ছেন, কীভাবে সংসারের অভাবে দূর করতে এই অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে মোটরভ্যানের স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছিল রঞ্জিত ও প্রসেনজিৎ । তাদের পরিশ্রমের টাকাতেই দু-বেলা ভাত জুটত সিং পরিবারের সকলের । এখন একদিকে অর্চনার দুই ছেলেকে হারানোর শোক । অন্যদিকে ভবিষ্যতে স্বামীকে নিয়ে কীভাবে জীবনযাপন করবেন তার চিন্তা । আর এই সবকিছুতে বিপর্যস্ত অর্চনা । তাঁর মুখে শুধু এখন একটাই কথা , "পৃথিবীর সবথেকে দুখী মা আমি । "

সিং দম্পতি সরকারের তরফে আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন ঠিকই । কিন্তু তাঁদের বেঁচে থাকার রসদ দুই সন্তানকেই তো হারিয়ে ফেলেছেন । তাই এই আর্থিক সাহায্য পেয়েও ভীষণ অসহায় বোধ করছেন অর্চনা ।

হলদিয়া, 25 মে : অভাবের সংসার হওয়ায় এক থালাতেই ভাত বেড়ে দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে খেতে বসেছিলেন । সবেমাত্র খাওয়া শেষ হয়েছে । তখনই একটা প্রচণ্ড আওয়াজ । নিমেষের মধ্যে সব শেষ! তারপর থেকে কেটে গেছে চারদিন। কেমন যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই দুই সন্তানের মা । কখনও চুপ করে কী সব আকাশকুসুম চিন্তা করছেন । আবার, কখনও পড়ে থাকা একটি কুঁড়েঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কী যেন খুঁজে চলেছেন ।

অর্চনা সিং। ওই দুই সন্তানের মা । চারদিন ধরে নিজের কুঁড়েঘরের ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে । ওই কুঁড়েঘরেই চারদিন আগে পর্যন্ত স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সাধের সংসার ছিল তাঁর। কিন্তু, সেই সাধের সংসার আজ কোথায় ? গত কয়েকদিন ধরে কুঁড়েঘরের ধ্বংস্তূপে কী যেন খুঁজে চলেছেন অর্চনা। না, কোনও জরুরি নথি বা জিনিসপত্র নয়। ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে খুঁজে চলেছেন নিজের দুই সন্তানকে । আসলে ওই কুঁড়েঘরের নিচেই নিজের দুই সন্তানকে চাপা পড়তে দেখেছিলেন স্বচক্ষে । অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারেননি । তাই এখনও দুই সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশায় ওই ধ্বংসস্তূপ হাতড়াতে দেখা যায় তাঁকে ।

আমফান কেড়ে নিয়েছে দুই ছেলেকে, নিজেকে ''পৃথিবীর সবথেকে দুখী মা'' বলছেন অর্চনা...

আসলে যে বিকেলে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে এক থালায় ভাত খেতে বসেছিলেন অর্চনা । যে বিকেলে প্রচণ্ড আওয়াজ শুনেছিলেন । সেই বিকেলে আমফান এসেছিল তাঁদের দোরগোড়ায় । তার জেরেই কুঁড়েঘরের উপর ভেঙে পড়েছিল এক বিশাল ইউক্যালিপটাস গাছ । মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে যায় অর্চনার সাধের কুঁড়েঘর । আর তাতেই চাপা পড়ে যায় তাঁর সংসারও । চাপা পড়ে যান তাঁর স্বামী , সন্তান ও তিনি নিজে ।

স্বামী চন্দন সিং মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও ওই পরিস্থিতিতে নিজেকে কোনওরকমে শান্ত রাখতে পেরেছিলেন । নিজেকে সামলে নিয়ে কুঁড়েঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছিলেন স্ত্রী অর্চনাকে । তারপর অর্চনা নিজেকে সামলে নিয়ে স্বামীকে সঙ্গে করে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে দুই সন্তানকে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন । কিন্তু, সফল হননি। বের করতে পারেননি দুই ছেলেকে । চোখের সামনেই বড় ছেলে রঞ্জিত (18) ও ছোটো ছেলে প্রসেনজিৎ(16) -কে শেষ হতে দেখেন অর্চনা ও চন্দন । তারপর থেকেই বাকরুদ্ধ চন্দন । আর অর্চনা ? এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিজের দুই ছেলেকে খুঁজে চলেছেন ।

Amphan effect in Haldia
এই ধ্বংসস্তূপই আগে অর্চনার কুড়ে ঘর ছিল

হলদিয়া পৌরসভার 1 নম্বর ওয়ার্ডের মহম্মদপুর এলাকায় অর্চনার ওই ছোট্ট কুঁড়েঘর । আমফান থেকে বাঁচাতে দুই ছেলেকে পাড়ারই একটি ক্লাবঘরে সকালেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । স্বামী চন্দনকেও পাঠাতে চেয়েছিলেন । কিন্তু অর্চনাকে ছেড়ে যেতে চাননি চন্দন । তাই স্বামীর সঙ্গে ওই কুঁড়েঘরেই থেকে গিয়েছিলেন তিনি । এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল । কিন্তু, বিকেলে খিদের জ্বালায় ফিরে আসে সিং দম্পতির দুই ছেলে রঞ্জিত ও প্রসেনজিৎ । আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় । দুই ছেলেকে খিদে পেটে দেখে ফেরত পাঠাতে পারেননি অর্চনা । এক থালায় ভাত খেতে বসে চারজন । আর তখনই প্রচণ্ড একটা আওয়াজ । ঘরের উপর ভেঙে পড়ে ইউক্যালিপটাস গাছ । ব্যাস, নিমেষের মধ্যে শেষ সব কিছু ।

ঘর-বাড়ি, দুই সন্তানকে হারিয়ে তাই এখন দিশেহারা অর্চনা ও চন্দন দু'জনেই । বর্তমানে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন । কিন্তু ঘটনার চারদিন পরেও যেন নিজেকে স্থির রাখতে পারছেন না অর্চনা । বার বার জানাচ্ছেন, কীভাবে সংসারের অভাবে দূর করতে এই অল্প বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে মোটরভ্যানের স্টিয়ারিং হাতে তুলে নিয়েছিল রঞ্জিত ও প্রসেনজিৎ । তাদের পরিশ্রমের টাকাতেই দু-বেলা ভাত জুটত সিং পরিবারের সকলের । এখন একদিকে অর্চনার দুই ছেলেকে হারানোর শোক । অন্যদিকে ভবিষ্যতে স্বামীকে নিয়ে কীভাবে জীবনযাপন করবেন তার চিন্তা । আর এই সবকিছুতে বিপর্যস্ত অর্চনা । তাঁর মুখে শুধু এখন একটাই কথা , "পৃথিবীর সবথেকে দুখী মা আমি । "

সিং দম্পতি সরকারের তরফে আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন ঠিকই । কিন্তু তাঁদের বেঁচে থাকার রসদ দুই সন্তানকেই তো হারিয়ে ফেলেছেন । তাই এই আর্থিক সাহায্য পেয়েও ভীষণ অসহায় বোধ করছেন অর্চনা ।

Last Updated : May 25, 2020, 10:28 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.