নন্দীগ্রাম, 29 মার্চ : সব নজর এখন নন্দীগ্রামে ৷ বাকি আর তিন দিন ৷ বৃহস্পতিবার ইভিএম বন্দি হবে নন্দীগ্রামের মানুষের রায় ৷ বাড়ছে স্নায়ুর চাপ ৷ আর তাই রবিবার থেকেই নিজের কেন্দ্রে পৌঁছে যান নেত্রী ৷ ঘর আগে থেকেই ভাড়া নেওয়া রয়েছে ৷ নন্দীগ্রামে ভোট পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন ৷
শুধু ভোট পর্যন্তই নয় ৷ ভোটের পরেও নিজের 'সাধের' নন্দীগ্রামে থেকে যেতে চাইছেন মমতা ৷ বললেন, "ভোট করে এখানেই থেকে যাব । একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়েছি । নন্দীগ্রামের মানুষ ভাড়া দিয়েছেন ।" নিজেকে নন্দীগ্রামের ঘরের মেয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা আজ যেন বারবার উঠে এল মমতার কথায় ৷
10 মার্চ নন্দীগ্রামে প্রচারে এসে পায়ে চোট পেয়েছিলেন ৷ তারপর ফের নন্দীগ্রামে মমতা ৷ নন্দীগ্রামে পা রেখেই সোজা রেয়াপাড়ায় ৷ এখানেই বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন ৷
চোট সারিয়ে নন্দীগ্রামে ফিরেই একের পর এক বোমা ফাটালেন মমতা ৷ আর এবার একেবারে শান্তিকুঞ্জে ফাটল ধরানোর চেষ্টা ৷ বললেন, "কোনও একজনের বাবাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করলাম । বাবার শপথে ছেলে গেল না । বলল, বুড়ো ভামকে মন্ত্রী করা হয়েছে ।"
আরও পড়ুন : "মমতার মুসলিম তোষণেই বঙ্গে এসেছে বিজেপি", নন্দীগ্রামে বিস্ফোরক আব্বাস
মমতা নিজের স্বভাবসিদ্ধ আগ্রাসী ঝাঁজে বলে যাচ্ছিলেন কথাগুলি ৷ সেই সময় একবার শিশির অধিকারীর নামও বেরিয়ে যায় তাঁর মুখ থেকে ৷ তবে সঙ্গে সঙ্গে সেই ভুল শুধরে নেন ৷ নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করে "কোনও একজনের বাবা" বলে খেলে গেলেন ৷ তবে কারও বুঝতে বাকি থাকল না যে তিনি কাদের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মমতা-শুভেন্দু দু'জনের কাছেই নন্দীগ্রামের মাটি রাজনৈতিকভাবে সমান আপন ৷ একজন আন্দোলনের নেত্রী, আর একজন আন্দোলনের সেনাপতি ৷ সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হতে চলেছে এবার নন্দীগ্রামে ৷ তার আগে কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ ৷
প্রথম দফায় ভোটের দিন বিজেপি একটি অডিয়ো ক্লিপ ফাঁস করেছিল ৷ যাঁতে শোনা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে জয়ের স্বাদ পেতে হাত পেতেছেন প্রলয় পাল নামে তৃণমূলত্যাগী এক বিজেপি নেতার কাছে ৷ হয়ত তখন থেকেই রাগে ফুঁসছিলেন নেত্রী ৷ আর আজ নন্দীগ্রামে ঢুকেই যেন সেই জমে থাকা ঝাঁজ বেরিয়ে এল মমতার কথায় ৷
অধিকারী পরিবারে ভাঙন ধরানোর চেষ্টার পাশাপাশি 14 মার্চের ঘটনাতেও শুভেন্দুদের উপর আক্রমণ করলেন ৷ নাম না করে নন্দীগ্রামের মানুষকে জানিয়ে দিলেন, সে-দিনের গণহত্যায় পুলিশ ঢোকানোর দায় শুভেন্দু-শিশিরদের ৷ 'বাপ-ব্যাটা'-র অনুমতিতেই নাকি সেদিন পুলিশ নন্দীগ্রামে ঢুকেছিল ৷
আরও পড়ুন : সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করতে বিজেপির থেকে টাকা নিয়েছে মোর্চা: মমতা
হতেই পারে মমতা সত্যি কথা বলছেন ৷ কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, এতটা পড়ে কেন ? নন্দীগ্রাম যে মমতার কাছে যথেষ্টই আবেগের জায়গা, এ-কথা ঘোর মমতা বিরোধীও স্বীকার করতে দ্বিতীয়বার ভাববেন না ৷ তবে কেন এতদিন ধরে নন্দীগ্রামের গণহত্যা নিয়ে এতবড় একটা সত্যি চেপে রেখেছিলেন নেত্রী ? সেটা কি শুধুই শুভেন্দুদের বাঁচানোর জন্য ? আর এখন শুভেন্দু অন্য দলে বলেই কি মুখ খুলছেন ? আর যদি তাই হয়ে থাকে, তবে কি নিজের ভালবাসার নন্দীগ্রাম, যে নন্দীগ্রাম তাঁর জান কবুল লড়াইয়ের সাক্ষী, সেই মাটির সঙ্গে কি ন্যায় করছেন মমতা ?
যদি এমনটাই হয়ে থাকে তাহলে যে নন্দীগ্রামে তিনি নিজেকে ঘরের মেয়ে বলে প্রমাণ করতে চাইছেন, সেই নন্দীগ্রাম কি তাঁকে আপন করে নেবে ? প্রশ্ন অনেক ৷ উত্তর মিলবে 2 মে ৷