তমলুক, 24 জুন: লকডাউনে দীর্ঘ তিন মাস ধরে ভক্তদের জন্য বন্ধ ছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম সতীপীঠ তমলুকের বর্গভীমা মন্দির । আনলক ওয়ানে সরকারি বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হতেই 13 জুন ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দির । সংক্রমণ রুখতে স্যানিটাইজ়ার মেশিন থেকে শুরু করে সামাজিক দূরত্বের নিয়মবিধি মেনে একাধিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে মন্দির খুললেও, দেখা নেই ভক্তদের । আর তাতেই চরম সংকটে পড়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে পুরোহিত ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ।
তমলুকের বর্গভীমা মন্দির 51টি সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম । পুরাণে বর্ণিত আছে, বিষ্ণু দেবের সুদর্শন চক্রে খণ্ডিত হয়েছিল সতীর দেহাংশ। আর সেই দেহাংশেরই বাম পায়ের গোঁড়ালি পড়েছিল অধুনা তমলুক তথা অতীতের তাম্রলিপ্ত শহরে । জেলা জুড়ে অনেক প্রাচীন মন্দির থাকলেও সেগুলি আজ কালের নিয়মে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে । কিন্তু যুগ যুগ ধরে দেবী বর্গভীমা মায়ের মন্দিরে ভক্ত সমাদরের অভাব হয়নি । পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আসা ভক্তদের সমাগমে প্রতিদিন গমগম করতে মন্দির চত্বর । কিন্তু মন্দিরের সেই পরিবেশ কেড়ে নিয়েছে কোরোনা ভাইরাস ৷ মাস তিনেক পর মন্দিরের দরজা খুললেও ভাইরাসের ভীতি ভক্তদের দূরেই রেখেছে ৷
![বর্গভীমা মন্দির](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/05:16:52:1592826412_wbemid1bargabhimatemplelockdownprob7204300_22062020151132_2206f_01364_1055.jpg)
মন্দিরে আসা লাখো ভক্তের দানের প্রণামী থেকে মন্দিরের সেবাইতদের সংসার চলে । শুধু তাই নয়, মন্দিরের উপর নির্ভর করেই সংসার চলে প্রায় 300টি মিষ্টি, শাড়ি, ফুল ও পুজোর উপকরণ সামগ্রীর ব্যবসায়ীদের । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । দেশে কোরোনা সংক্রমণ শুরু হতেই সরকারের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত ধর্মীয় পীঠস্থান । সেই সঙ্গে ভক্তদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বর্গভীমা মায়ের মন্দিরের দরজাও । পরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই ফের লকডাউন শিথিল করে কেন্দ্রীয় সরকার । জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে 13 জুন খুলে যায় মায়ের মন্দির । কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে মন্দির চত্বরে দেখা যাচ্ছে না ভক্তদের । আগে যেখানে রোজ ভক্তদের সমাগমে তিল ধারণের জায়গা থাকত না, সেই মন্দির এখন খাঁ খাঁ করছে । মেরেকেটে রোজ জনা পঞ্চাশের বেশি ভক্তের দেখা মেলে না । এতে ভরছে না প্রণামী বাক্সও । লকডাউনের তিন মাস মন্দির কমিটির সঞ্চিত অর্থ দিয়ে পুজোপাঠ চালানো হয়েছে ৷ এখন সেই তহবিলেও টান পড়েছে । ভবিষ্যতে অর্থ সংকটে কীভাবে পুজোপাঠ চলবে তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মন্দির পরিচালন কমিটির সদস্যদের কপালে । অর্থ সংকটের কারণে ইতিমধ্যেই 14 জন ভোগ রান্নার পূজারির সংখ্যা কমিয়ে 7 জন করে দেওয়া হয়েছে । পুজোর কাজে নিয়োজিত সেবাইতদের দায়িত্বভারও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে । পুজোর জাঁকজমকও অনেক কমেছে । এদিকে মন্দির সংলগ্ন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন বেড়ে যাওয়া মিষ্টি ফেলে দিতে দিতে ক্লান্ত । কর্মীদের নিয়ে ভবিষ্যতে ব্যবসা কীভাবে চলবে সেই চিন্তাই ঘুরছে তাঁদের মনে । মায়ের কাছে এখন তাঁদের একটাই প্রার্থনা, খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হোক পরিস্থিতি ৷
![তমলুকের বর্গভীমা মন্দির](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/05:16:53:1592826413_wbemid1bargabhimatemplelockdownprob7204300_22062020151136_2206f_01364_304.jpg)
![খাঁ খাঁ করছে মন্দির চত্বর](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/05:16:53:1592826413_wbemid1bargabhimatemplelockdownprob7204300_22062020151136_2206f_01364_6.jpg)