খেজুরি (পূর্ব মেদিনীপুর), 4 জুন : গত বছর আমফানে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন । এবার যশের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সরাসরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা পান, সেই ব্যবস্থা করতে বারে বারে এলাকা পরিদর্শন করেছেন মন্ত্রী-আমলা থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা । গতকাল পূর্ব মেদিনীপুরে যশে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শনে দু'দিনের সফরে আসেন খোদ রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷
প্রথমে তিনি জেলার খেজুরির কামারদা গ্রামপঞ্চায়েতে একটি বৈঠক করেন পঞ্চায়েত ও ব্লক নেতৃত্বদের সঙ্গে । এরপর খেজুরির কন্ঠীবাড়ির যে সব এলাকায় কালভার্ট ভেঙে জল ঢুকেছিল, সেই এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন কৃষিমন্ত্রী । ওই অঞ্চলের চাষের ক্ষেতের পরিস্থিতি দেখেন । পরে কাঁথিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন ।
তিনি বলেন, "সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ আজ আমি বীরকান্দা, কসবা, টিকাসি, মুকুটশিলার মতো বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছিলাম ৷ শেষ যতটুকু দেখা যাচ্ছে সব জলের নীচে ৷ এর পরে আমাদের প্রধান শস্য খারিফে আমরা কতটা ধান পুঁততে পারব, যেগুলো স্য়ালাইন ওয়াটারের নীচে আছে এখনও, যদি এর মধ্যে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে এই নোনা জল ধুয়ে বেরিয়ে যায়, তাহলে ভালো ৷ এর মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছ'টা ভ্যারাইটি নিয়ে একটা পরীক্ষা চালাবার কথা ভাবছেন ৷" যাঁদের গরু, ছাগল মারা গিয়েছে, বাড়ি ভেঙে গিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় থাকছেন তাঁরাও ৷ প্রত্যেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ত্রাণের সুবিধা পাবেন, জানালেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : আরামবাগে ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন বর্ধমান রেঞ্জের স্পেশাল আইজি
চাষিদের বিমা তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "চাষিদের বিমার প্রিমিয়াম সরকার নিজে দেয় ৷ একটা স্যাটেলাইট ভিউ নিয়ে দেখা পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের চোখে দেখা অবস্থাটা মিলিয়ে নেওয়া হয় ৷ যাতে আমরাও কাউকে ঠকাব না, কেউ আমাদের ঠকাবে না ৷" এমনকি চাষিদের ত্রাণ সাহায্যের ব্যাপারে জানাতে সরকারের তরফে একটি লিফলেট বিলি করা হচ্ছে, যাতে কেউ বাদ না যান ৷ চাষিরা প্রতিটি ব্লকের "দুয়ারে ত্রাণ" ক্যাম্পে তাঁদের আবেদনপত্র জমা দেবেন ৷ তারপর সাত দিন সময় লাগবে আবেদনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ৷ এরপরই তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে ৷ আর যাঁদের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই, তাঁদের সরকারের তরফে সাহায্য করা হবে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ৷ এই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আসবেই বলে দাবি কৃষিমন্ত্রীর ৷ এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ থেকে আধিকারিক স্তরের প্রত্যেককে তিনি অনুরোধ করেন, চারপাশের যে কোনও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে এই সুবিধের বিষয়ে সচেতন করতে ৷
কাঁথিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে দিঘার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন শোভনদেব । আজ রামনগর বিধানসভার এক নম্বর ব্লক ও দুই নম্বর ব্লকে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ সেখানে আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করতে পারেন কৃষিমন্ত্রী ।
প্রতিটি ব্লকে এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাদের লিফলেট দেওয়া হচ্ছে কি না, তাদের ক্ষতির তালিকা তৈরি হচ্ছে কি না, এই সবকিছু খতিয়ে দেখছেন মন্ত্রী-সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা ।