বর্ধমান, 6 নভেম্বর: একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিজেপির কোনও সংগঠন নেই । তারা কোনও সভায় লোক ভরানোর জন্য ভিন জেলা থেকে গাড়ি করে লোক আনে । অথচ বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে সেই বিজেপির বিরুদ্ধেই গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচার করতে বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক খোকন দাস । বিজেপির দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের বার্তা থেকেই পরিষ্কার, তারা যতই বলুক বিজেপির সংগঠন নেই ৷ তারা কিন্তু বিজেপিকে ভয় পেয়েছে ।
বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের খোকন দাস বলেন, ‘‘বিরোধীরা বারবার করেই বলছে যে 100 দিনের টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, আবার বলছে আমাদের ঘরের টাকা নিয়েও নাকি দুর্নীতি হয়েছে । অথচ একটা দুর্নীতিও প্রমাণ করতে পারছে না । আমাদের নেতাগুলোকে জেলে ভরে দিচ্ছে । এটাকে তারা ইস্যু করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে । কিন্তু আমরা জানি বাংলার মানুষ এত সহজে বিভ্রান্ত হবে না । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাদের আস্থা আছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামবাংলায় প্রচার করে বলতে হবে ৷ বিরোধীরা কী খেলা খেলছে তার বিরুদ্ধে আমাদের আলাদা করে আন্দোলন করতে হবে । দলকে আমাদের মজবুত করতে হবে । সামনেই লোকসভা নির্বাচন । সেই নির্বাচনের আগে আমাদের প্রতিটা কর্মীকে প্রতিটা মানুষের কাছে গিয়ে বোঝাতে হবে । সেই জন্য কালীপুজোর সময় থেকে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে ।’’
ওই তৃণমূল বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘দলকে আমাদের মজবুত করতে হবে । বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় সভা করছে । তাদের সঙ্গে কোনও মানুষ নেই । বাইরে জেলা থেকে লোক এনে তাদের সভা করতে হচ্ছে । তাদের কোনও ইস্যু নেই, বাংলার মানুষের কাছে । আসলে তারা জানে যে ক্ষমতায় আসতে পারবে না । তাই তারা কোনও প্রতিশ্রুতি দেয় না । বাংলায় যে কাজ হচ্ছে, সব কাজ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।’’
আরও পড়ুন: জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারির পরেই মন্তেশ্বরের আইটিআই কলেজ নিয়ে শুরু বিতর্ক
এখানেই না থেমে খোকন দাস আরও বলেন, ‘‘তাই আমাদের রাজ্য সরকারের যেসব প্রকল্পগুলো আছে, সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে । গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে যে বিরোধীরা শুধু মিথ্যে কথা বলে আমাদের রাজ্য সরকারকে অপদস্থ করতে সিবিআই-ইডি দিয়ে হয়রানি করছে । এই সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মেলায় । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু কোনোদিন দুর্নীতির সঙ্গে হাত মেলাবেন না ৷’’
তৃণমূল কংগ্রেসের সূত্রে খবর, যেভাবে ইডি-সিবিআই তদন্তে নেমে একের পর এক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করছে । তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতারাও স্বস্তিতে নেই । ফলে নিচুতলার কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে । সেই সঙ্গে দলীয় কোন্দল তো আছেই । ফলে সব মিলেমিশে লোকসভা ভোটের আগে তাদের নতুন করে চাঙ্গা করতে দলের নেতা-মন্ত্রীরা উঠেপড়ে লেগেছে । সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ হিসেবে তারা কালীপুজোর বিভিন্ন মঞ্চকে ব্যবহার করতে চাইছে । আর দলের পক্ষ থেকে কালীপুজোর পরে গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
এই নিয়ে পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, ‘‘তৃণমূল যে বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে, সেটা তাদের কথাতেই পরিষ্কার । এই ধরনের রাজনৈতিক দলগুলো খুব ভালো করে জানে বিজেপির সংগঠন কত শক্তিশালী । তাই তারা বিভিন্ন দলকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে নেমেছে । কিন্তু তারা যত যাই করুক না কেন বিগত লোকসভার ভোটের থেকে এবারে ফলাফল অনেক ভালো হবে । সেই ভয়টাই তৃণমূল কংগ্রেস পাচ্ছে ।’’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী হওয়ার পর গ্রামেও সম্পত্তি বেড়েছে জ্যোতিপ্রিয়র, অভিযোগ বিরোধীদের