বর্ধমান, 25 মে: সন্তান ধারণের পরিকল্পনার সময়েই থাইরয়েডকে গুরুত্ব দিতে হবে । শুধু তাই নয়, থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা মহিলাদের রুটিন পরীক্ষায় আনা উচিত । বিশ্ব থাইরয়েড দিবসে এই বার্তা দিচ্ছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডা. তাপস ঘোষ ।
মহিলাদের উপরই কেন বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ?
চিকিৎসকদের মতে, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে একজন পুরুষের তুলনায় একজন মহিলা থাইরয়েডের সমস্যায় বেশি ভোগেন । পরিস্থিতি এমনই যে, সমীক্ষা করলে দেখা যাবে প্রতি দশজনের মধ্যে একজন থাইরয়েডে আক্রান্ত হচ্ছেন । তবে বেশিরভাগ মহিলাই জানেন না, তাঁরা থাইরয়েডজনিত সমস্যায় ভুগছেন । বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময় থেকে 30 বছর বয়স পর্যন্ত থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । শুধু তাই নয়, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নবজাতকদের থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে । নবজাতকের পাশাপাশি বাড়ন্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে এই সমস্যা । যার ফলে শিশুদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না তা কীভাবে বোঝা যাবে ?
চিকিৎসকদের মতে, থাইরয়েড হলে হঠাৎ করে মোটা হয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা, ঝিমুনি দিয়ে সবসময় একটা ঘুমঘুম ভাব, শিশুদের ক্ষেত্রে খুব মোটা হয়ে যাওয়া, কিংবা খুব রোগা হয়ে যাওয়া, মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা, শরীরের ক্ষয় সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, চোখের সমস্যা-সহ একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে । এছাড়া বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণের মধ্যে থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা রয়েছে ।
থাইরয়েড কত রকমের ?
চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত দুই ধরনের থাইরয়েড হতে পারে । হাইপারথাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম । হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে দেখা যায়, থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় । এর ফলে গরম সহ্য করতে না পারা, বুক ধড়ফড় করা, ঋতুস্রাবের সমস্যা, ওজন কমে যাওয়া-সহ একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে ।
অন্যদিকে, হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে রক্তের মধ্যে থাইরয়েড থেকে নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ কমে যায় । এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে বেশি ঠান্ডা লাগা, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, চুল উঠে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব-সহ একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে ৷
বিশ্ব থাইরয়েড দিবসের প্রাক্কালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. তাপস ঘোষকে এই রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "কোনও একটা দিবসেই যে আমরা শুধু সচেতন হব তা নয় । তবে হাইপোথাইরয়েডিজমের সংখ্যাটাই বেশি । এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মহিলারাই হাইপোথাইরয়েডিজমে বেশি আক্রান্ত হন । মূলত বয়ঃসন্ধির সময়ে এবং গর্ভাবস্থার সময় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে । যে কোনও পরিবারে যদি বয়ঃসন্ধির শিশু থাকে, আর তাদের মধ্যে যদি মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তার চনমনে ভাব কমে যেতে থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।"
তাঁর মতে, শুধু মহিলাই নয়, পুরুষ কিংবা শিশুদের ক্ষেত্রে যদি অত্যাধিক ঘুম ঘুম ভাব, কাজে এনার্জি কমে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়, অন্যান্য রক্ত পরীক্ষার সঙ্গে থাইরয়েড টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত । থাইরয়েড হরমোন কম ও বেশি থাকার কারণে পরোক্ষভাবে বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে । তাই যাঁরা সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের থাইরয়েড পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । এগুলিকে রুটিন পরীক্ষার মধ্যে আনা হয়েছে । ডা. ঘোষ জানিয়েছেন, জাঙ্ক ফুডের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, এগুলি শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় । আর ওজন বাড়লে থাইরয়েড যদি অল্প মাত্রায় থাকে, তাহলে সেটা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে ।
তাঁর বার্তা, "বিশ্ব থাইরয়েড দিবসে আমরা আরও সচেতন হব, নিজের শরীরকে নিজেরাই সুস্থ রাখার রাখার চেষ্টা করব ।" থাইরয়েডের সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত হেল্থ চেক আপ করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা ৷
আরও পড়ুন: এই লক্ষণগুলি দেখা দিচ্ছে ? দেহে থাইরয়েড বাসা বাঁধেনি তো