ETV Bharat / state

এই বাড়িতে লুকিয়েছিলেন ভগৎ সিং, অযত্নের ফাটলে আজ জীর্ণ - স্বাধীনতা দিবস 2020

স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্তের কথা মনে রেখেছে কজন ? আরও অনেক বিপ্লবীর মতো ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গিয়েছেন তিনি ৷

the birthplace of freedom fighter Batukeshwar Dutt
বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে
author img

By

Published : Aug 15, 2020, 12:12 AM IST

Updated : Aug 15, 2020, 2:15 PM IST

পুরানো জরাজীর্ণ একটি পাকা বাড়ি ৷ পাঁচিল ঘেরা বাড়িটির কাঠের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে বেশ কয়েকটি ঘর ৷ বাড়ির ঘরগুলো আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের মতো ৷ কিন্তু, একটি ঘরে ঢুকলে চমকে উঠবেন আপনি ৷ ঘরের ভেতর রয়েছে একটি বড় সুড়ঙ্গ ৷ এই বাড়ির ঠিক পাশেই রয়েছে একটি মাটির দোতালা বাড়ি ৷ টিনের চালা ও কাঠের পাল্লা রয়েছে বাড়িটিতে ৷

ঠিকানা বর্ধমানের ওয়াড়ি গ্রাম ৷ বর্ধমান শহরের বাঁকুড়া মোড় থেকে খণ্ডঘোষের দিকে 10 কিলোমিটার হেঁটে গেলেই পড়বে এই গ্রাম ৷ গ্রামে রয়েছে একটি স্কুল ৷ স্কুলের পাশ দিয়ে তিন কিলোমিটার গেলেই দেখতে পাবেন বাড়ি দুটো ৷ বাড়ির দুটোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস ৷ তাই আজও বাড়ি দুটোকে আগলে রাখেন গ্রামবাসীরা ৷ মাটির দোতালা বাড়িটি বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর ৷ পাশের জরাজীর্ণ পাকা বাড়িটি নগেন্দ্রনাথ ঘোষের ৷ এই বাড়ির সুড়ঙ্গেই আত্মগোপন করেছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং ৷

ighter Batukeshwar Dutt
এই বাড়িতেই জন্ম বটুকেশ্বর দত্তর

এই বাড়ি দুটোর ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ৷ 1929 সালের 8 এপ্রিল ৷ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তখন চরম ব্যস্ততা ৷ ট্রেড ডিসপিউট বিল ও পাবলিক সেফটি বিল নিয়ে সেখানে ভোটাভুটি হবে ৷ দমনমূলক এই বিল পাশ করাতে তৎপর ব্রিটিশরা ৷ পার্লামেন্টের গ্যালারিতে সারি সারি দর্শক ৷ তাদের মাঝেই বসে দুই যুবক ৷ তাঁরাও আর সবার মতো মন দিয়ে দেখছেন পার্লামেন্টের কাজ ৷ ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে যাবেন স্পিকার বিঠলভাই প্যাটেল ৷ তখনই পড়ল বোমা ৷ কেঁপে উঠল পার্লামেন্ট ৷ শোনা গেল ইনক্লাব জিন্দাবাদ স্লোগান ৷ ফাঁকা জায়গায় বোমা ফেলায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি ঠিকই ৷ কিন্তু, এই ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের ভিত ৷ ভগৎ সিং ও বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের এই কর্মকাণ্ড সেদিন দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ৷ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন দু'জনেই ৷ 1938 সালে জেল থেকে মুক্তি পান বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ৷

ighter Batukeshwar Dutt
এই বাড়িতে আত্মগোপন করেন ভগৎ সিং

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই হামলার ছক কষা হয়েছিল বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওয়াড়ি গ্রামে ৷ মাটির দোতালা বাড়িটেতে ৷ 18 নভেম্বর 1910 সালে এই গ্রামে জন্মেছিলেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ৷ এখানেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি ৷ এই বাড়িটিই এক সময় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আতুঁড়ঘর ৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একেরপর এক ছক কষা হয়েছিল এই বাড়িতে বসেই ৷ বাড়িটির চার দেওয়াল সাক্ষী রয়েছে সেই কাহিনির ৷

বটকেশ্বর দত্তের বাড়ির বর্তমান অবস্থা, দেখুন ভিডিয়ো

সাইমন কমিশনের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছিলেন লালা লাজপত রায় ৷ আন্দোলনরত লালা লাজপত রায়ের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে ৷ যার নির্দেশ দিয়েছিল তৎকালীল SP জেমস স্কট ৷ ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ৷ জেমস স্কটকে হত্যার ছক কষেন ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্তরা ৷ কিন্তু, জেমস স্কটের জায়গায় পুলিস অফিসার স্যান্ডারসনকে হত্যা করেন ভগৎ সিং ৷ এরপরই হন্যে হয়ে পুলিশ খুঁজতে থাকে তাঁকে ৷ তখন, বটুকেশ্বর দত্তর পরামর্শ মতো ওয়াড়ি গ্রামে আত্মগোপন করেন ভগৎ সিং ৷ বাড়িটি ছিল নগেন্দ্রনাথ ঘোষের ৷ এই বাড়ির সুড়ঙ্গে প্রায় 15 দিন আত্মগোপন করে থাকেন তাঁরা ৷

ইতিহাসজড়িত বাড়ি দুটো সযত্নে আগলে রেখেছেন গ্রামবাসীরা ৷ গ্রামবাসী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শম্ভুনাথ দাস, প্রত্যেকের গলায় একই সুর ৷ সংরক্ষণ করা হোক বাড়ি দুটোকে ৷ অবহেলায় যেন নষ্ট না হয়ে যায় বাড়ি দুটো, এমনই দাবি তাঁদের ৷ যদিও ইতিমধ্যেই সরকারের উদ্যোগে বিপ্লবীর জন্ম ভিটেকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে ৷ রাজ্য সরকার পর্যটনের উন্নতির জন্য প্রতিটি জেলায় একটা করে স্থান বেছে নিয়েছে ৷ পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে ৷ সেই তালিকায় অবশ্য রয়েছে বিপ্লবীর জন্মভিটেও ৷ বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷

বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ৷ ট্রাস্টের দাবি, বটুকেশ্বর দত্তর বাড়িকে মূল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক ৷ ট্রাস্টের চেয়াম্যান মধুসূদন দত্ত বলেন, "এই জায়গাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার ৷ তাই তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে প্রচারের আলোয় আনা হোক বিপ্লবীর জন্মভিটেকে ৷"

বিপ্লবীর শেষ জীবন কেটেছে অত্যন্ত কষ্টে ৷ স্বাধীনতার পর চরম অনাহারে দিন কেটেছিল তাঁর ৷ মেলেনি প্রাপ্য সম্মানটুকুও ৷ স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের পাতায় আরও অনেক বিপ্লবীর মতো হারিয়ে যান বটুকেশ্বর দত্তও ৷

পুরানো জরাজীর্ণ একটি পাকা বাড়ি ৷ পাঁচিল ঘেরা বাড়িটির কাঠের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে বেশ কয়েকটি ঘর ৷ বাড়ির ঘরগুলো আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের মতো ৷ কিন্তু, একটি ঘরে ঢুকলে চমকে উঠবেন আপনি ৷ ঘরের ভেতর রয়েছে একটি বড় সুড়ঙ্গ ৷ এই বাড়ির ঠিক পাশেই রয়েছে একটি মাটির দোতালা বাড়ি ৷ টিনের চালা ও কাঠের পাল্লা রয়েছে বাড়িটিতে ৷

ঠিকানা বর্ধমানের ওয়াড়ি গ্রাম ৷ বর্ধমান শহরের বাঁকুড়া মোড় থেকে খণ্ডঘোষের দিকে 10 কিলোমিটার হেঁটে গেলেই পড়বে এই গ্রাম ৷ গ্রামে রয়েছে একটি স্কুল ৷ স্কুলের পাশ দিয়ে তিন কিলোমিটার গেলেই দেখতে পাবেন বাড়ি দুটো ৷ বাড়ির দুটোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস ৷ তাই আজও বাড়ি দুটোকে আগলে রাখেন গ্রামবাসীরা ৷ মাটির দোতালা বাড়িটি বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর ৷ পাশের জরাজীর্ণ পাকা বাড়িটি নগেন্দ্রনাথ ঘোষের ৷ এই বাড়ির সুড়ঙ্গেই আত্মগোপন করেছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিং ৷

ighter Batukeshwar Dutt
এই বাড়িতেই জন্ম বটুকেশ্বর দত্তর

এই বাড়ি দুটোর ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ৷ 1929 সালের 8 এপ্রিল ৷ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তখন চরম ব্যস্ততা ৷ ট্রেড ডিসপিউট বিল ও পাবলিক সেফটি বিল নিয়ে সেখানে ভোটাভুটি হবে ৷ দমনমূলক এই বিল পাশ করাতে তৎপর ব্রিটিশরা ৷ পার্লামেন্টের গ্যালারিতে সারি সারি দর্শক ৷ তাদের মাঝেই বসে দুই যুবক ৷ তাঁরাও আর সবার মতো মন দিয়ে দেখছেন পার্লামেন্টের কাজ ৷ ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে যাবেন স্পিকার বিঠলভাই প্যাটেল ৷ তখনই পড়ল বোমা ৷ কেঁপে উঠল পার্লামেন্ট ৷ শোনা গেল ইনক্লাব জিন্দাবাদ স্লোগান ৷ ফাঁকা জায়গায় বোমা ফেলায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি ঠিকই ৷ কিন্তু, এই ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের ভিত ৷ ভগৎ সিং ও বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের এই কর্মকাণ্ড সেদিন দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল ৷ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন দু'জনেই ৷ 1938 সালে জেল থেকে মুক্তি পান বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ৷

ighter Batukeshwar Dutt
এই বাড়িতে আত্মগোপন করেন ভগৎ সিং

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই হামলার ছক কষা হয়েছিল বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওয়াড়ি গ্রামে ৷ মাটির দোতালা বাড়িটেতে ৷ 18 নভেম্বর 1910 সালে এই গ্রামে জন্মেছিলেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ৷ এখানেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি ৷ এই বাড়িটিই এক সময় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আতুঁড়ঘর ৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একেরপর এক ছক কষা হয়েছিল এই বাড়িতে বসেই ৷ বাড়িটির চার দেওয়াল সাক্ষী রয়েছে সেই কাহিনির ৷

বটকেশ্বর দত্তের বাড়ির বর্তমান অবস্থা, দেখুন ভিডিয়ো

সাইমন কমিশনের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছিলেন লালা লাজপত রায় ৷ আন্দোলনরত লালা লাজপত রায়ের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে ৷ যার নির্দেশ দিয়েছিল তৎকালীল SP জেমস স্কট ৷ ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ৷ জেমস স্কটকে হত্যার ছক কষেন ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্তরা ৷ কিন্তু, জেমস স্কটের জায়গায় পুলিস অফিসার স্যান্ডারসনকে হত্যা করেন ভগৎ সিং ৷ এরপরই হন্যে হয়ে পুলিশ খুঁজতে থাকে তাঁকে ৷ তখন, বটুকেশ্বর দত্তর পরামর্শ মতো ওয়াড়ি গ্রামে আত্মগোপন করেন ভগৎ সিং ৷ বাড়িটি ছিল নগেন্দ্রনাথ ঘোষের ৷ এই বাড়ির সুড়ঙ্গে প্রায় 15 দিন আত্মগোপন করে থাকেন তাঁরা ৷

ইতিহাসজড়িত বাড়ি দুটো সযত্নে আগলে রেখেছেন গ্রামবাসীরা ৷ গ্রামবাসী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শম্ভুনাথ দাস, প্রত্যেকের গলায় একই সুর ৷ সংরক্ষণ করা হোক বাড়ি দুটোকে ৷ অবহেলায় যেন নষ্ট না হয়ে যায় বাড়ি দুটো, এমনই দাবি তাঁদের ৷ যদিও ইতিমধ্যেই সরকারের উদ্যোগে বিপ্লবীর জন্ম ভিটেকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে ৷ রাজ্য সরকার পর্যটনের উন্নতির জন্য প্রতিটি জেলায় একটা করে স্থান বেছে নিয়েছে ৷ পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে ৷ সেই তালিকায় অবশ্য রয়েছে বিপ্লবীর জন্মভিটেও ৷ বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷

বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ৷ ট্রাস্টের দাবি, বটুকেশ্বর দত্তর বাড়িকে মূল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক ৷ ট্রাস্টের চেয়াম্যান মধুসূদন দত্ত বলেন, "এই জায়গাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার ৷ তাই তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে প্রচারের আলোয় আনা হোক বিপ্লবীর জন্মভিটেকে ৷"

বিপ্লবীর শেষ জীবন কেটেছে অত্যন্ত কষ্টে ৷ স্বাধীনতার পর চরম অনাহারে দিন কেটেছিল তাঁর ৷ মেলেনি প্রাপ্য সম্মানটুকুও ৷ স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের পাতায় আরও অনেক বিপ্লবীর মতো হারিয়ে যান বটুকেশ্বর দত্তও ৷

Last Updated : Aug 15, 2020, 2:15 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.