বর্ধমান, 9 জানুয়ারি: অনুষ্ঠান বাড়িতে মিষ্টি দই খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বেশ কিছুজন । পূর্ব বর্ধমানের দু’জায়গায় এই ঘটনা ঘটার পরেই নমুনা সংগ্রহ করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর । জানা যায়, ওই দই আমূল কোম্পানির ছিল । দইয়ের নমুনা পরীক্ষা করে ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া যায় । এরপরেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পূর্ব বর্ধমান জেলায় আমূলের মিষ্টি দই বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনকয়েক আগে রায়না-2 ব্লকের ছোটোবৈনান গ্রামে একটা শ্রাদ্ধবাড়িতে খাবার খেয়ে 105 জন অসুস্থ হয়ে পড়েন । দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে ওইদিন রাত থেকেই অনেকের ডায়েরিয়া শুরু হয় । অসুস্থদের মধ্যে 68 জনকে স্থানীয় মাধবডিহি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও 10 জনকে হুগলির আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করা হয় । জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে খবর যেতেই স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা মাধবডিহি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান । সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে । এছাড়া মেমারিতেও আরও একটা ঘটনা ঘটে ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলার দু’টি ব্লকে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে । দেখা গিয়েছে, ইন্ডিয়ান ডেয়ারি প্রোডাক্ট, যার ব্র্যান্ড নাম ‘আমূল মিষ্টি দই’, ব্যাচ নম্বর কেপিভি3653 থেকেই এই বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে । ওই দইয়ের নমুনা সংগ্রহ করে ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া যায় । সেই কারণে জেলার সমস্ত ডিস্ট্রিবিউটর, রিটেলারদের আমূলের মিষ্টি দই বিক্রি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানতে পেরেছে, যে আমূল দই থেকে বিষক্রিয়া শুরু হয়, সেই দই তৈরি হয়েছিল বাঁকুড়ার ইন্ডিয়ান ডেয়ারি প্রোডাক্ট লিমিটেডে । ব্যাচ নম্বর কেপিভি3653 ৷ ওই দইয়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয় । পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওই ব্যাচের দইয়ে ‘স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস’ নামে ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মিলেছে । চিকিৎসকদের মতে, ‘স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস’ ব্যাকটেরিয়া গোলাকৃতি ধরনের । এটি অক্সিজেন নির্ভর ব্যাকটেরিয়া । এমনকি অক্সিজেন ছাড়াও এটার বৃদ্ধি ঘটে । এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়া ছাড়াও নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে ।
এদিকে আমূল দই বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আতংক দেখা দিয়েছে ৷ ওই ব্যান্ডের দুধ, টক দই-সহ অন্যান্য সামগ্রী কিনতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ ৷ দোকানদারেরা বলছেন, আমূলের চকলেট-সহ অন্যান্য সামগ্রী গুজরাত থেকেই আসে । মূলত, দই বা দুধ জাতীয় জিনিস, যেগুলি মাত্র কয়েকদিন ঘরে রাখা যাবে, সেগুলি তৈরি হয় বাঁকুড়া-সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় জায়গায় । 31 ডিসেম্বরের মিষ্টি দই থেকেই ঘটনা ঘটেছে । এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা । কিন্তু আতংকের কারণে এ দিন অনেকেই আমূলের টক দই কিংবা দুধ কিনতেও আতংকে ভুগেছেন ।
পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ ড. সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, দু’টি ব্লকের খাবারে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে । জানা গিয়েছে, দুই জায়গাতেই দই থেকে বিষক্রিয়া শুরু হয় । তাই ওই মিষ্টি দই বিক্রি বন্ধ রাখার জন্য ডিলারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে । এই নিয়ে আমূল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷
আরও পড়ুন: