বর্ধমান, 11 এপ্রিল : দশটা পাতিলেবু 5 টাকায় । সকাল থেকে সমানে হেঁকে চলেছেন দোকানদার । কিন্তু খদ্দেরের দেখা নেই । অগত্যা দোকানদার হাঁকতে শুরু করলেন বারোটা পাতিলেবু 5 টাকা। তারপরও দেখা মিলছে না খদ্দেরের । দৃশ্যটা বর্ধমান শহরের কার্জনগেট সংলগ্ন রানিগঞ্জ বাজার এলাকার । তবে শুধু লেবু নয় । আলু, পেঁয়াজ, পটল সহ সমস্ত সবজি কিংবা ফলের দোকানেও সেভাবে দেখা নেই ক্রেতাদের । দিনের শেষে রাস্তার ধারে সবজি ঢেলে দিয়েই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলের দোকানেও পচতে শুরু করেছে ফলগুলি । একে কোরোনা সংক্রমণের ভয় তারউপর লকডাউন । তাই আপাতত প্রায় ফাঁকা পুরো বাজার চত্বর ।
লকডাউন শুরু হওয়ার সময় বর্ধমান শহরের নীলপুর বাজার , স্টেশন বাজার, রানিগঞ্জ বাজার, ঝুরঝুরে পুল সহ বিভিন্ন বাজারগুলিতে আলু,পেঁয়াজ, শাকসবজি সহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার ভিড় উপচে পড়ছিল। ক্রেতাদের অভিযোগ ছিল, লকডাউনের সুযোগে ব্যবসায়ীরা তাঁদের নিজেদের ইচ্ছেমতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছিলেন। চড়া দামে বিক্রি হয়েছে আলু,পেঁয়াজ,ডিম সহ নানা জিনিস।

কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই সবজি-ফলসহ অন্য দ্রব্য সামগ্রীর জোগান বাড়তে থাকে। চাষিরাও তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে শুরু করেছেন । কিন্তু সবজি-ফলের আমদানি বাড়লেও দিন দিন কমতে থাকে ক্রেতার সংখ্যা । স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা হলেও কমেছে সবজির দাম । কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি । দোকানিরা জানান, দিনের শেষে প্রচুর পরিমাণে সবজি-ফল নষ্ট হতে শুরু করেছে ।
আজ রানিগঞ্জ বাজার, তেঁতুলতলা বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজারের ছবিটা বুঝিয়ে দিচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিকে । হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন দোকানদাররা । দোকানের একদিকে পচা সবজি, আনাজপাতি জড়ো করে রাখতে শুরু করেছেন । দিনের শেষে সেগুলি ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন ।

এবিষয়ে খুচরো ব্যবসায়ী স্বপন সেন বলেন, "কাঁচা সবজি বিক্রির জন্য বাজারে আনা হচ্ছে। কিন্তু খদ্দের না থাকায় দিনের শেষে সব ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছি ।" অন্য এক ব্যবসায়ী রাজেশ মুখার্জি বলেন, "দুদিন আগে বাজারে লেবু পাওয়া যাচ্ছিল না । হঠাৎ করে আমদানি বেশি হয়েছে । এখন পাঁচ টাকাতে 12 পিস লেবু দিলেও, কেউ কিনতে আসছে না। অর্ধেক লেবু শুকিয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হচ্ছে ।
এবিষয়ে চেম্বার অফ ট্রেডার্সের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব বলেন, "বাজারে ক্রেতা না আসায় সবজি-ফল সব পচে যাচ্ছে। আমরা শুধু সরকারের আবেদনের জন্য এবং চাষিদের মুখ চেয়ে ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছি । প্রচুর লোকসান হচ্ছে। জানি না কীভাবে এই ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যাব । "