বর্ধমান, 15 অগস্ট : বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর এলাকার সুবলদহ গ্রাম । চারিদিকে গাছ গাছালি ঘেরা । গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দেবখাল । নামেই খাল । একঝলক দেখলে নদী বলেই মনে হবে । গ্রামের ভিতরে কাঁচা রাস্তা ধরে গেলেই মিলবে মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে । কিন্তু স্বাধীনতার 75তম বর্ষেও সেই সুবলদহ গ্রাম উপেক্ষিত । মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসুকে সারা পৃথিবীর মানুষ জানলেও তাঁর জন্মভিটে যে সুবলদহ গ্রাম, তা অনেকের অজানা । গ্রামবাসীদের আক্ষেপ এই সুবলদহ গ্রামকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার জন্য সরকারের তরফে যতটা উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল, সেটা কেউ করেনি ।
বর্ধমান শহর থেকে প্রায় 70 কিলোমিটার দূরে সুবলদহ গ্রাম । বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে দামোদরের সেতু পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে শ্যামসুন্দর হয়ে পাষন্ডা পার করে মিলবে বড় বৈনান । সেখান থেকে প্রায় 8 কিলোমিটার গেলে সুবলদহ গ্রাম । সুবলদহ গ্রামের রাস্তায় ঢুকে কিছুটা গেলে ছোট একটা সাঁকো পার করে পিচের রাস্তা ধরে গিয়ে ডানদিকে গ্রামে রাস্তা শুরু । গ্রামে ঢোকার মুখে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর আবক্ষ মূর্তি । সেখান থেকে কয়েক পা এগোলে মূল গ্রাম । এখন গ্রামের কিছুটা রাস্তা পাকা হলেও, বাকি রাস্তা কাঁচা রয়েছে ৷ মাটির রাস্তার দু'ধারে মাটির বাড়ি । আছে পুকুর ঘাট । তাল, নারকেল ও বাঁশ গাছের ঝাড় গোটা গ্রামকে ঢেকে রেখেছে । গ্রামকে ঘিরে রয়েছে দেবখাল । দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল সেই খাল দিয়ে বয়ে গিয়েছে । একটু বৃষ্টি হলে আর রাস্তায় যাতায়াত করা যায় না । রাস্তার অবস্থা এমনই করুণ যে গোড়ালির উপর কাদা উঠে যায় । সেই রাস্তা ধরে বাঁশের ঝাড়ের ভিতর দিয়ে কিছুটা গেলেই মিলবে মহান বিপ্লবীর জন্মভিটে । গাছগাছালির ভিতরে লুকিয়ে আছে মহান বিপ্লবীর জন্মভিটে ।
আরও পড়ুন : Netaji Subhas Chandra Bose : নজরবন্দি হয়েও অপ্রতিরোধ্য নেতাজি, গোপন চিঠি পাঠাতেন পাউরুটির স্লাইসে
নামেই জন্মভিটে । পড়ে আছে এক টুকরো জমি । বিপ্লবীর স্মৃতি বলতে সেকালের একটা পাকা শৌচাগার । আর একটা ফলকে খোদাই করা আছে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । সেই ফলক না থাকলে কারও বোঝার সাধ্য নেই এই সুবলদহে জন্মেছিলেন ভারতের মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । তাঁর হাত ধরে আমাদের দেশ স্বাধীনতার মুখ দেখেছিল ।
অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী থেকে রাজ্য সরকারের একাধিক মন্ত্রী এই মহান বিপ্লবীর জন্মস্থানে একাধিকবার ছুটে এসেছেন । সকলে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । এমনকি রাজ্য সরকার বিপ্লবীর জন্মভিটে সংরক্ষণ করার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা অর্থ বরাদ্দও করেছেন । সেই অর্থে বিপ্লবীর জমি লাগোয়া একটা ছোট পাঁচিল তোলা হয়েছে । আর হয়েছে একটা শৌচাগার । গ্রামবাসীদের আক্ষেপ, যে বিপ্লবীর সংগ্রামে দেশ স্বাধীন হল, তাঁর জন্মভিটে সংরক্ষণের জন্য সরকার কেন কোনও পদক্ষেপ নিল না । এত বছর পরে গ্রামে একচিলতে পাকা রাস্তা হয়েছে । অথচ আশেপাশের গ্রামগুলিতে রাস্তা তৈরির কাজ সম্পূর্ণ । তাহলে যে টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হল, সেই টাকা কোথায় গেল ? কেন এই সুবলদহ গ্রামকে চেনানোর জন্য সরকারি ভাবে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হল না, সেই প্রশ্নও উঠছে । তবে, উত্তর মেলেনি ৷
গ্রামবাসী দীপককুমার চৌধুরি বলেন, "এটা আক্ষেপ যে রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সুবলদহ গ্রাম, এটা অনেকেই জানেন না । এখানে একটা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত ।" আরেক গ্রামবাসী শেখ হায়দার আলি জানালেন, অনেক মন্ত্রী এখানে এসেছেন । অনেক আশার কথা শুনিয়েছেন ৷ কাজের কাজ কিছুই হয়নি । মীর মহম্মদ শাহদতের মতে, মহান বিপ্লবীকে যেভাবে সম্মান জানানো উচিত ছিল, সেটা হয়নি । গ্রামে তো সেই অর্থে কোনও উন্নয়ন হয়নি ।