পূর্ব বর্ধমান, 22 সেপ্টেম্বর: আকাশের মুখ ভার। শরতে তুলোর মতো মেঘের বদলে নিম্নচাপের বৃষ্টি দেখতে হচ্ছে ৷ মাঝে মধ্যেই দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও আবার টানা তিন-চার দিন ধরেও চলছে বৃষ্টি। এই বৃষ্টির ফলে কীভাবে প্রতিমা শুকিয়ে বাকি কাজ করবেন তা বুঝতে পারছেন না প্রতিমা শিল্পীরা ৷ এমনকী অর্ডার নেওয়া প্রতিমা ঠিক সময় পুজো উদ্যোক্তাদের দিতে পারবেন কি না তাও জানা নেই তাঁদের ৷ তাই প্রতিমা শিল্পীদের কাছে এখন অসুর বৃষ্টি ৷ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মতো একই সমস্যায় পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরাও।
বর্ধমান শহরের খালুইবিল মাঠ এলাকার বড়নীলপুরের পাল পাড়া 'কুমোরটুলি' নামেই এলাকায় পরিচিত। সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে এই এলাকায় শিল্পীদের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়ে যায় ৷ নাওয়া-খাওয়া মাথায় ওঠে ৷ এবারও তাই হচ্ছে। তবে সমস্যা বাড়িয়েছে বৃষ্টি ৷ ঠাকুর তৈরি হলেও তা কীভাবে তা শুকিয়ে খটখটে হবে সেটা ভেবেই মাথায় হাত প্রতিমা শিল্পী সমীর পাল, লিখিল পাল, প্রদীপ পালেদের ।
কয়েক মাস আগে থেকেই মূর্তিতে মাটি দেওয়ার কাজ শুরু হয়। মাটি শুকিয়ে যাওয়ার পরে শুরু হয় রঙের কাজ। তাই কড়া রোদে ভালো করে সেই মাটি না শুকিয়ে নিতে পারলে রং ধরতেও সমস্যা হয়। অথচ এখন প্রায়দিনই বৃষ্টি হচ্ছে ৷ টিনের ছাউনি কিংবা ভাঙা খড়ের চাল দিয়ে জল পড়ছে। ফলে কীভাবে প্রতিমা শুকিয়ে বাকি কাজ শেষ হবে সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে মৃৎশিল্পীদের।
পুজোর বাকি আর মাত্র এক মাস ৷ তাই প্রতিমার রং শুকিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে শিল্পীরা ব্যবহার করছেন উন্নত মানের রং ৷ মান ভালো হলেও দাম অনেকটাই বেশি। ভিজে আবহাওয়ায় সহজেই শুকিয়ে যায় এই রং ৷ ফলে বেড়ে যাচ্ছে প্রতিমা তৈরির খরচ ৷ হিসেব করলে দেখা যায় প্রথমে যে খরচ হবে মনে হয়েছিল তার থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চারগুন বাড়তি খরচ হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: মশারির ভিতরে কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা! লেখা 'মশাসুর হইতে সাবধান', অভিনব উদ্যোগ বেহালা মিত্র সংঘের
এই প্রসঙ্গেই মৃৎশিল্পী সমীর পাল বলেন, "চলতি মরশুমে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে প্রতিমা তৈরি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভালো রোদ উঠলে প্রতিমার মাটি ভালোভাবে শুকিয়ে যায়। রোদ থাকলে বাড়ির বাইরে কোথাও প্রতিমা রেখে দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া যায়। তাতে সব দিক থেকেই ভালো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে প্লাস্টিক দিয়ে প্রতিমা মুড়ে রাখতে হচ্ছে। হঠাৎ করে বৃষ্টি এসে গেলে প্রতিমা সরানো সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে ব্লু ল্যাম্পের সাহায্যে মাটি শুকাতে হচ্ছে । এর ফলে খরচ আগের থেকে অনেকটাই বেড়ে গেছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা প্রতিমার দাম সেই হারে বাড়াতে নারাজ ।" পাশাপাশি নতুন করে যেসব প্রতিমার অর্ডার নেওয়া হচ্ছে সেগুলির কাজও কীভাবে শেষ করবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে তিনি জানান।