পূর্ব বর্ধমান, 11 জুলাই: প্রায় বেশিরভাগ জেলাতেই পঞ্চায়েতের ফলে যখন দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি, সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় কার্যত উলটপুরাণ ৷ জেলাজুড়ে বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে। তবে দ্বিতীয়স্থানের লড়াইয়ে এগিয়ে আছে সিপিএম। বিজেপি সেখানে তিন নম্বরে।
এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের শুরু থেকেই কখনও মারের বদলে পালটা মার, কখনও আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিল বামেরা ৷ হাত মিলিয়েছিল কংগ্রেসও ৷ আর নেতাদের সেই কথার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে বাস্তবেও ৷ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল মনোনয়ন পর্বের সময় থেকেই ৷ প্রাণও হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থক ৷ বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলের লাগাতার সন্ত্রাসের মধ্যেও পালটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার জেরেই ফল কিছুটা হলেও ভালো হয়েছে ৷ আর সে কারণেই জেলায় ফের খাতা খুলেছে বাম-কংগ্রেস। ভালো ফল করেছে নির্দলও।
জেলার 215টি গ্রাম পঞ্চায়েতের চার হাজার 10টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, যে কয়েকটি আসনে গণনা সম্পূর্ণ হয়েছে তার মধ্যে এক হাজার 530টি আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করেছে। এগিয়ে আছে আরও 106টি আসনে। এখানে সিপিএম জয়ী হয়েছে 160টি আসনে ৷ এগিয়ে আছে আরও 21টি আসনে। বিজেপির প্রার্থী 95টি আসনে জয়লাভ করেছে ৷ তারা আরও আটটি আসনে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস 10টি আসনে জয়লাভ করেছে আর মাত্র একটি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি জেলায় এখনও পর্যন্ত একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে। ইতিমধ্যেই অবশ্য 22 জন নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেছে। আরও একটি আসনে এগিয়ে আছে নির্দল প্রার্থী। জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের তালিকা লম্বা হতেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় আবীর খেলা। তবে সকাল থেকে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবরও পাওয়া গিয়েছে। বেশ কিছু গণনা কেন্দ্র থেকে বিরোধীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এমনকী বিরোধী দলের প্রার্থীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিরোধীদের অভিযোগ পুলিশ আদতে এদিনও শাসক দলের হয়েই কাজ করছে ৷ ফলে তারা অভিযোগ করলেও পুলিশ বিরোধীদের কথা শোনেনি।
এদিন বাঘাড় এক পঞ্চায়েতের বিজেপির এজেন্ট উজ্জ্বল ঘোষকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। 2018 সালে জেলায় বিজেপি 26টি ও সিপিএম 14টি আসন পেয়েছিল। গোঁজ প্রার্থীরা পেয়েছিল 39টি আসন। যদিও এখনও পর্যন্ত গণনা সম্পূর্ণ না-হলেও, এরই মধ্যে সিপিএম গত নির্বাচনের ফলের চেয়ে 12 গুণের বেশি ভালো ফল করেছে বলে দাবি তাদের। যদিও বিজেপি গত পঞ্চায়েতের থেকেও ভালো ফল করেছে বলে পালটা দাবি করেছে পদ্ম শিবিরের নেতারা।
আরও পড়ুন: 'নো ভোট টু মমতা'র প্রচার মানুষ 'ভোট ফর মমতা' করে দিয়েছে, বিজেপিকে কটাক্ষ অভিষেকের
তবে আপাতত জেলা প্রশাসনের তরফে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিজেপির থেকে অনেকটাই অন্তত এই জেলায় এগিয়ে সিপিএম। জেলাজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কারের মধ্যেও বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয়স্থানে সিপিএমের উঠে আসাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছে তৃণমূল নেতৃত্বও ৷