শক্তিগড়, 3 এপ্রিল: রাজু ঝা'য়ের খুনের অভিযুক্তরা এখনও অধরা। যত সময় গড়াচ্ছে এই খুনের রহস্য ততই জটিল হচ্ছে। এবার ঘটনাস্থলের বিভিন্ন জায়গা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করল পুলিশ। সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে ঘটনার দিন শনিবার একটা সাদা গাড়িতে করে কলকাতার দিকে রওনা দেন বিজেপি নেতা রাজু ঝা ৷ রাত আটটা নাগাদ তাঁর গাড়ি শক্তিগড়ের আমড়ার মোড় সংলগ্ন দু'নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটা হোটেলের সামনে থামে। তার আশেপাশে অনেকগুলি ল্যাংচার দোকান আছে। গাড়ির চালকের পাশেই বসে ছিলেন রাজু ঝা। পিছনের সিটে ছিলেন রাজুর সহকর্মী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়।
এছাড়া পিছনের সিটে আরও একজন ছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাঁর নাম আব্দুল লতিফ । গরু পাচারকারী হিসেবে তাঁর নাম জড়িয়েছে। তবে তিনি আদৌ ছিলেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ । এদিকে গাড়ির থামার পরে লতিফ ও গাড়ির ড্রাইভার নীচে নেমে ঝালমুড়ি কিনছিলেন। সেই সময় একটা নীল চারচাকা গাড়ি ওই সাদা গাড়ির পিছনে এসে দাঁড়ায় । সেই গাড়ি থেকে দুই যুবক নেমে আসে। এরমধ্যে একজন রড হাতে সামনে এগিয়ে গিয়েই রাজুর পাশের কাঁচের দরজা ভেঙে ফেলে । এরপরেই দু'জনে মিলে রাজুকে সামনে ও পিছন থেকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিয়ে নিমেষে গাড়িতে চেপে উধাও হয়ে যায় ।
জাতীয় সড়ক ধরে কিছুটা এগিয়েই তারা শক্তিগড়ের স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় নেমে যায়। পরে রাস্তার ধারে গাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। রবিবার রাজু ঝায়ের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। তাঁর দেহ থেকে চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। এদিকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করতে নেমে 13টি গুলির খোল উদ্ধার করেছেন । তবে কী কারণে এই খুনের ঘটনা তা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুর্গাপুরের বিধাননগর এলাকার বাসিন্দা রাজু ঝা। তাঁর বিরুদ্ধে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় 21টি মামলা রয়েছে ।
আরও পড়ুন: সম্পত্তি বৃদ্ধি পেলেও ছোটবেলার পাড়াকে ভোলেননি, সেখানকার 'মসিহা' ছিলেন রাজু
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, একসময় ট্রাক খালাসির কাজ করা রাজু বাম আমলে তৎকালীন কিছু নেতার হাত ধরে দাদাগিরি করতে শুরু করেন। নিজস্ব গ্যাং তৈরি করে শুরু করে কয়লা পাচার। চালু হয় দূরে কয়লা পাচারের জন্য 'প্যাড' প্রথা । প্যাড অর্থাৎ রাজুর দেওয়া কাগজ, যেখানে বিশেষ চিহ্ন দেওয়া আছে। সেই প্যাড কারও কাছে থাকলে আসানসোল থেকে ডানকুনি পর্যন্ত বেআইনি কয়লা সহজেই পৌঁছে যেত পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে। এরপর তিনি গড়ে তোলেন একাধিক হোটেল, বার, রেস্তোরাঁ। কারও কারও মতে তাঁর সম্পত্তি হাজার কোটি টাকার।
তবে আগের মতো তার দাদাগিরিতে দিনে দিনে ভাটা পড়ছিল। ফলে জীবনযাত্রায় বদল ঘটেছিল। দিল্লি-মুম্বই বিদেশে বেশিরভাগ সময় তাঁর কাটত। রাজু আবার আগের মতো দাদাগিরি করতে চেয়ে নতুন নতুন সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। সেই সিন্ডিকেট শুধু কয়লা নয়, শিল্পাঞ্চলের রেলের র্যাক থেকে লৌহ আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ-সহ অন্যান্য কাঁচামাল সব কিছুর ক্ষেত্রেই শুরু করেছিল। যা নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। তবে ঠিক কী কারণে এই খুনের ঘটনা তার মোটিভ খুঁজছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: গরুপাচারে ফেরার আব্দুল লতিফের সঙ্গে এক গাড়িতে কী করছিলেন রাজু ? উঠছে প্রশ্ন