ETV Bharat / state

নামেই ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ! বর্ধমানে জমছে মামলার পাহাড়, চিন্তায় আইনজীবীরা - Fast Track Court

Fast Track Court: নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-সহ গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তিতে দেশজুড়ে দাবি ওঠায় অ্যাডহক ভিত্তিতে চালু করা হয়েছিল ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । সেইমতো বর্ধমান জেলা আদালতেও চালু হয় তিনটি ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । কিন্তু বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে নামেই সেগুলি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ৷ ফাস্ট কোনও কিছুই সেখানে হয় না বলে মত আইনজীবীদের ৷

Fast Track Court
ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট থাকা সত্ত্বেও জমছে মামলার পাহাড়
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 26, 2023, 1:43 PM IST

Updated : Nov 26, 2023, 4:44 PM IST

ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট থাকা সত্ত্বেও জমছে মামলার পাহাড়

বর্ধমান, 26 নভেম্বর: দৃশ্য 1 - 2019 সাল । উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে তাঁকে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে । 90 শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় গণধর্ষিতার । প্রতিবাদে ধর্নায় বসেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদব । প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি । উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানান, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উন্নাওয়ের গণধর্ষণের মামলাটি ফাস্ট-ট্র‍্যাক কোর্টে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ।

দৃশ্য 2 - 2012 সালের 5 জুলাই সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী তথা সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক বরুণ বিশ্বাসকে গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলি করে খুন করা হয় । সেই হত্যা মামলা চলছে বনগাঁ আদালতের ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টে ।

দৃশ্য 3 - 2019 সালের 8 অক্টোবর মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে সপরিবারে বাড়িতেই খুন হন বন্ধুপ্রকাশ পাল । এই মামলায় অভিযুক্ত উৎপল বেহরাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় বহরমপুর ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ।

নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য দেশজুড়ে দাবি উঠেছিল ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টের । এরপর অ্যাডহক ভিত্তিতেই চালু করা হয় ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । সেইমতো বর্ধমান জেলা আদালতেও চালু হয় তিনটি ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । কিন্তু যে ভাবনাচিন্তা নিয়ে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু হয়েছিল, সেই সমাধান কি আদৌ সম্ভব হয়েছে ? এই প্রশ্ন তুলছেন স্বয়ং আইনজীবীরাই ।

এক সময় দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির জন্য অ্যাডহক ভিত্তিতেই দেশজুড়ে চালু করা হয়েছিল ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টগুলি । পরে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কোর্টগুলিকে স্থায়ী করতে হবে, না হলে আদালত বন্ধ হবে । ফলে একটা সংশয় তৈরি হয় । 2013 সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্যে সেই সময় থাকা 151টি ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু রাখার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার । বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বিচারকদের সংগঠনের সঙ্গে সেই সময় তার আলোচনাও হয় । সেইমতো বর্ধমান জেলা আদালতেও চালু হয় তিনটে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । অভিযোগ, ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু হলেও পরিকাঠামোগত কারণে তা মুখ থুবড়ে পড়ে । তিনটে আদালতের মধ্যে একটা আদালত বন্ধ হয়ে গিয়েছে । একটা আদালতের বিচারক বদলি হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সেই আদালতে বিচারক নিয়োগ হয়নি । ফলে মামলা ঝুলতে শুরু করে । আইনজীবীদের মতে, যেখানে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে এই ভাবনা থেকে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু করা হয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে কোর্ট ঢিমেতালে চলছে । বরং অতিরিক্ত যে সব সেশন জজ কোর্ট আছে সেখানে তুলনামূলক মামলার নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হচ্ছে । ফলে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট নামেই রয়ে গিয়েছে, আদতে চলছে ঢিমেতালে, মত আইনজীবীদের ।

বর্ধমান জেলা আদালতের আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, "ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল প্রথম প্রথম সেই চিন্তাধারা নিয়েই কাজকর্ম চলছিল । আসলে আমাদের দেশে, রাজ্যে প্রচুর মামলা জমে আছে, যে মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে । বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাচ্ছেন না । ফলে একটা চিন্তাভাবনা করা হয় যাতে বেশকিছু মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় । সেই কারণেই করা হয় ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই কোর্ট আজ ঢিমেতালে চলছে । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরিকাঠামোগত সমস্যা । প্রথম কথা, ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টের স্থায়ী কর্মী নেই । অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের দিয়ে চুক্তিভিত্তিক এই কাজগুলো করানো হচ্ছে । অনেক সময় দেখা যাচ্ছে এই কোর্টগুলোতে জজ সাহেবদের পোস্টিং ঠিকভাবে হচ্ছে না । একটা দীর্ঘসূত্রিতা কাজ করছে । ফলে সেশন কোর্ট গুলোতে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল, ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টেও প্রায় দেখা দেয় সেইসব সমস্যা ।অথচ এই ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট যখন তৈরি হয় তখন বলা হয়েছিল, এই কোর্টের মামলাগুলি অহেতুক ফেলে রাখা যাবে না, নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কেসগুলোকে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে সময় নষ্ট করা যাবে না । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন চলার পরে অন্যান্য সেশন কোর্টগুলিতে যেভাবে দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলে, সেইভাবে এখানেও চলছে । দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না । নামেই রয়ে গিয়েছে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ।"

বর্ধমান আদালতের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টের অবস্থা করুণ । ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টে পরিকাঠামোগত অনেক সমস্যা আছে । কোনও বিচারপতি ট্রান্সফার হয়ে গেলে সেখানে নিয়োগ পেতে দু-তিন বছর সময় লেগে যায় । এখন ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ও জুভেনাইল কোর্টের মধ্যে কোনও তফাত নেই । দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট তৈরি করা হয়েছিল । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কোনও অবসান হয়নি । ফলে মামলা ঝুলেই থাকে । অথচ এই কোর্টকে বলা হত নো অ্যাডজর্নমেন্ট কোর্ট । অর্থাৎ কোনও ভাবেই বেশি সময় ফেলে রাখা যাবে না কিন্তু এখন সব কোর্টই সমান ।"

বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের-সহ সভাপতি আইনজীবী সঞ্জয় ঘোষ বলেন, "বর্ধমান জেলা আদালতে তিনটে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ছিল । তার মধ্যে একটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে । আপাতত দুটো ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট আছে । তার মধ্যে একটা ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাকেন্ট হয়ে পড়ে আছে । ওই কোর্টে যিনি জজ ছিলেন তিনি ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার পরে সেখানে নতুন করে কেউ যোগ দেননি । আর একটা যে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট তার জজ ছুটিতে আছেন । একটা ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ভ্যাকেন্ট থাকার ফলে সেখানে এক বছর যাবত কোনও কাজ হচ্ছে না । যেটা আছে সেখানে কাজ হলেও যে লক্ষ্য নিয়ে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট করা হয়েছিল সেই কাজ হচ্ছে না । অথচ ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল অর্থাৎ সেখানে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে সেই আশা আমরা দেখছি না । এখানে অতিরিক্ত জেলা জজের যে আদালতগুলি আছে সেখানে যে স্পিডে কাজ হয় এখানেও সেটা হচ্ছে । নামেই ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ! ফাস্ট কিছু নেই । ররং অ্যাডিশনাল যে কোর্টগুলো আছে সেগুলি অনেক ফাস্ট ।"

আরও পড়ুন:

  1. কেন্দ্রকে 123টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট করতে দেননি মমতা, অভিযোগ রবিশঙ্কর প্রসাদের
  2. 'বিচারক দ্বিগুণ করাটাই বকেয়া মামলা নিষ্পত্তির সমাধান নয়', পিটিশন নিলই না সুপ্রিম কোর্ট
  3. 26/11-র পনেরো বছর! দগ্ধ স্মৃতি নিয়েই এগিয়ে চলেছে 'মুম্বই মেরি জান'

ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট থাকা সত্ত্বেও জমছে মামলার পাহাড়

বর্ধমান, 26 নভেম্বর: দৃশ্য 1 - 2019 সাল । উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে তাঁকে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে । 90 শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় গণধর্ষিতার । প্রতিবাদে ধর্নায় বসেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদব । প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি । উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানান, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উন্নাওয়ের গণধর্ষণের মামলাটি ফাস্ট-ট্র‍্যাক কোর্টে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ।

দৃশ্য 2 - 2012 সালের 5 জুলাই সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী তথা সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক বরুণ বিশ্বাসকে গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলি করে খুন করা হয় । সেই হত্যা মামলা চলছে বনগাঁ আদালতের ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টে ।

দৃশ্য 3 - 2019 সালের 8 অক্টোবর মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে সপরিবারে বাড়িতেই খুন হন বন্ধুপ্রকাশ পাল । এই মামলায় অভিযুক্ত উৎপল বেহরাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় বহরমপুর ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ।

নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য দেশজুড়ে দাবি উঠেছিল ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টের । এরপর অ্যাডহক ভিত্তিতেই চালু করা হয় ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । সেইমতো বর্ধমান জেলা আদালতেও চালু হয় তিনটি ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । কিন্তু যে ভাবনাচিন্তা নিয়ে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু হয়েছিল, সেই সমাধান কি আদৌ সম্ভব হয়েছে ? এই প্রশ্ন তুলছেন স্বয়ং আইনজীবীরাই ।

এক সময় দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির জন্য অ্যাডহক ভিত্তিতেই দেশজুড়ে চালু করা হয়েছিল ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টগুলি । পরে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, কোর্টগুলিকে স্থায়ী করতে হবে, না হলে আদালত বন্ধ হবে । ফলে একটা সংশয় তৈরি হয় । 2013 সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্যে সেই সময় থাকা 151টি ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু রাখার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার । বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বিচারকদের সংগঠনের সঙ্গে সেই সময় তার আলোচনাও হয় । সেইমতো বর্ধমান জেলা আদালতেও চালু হয় তিনটে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । অভিযোগ, ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু হলেও পরিকাঠামোগত কারণে তা মুখ থুবড়ে পড়ে । তিনটে আদালতের মধ্যে একটা আদালত বন্ধ হয়ে গিয়েছে । একটা আদালতের বিচারক বদলি হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সেই আদালতে বিচারক নিয়োগ হয়নি । ফলে মামলা ঝুলতে শুরু করে । আইনজীবীদের মতে, যেখানে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে এই ভাবনা থেকে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট চালু করা হয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে কোর্ট ঢিমেতালে চলছে । বরং অতিরিক্ত যে সব সেশন জজ কোর্ট আছে সেখানে তুলনামূলক মামলার নিষ্পত্তি তাড়াতাড়ি হচ্ছে । ফলে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট নামেই রয়ে গিয়েছে, আদতে চলছে ঢিমেতালে, মত আইনজীবীদের ।

বর্ধমান জেলা আদালতের আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, "ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল প্রথম প্রথম সেই চিন্তাধারা নিয়েই কাজকর্ম চলছিল । আসলে আমাদের দেশে, রাজ্যে প্রচুর মামলা জমে আছে, যে মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে । বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাচ্ছেন না । ফলে একটা চিন্তাভাবনা করা হয় যাতে বেশকিছু মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় । সেই কারণেই করা হয় ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট । কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই কোর্ট আজ ঢিমেতালে চলছে । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরিকাঠামোগত সমস্যা । প্রথম কথা, ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টের স্থায়ী কর্মী নেই । অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের দিয়ে চুক্তিভিত্তিক এই কাজগুলো করানো হচ্ছে । অনেক সময় দেখা যাচ্ছে এই কোর্টগুলোতে জজ সাহেবদের পোস্টিং ঠিকভাবে হচ্ছে না । একটা দীর্ঘসূত্রিতা কাজ করছে । ফলে সেশন কোর্ট গুলোতে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছিল, ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টেও প্রায় দেখা দেয় সেইসব সমস্যা ।অথচ এই ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট যখন তৈরি হয় তখন বলা হয়েছিল, এই কোর্টের মামলাগুলি অহেতুক ফেলে রাখা যাবে না, নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কেসগুলোকে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে সময় নষ্ট করা যাবে না । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন চলার পরে অন্যান্য সেশন কোর্টগুলিতে যেভাবে দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলে, সেইভাবে এখানেও চলছে । দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না । নামেই রয়ে গিয়েছে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ।"

বর্ধমান আদালতের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টের অবস্থা করুণ । ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টে পরিকাঠামোগত অনেক সমস্যা আছে । কোনও বিচারপতি ট্রান্সফার হয়ে গেলে সেখানে নিয়োগ পেতে দু-তিন বছর সময় লেগে যায় । এখন ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ও জুভেনাইল কোর্টের মধ্যে কোনও তফাত নেই । দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট তৈরি করা হয়েছিল । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কোনও অবসান হয়নি । ফলে মামলা ঝুলেই থাকে । অথচ এই কোর্টকে বলা হত নো অ্যাডজর্নমেন্ট কোর্ট । অর্থাৎ কোনও ভাবেই বেশি সময় ফেলে রাখা যাবে না কিন্তু এখন সব কোর্টই সমান ।"

বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের-সহ সভাপতি আইনজীবী সঞ্জয় ঘোষ বলেন, "বর্ধমান জেলা আদালতে তিনটে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ছিল । তার মধ্যে একটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে । আপাতত দুটো ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট আছে । তার মধ্যে একটা ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাকেন্ট হয়ে পড়ে আছে । ওই কোর্টে যিনি জজ ছিলেন তিনি ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার পরে সেখানে নতুন করে কেউ যোগ দেননি । আর একটা যে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট তার জজ ছুটিতে আছেন । একটা ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ভ্যাকেন্ট থাকার ফলে সেখানে এক বছর যাবত কোনও কাজ হচ্ছে না । যেটা আছে সেখানে কাজ হলেও যে লক্ষ্য নিয়ে ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট করা হয়েছিল সেই কাজ হচ্ছে না । অথচ ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল অর্থাৎ সেখানে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে সেই আশা আমরা দেখছি না । এখানে অতিরিক্ত জেলা জজের যে আদালতগুলি আছে সেখানে যে স্পিডে কাজ হয় এখানেও সেটা হচ্ছে । নামেই ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট ! ফাস্ট কিছু নেই । ররং অ্যাডিশনাল যে কোর্টগুলো আছে সেগুলি অনেক ফাস্ট ।"

আরও পড়ুন:

  1. কেন্দ্রকে 123টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট করতে দেননি মমতা, অভিযোগ রবিশঙ্কর প্রসাদের
  2. 'বিচারক দ্বিগুণ করাটাই বকেয়া মামলা নিষ্পত্তির সমাধান নয়', পিটিশন নিলই না সুপ্রিম কোর্ট
  3. 26/11-র পনেরো বছর! দগ্ধ স্মৃতি নিয়েই এগিয়ে চলেছে 'মুম্বই মেরি জান'
Last Updated : Nov 26, 2023, 4:44 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.