ETV Bharat / state

BSc Pass Woman Sells Dahi Vada: মেয়েকে মানুষ করতে সাইকেল করে দইবড়া বিক্রি বিএসসি পাশ মহিলার

মেয়েকে মানুষ করতে সাইকেলে ঘুরে ঘুরে দইবড়া বিক্রি করেন বর্ধমানের বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী ৷ বিএসসি পাশ করার পর সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, চাকরি না পাওয়ায় বাবা-মা তাঁর বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি ৷ সেই থেকেই চলছে জীবনের সংগ্রাম ৷

author img

By

Published : Dec 12, 2021, 3:57 PM IST

BSc Pass Woman Seals Dahi Vada
মেয়েকে মানুষ করতে সাইকেলে করে দইবড়া বিক্রি বিএসসি পাশ মহিলার

পূর্ব বর্ধমান, 12 ডিসেম্বর : বিএসসি পাশ করে কোনও চাকরি পাননি বর্ধমান শহরের বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী ৷ বেশ কয়েকবার চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, চাকরি পাননি ৷ অগত্যা সংসারের হাল ধরতে এবং মেয়েকে মানুষ করতে দইবড়া বিক্রি করছেন সুনীতা চৌধুরী (BSc Pass Woman Sells Dahi Vada) ৷ প্রসঙ্গত, মা-বাবার পছন্দে ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ৷ কিন্তু, স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার কাছে চলে আসেন তিনি ৷ তারপর বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর একাকী সুনিতা চৌধুরী শুরু করেছেন তাঁর জীবন সংগ্রাম (BSc pass woman Sells Dahi Vada for Her Daughters Upbringing) ৷

ছোট থেকেই সুনীতার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শিখে সরকারি চাকরি করার ৷ বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুর এলাকার বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী, বর্ধমানের উইমেন্স কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করার পরে একের পর এক সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে থাকেন তিনি ৷ কিন্তু, ভাগ্য তাঁর সহায় ছিল না ৷ এরই মাঝে সুনীতার বাবা-মা ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক করেন ৷ তাঁদের এক কন্যাসন্তান রয়েছে ৷ কিন্তু মেয়ের জন্মের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় সাংসারিক অশান্তি ৷ অভিযোগ, সুনীতার স্বামী মাঝেমধ্যেই রাতে বাড়ি ফিরতেন না অথবা মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে অশান্তি করতেন ৷ এই অবস্থায় স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন সুনীতা ৷ চলে আসেন বর্ধমানে বাপের বাড়িতে ৷

কিন্তু, পরবর্তী সময়ে বাবা এবং মা দু’জনেই মারা যাওয়ার পর অথই জলে পড়েন সুনীতা চৌধুরী ৷ আর্থিক সমস্যায় জেরবার হয়ে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন দইবড়ার দোকান দেওয়ার ৷ মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার পর তার খরচ চালানো এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালনের চাপে এই সিদ্ধান্ত নেন বিএসসি পাশ সুনীতা ৷ প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সাইকেলে করে খাবার বিক্রি করবেন ৷ কিন্তু, সেটা চপ বা সিঙ্গারা নয় ৷ এমন খাবার যা মানুষের মন ভরবে ৷ আর শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না ৷ সেই ভাবনা থেকেই দইবড়া বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি ৷

ভোরের আলো ফোটা থেকে শুরু হয় সুনীতা চৌধুরীর লড়াই ৷ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দইবড়া তৈরির কাজ শুরু হয় ৷ বেলা পর্যন্ত চলে সেই কাজ ৷ এর পর সমস্ত কিছু গোছগাছ করে সাইকেলে চাপিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাজেপ্রতাপপুর থেকে কখনও কোর্ট কম্পাউন্ড কখনও বা টাউন হল ময়দানের সামনে দইবড়া বিক্রি করেন সুনীতা ৷ দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে বিক্রিবাটা ৷ এক প্লেট দই বড়ার দাম দশ টাকা ৷ তাঁর ছোট্ট মেয়ে সুনীতাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ৷ বাড়ি ফিরে নিজের কাজকর্ম সেরে মেয়েকে পড়াতে বসান সুনীতা ৷ এখন তাঁর জীবনের একটাই লক্ষ্য মেয়েকে মানুষ করা ৷

সাইকেলে করে দইবড়া বিক্রি বিএসসি পাশ মহিলার

সুনীতা চোধুরীর এক ক্রেতা সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব ভাল স্বাদ এই দইবড়ার ৷ সেই সঙ্গে একজন শিক্ষিত মহিলা যেভাবে নিজের সংসার চালানোর জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন, তাঁকে কুর্নিশ জানাই ৷’’

তাঁর প্রতিবেশী সজলা সরকার বলেন, ‘‘আমি যে এলাকায় থাকি, সুনীতা ওই এলাকার ভোটার ৷ কাজ করতে গিয়ে সুনীতার সঙ্গে পরিচয় হয় ৷ তাঁর কাছ থেকে সংসারের সমস্ত কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই ৷ একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে, সন্তানকে মানুষ করার জন্য আজ দইবড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ৷’’

সুনীতা চৌধুরী বলেন, ‘‘কোনও কাজকে আমি ছোট মনে করি না ৷ আমি নিজে খেতে এবং মানুষের খাওয়াতে ভালোবাসি ৷ তাই আমার মেয়েকে মানুষ করার জন্য, আমি চিন্তা করি মানুষের কাছে এমন খাবার পৌঁছতে, যে খাবার খেলে মানুষের একদিকে যেমন ভাল লাগবে ৷ তেমনি সেই খাবার খেলে কোনও মানুষের শরীর খারাপ হবে না ৷ তখনই সিদ্ধান্ত নিই রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দইবড়া বিক্রি করব ৷ বাড়িতে আমি আর মেয়ে ছাড়া কেউ নেই ৷ তাই মেয়েকে সঙ্গে কাজে বেরিয়ে পড়ি ৷ সাইকেলের মধ্যে যাতে সমস্ত জিনিসপত্র রাখা যায় ৷ সেই মতো করে সাইকেলটা তৈরি করে নিয়েছি ৷ প্রতিদিন পায়ে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে আমি দইবড়া বিক্রি করি ৷ জীবনে এখন একটাই লক্ষ্য, মেয়েকে মানুষ করা ৷’’

পূর্ব বর্ধমান, 12 ডিসেম্বর : বিএসসি পাশ করে কোনও চাকরি পাননি বর্ধমান শহরের বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী ৷ বেশ কয়েকবার চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, চাকরি পাননি ৷ অগত্যা সংসারের হাল ধরতে এবং মেয়েকে মানুষ করতে দইবড়া বিক্রি করছেন সুনীতা চৌধুরী (BSc Pass Woman Sells Dahi Vada) ৷ প্রসঙ্গত, মা-বাবার পছন্দে ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ৷ কিন্তু, স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার কাছে চলে আসেন তিনি ৷ তারপর বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর একাকী সুনিতা চৌধুরী শুরু করেছেন তাঁর জীবন সংগ্রাম (BSc pass woman Sells Dahi Vada for Her Daughters Upbringing) ৷

ছোট থেকেই সুনীতার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শিখে সরকারি চাকরি করার ৷ বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুর এলাকার বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী, বর্ধমানের উইমেন্স কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করার পরে একের পর এক সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে থাকেন তিনি ৷ কিন্তু, ভাগ্য তাঁর সহায় ছিল না ৷ এরই মাঝে সুনীতার বাবা-মা ঝাড়খণ্ডের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক করেন ৷ তাঁদের এক কন্যাসন্তান রয়েছে ৷ কিন্তু মেয়ের জন্মের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় সাংসারিক অশান্তি ৷ অভিযোগ, সুনীতার স্বামী মাঝেমধ্যেই রাতে বাড়ি ফিরতেন না অথবা মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে অশান্তি করতেন ৷ এই অবস্থায় স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন সুনীতা ৷ চলে আসেন বর্ধমানে বাপের বাড়িতে ৷

কিন্তু, পরবর্তী সময়ে বাবা এবং মা দু’জনেই মারা যাওয়ার পর অথই জলে পড়েন সুনীতা চৌধুরী ৷ আর্থিক সমস্যায় জেরবার হয়ে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন দইবড়ার দোকান দেওয়ার ৷ মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার পর তার খরচ চালানো এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালনের চাপে এই সিদ্ধান্ত নেন বিএসসি পাশ সুনীতা ৷ প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সাইকেলে করে খাবার বিক্রি করবেন ৷ কিন্তু, সেটা চপ বা সিঙ্গারা নয় ৷ এমন খাবার যা মানুষের মন ভরবে ৷ আর শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না ৷ সেই ভাবনা থেকেই দইবড়া বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি ৷

ভোরের আলো ফোটা থেকে শুরু হয় সুনীতা চৌধুরীর লড়াই ৷ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দইবড়া তৈরির কাজ শুরু হয় ৷ বেলা পর্যন্ত চলে সেই কাজ ৷ এর পর সমস্ত কিছু গোছগাছ করে সাইকেলে চাপিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাজেপ্রতাপপুর থেকে কখনও কোর্ট কম্পাউন্ড কখনও বা টাউন হল ময়দানের সামনে দইবড়া বিক্রি করেন সুনীতা ৷ দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে বিক্রিবাটা ৷ এক প্লেট দই বড়ার দাম দশ টাকা ৷ তাঁর ছোট্ট মেয়ে সুনীতাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ৷ বাড়ি ফিরে নিজের কাজকর্ম সেরে মেয়েকে পড়াতে বসান সুনীতা ৷ এখন তাঁর জীবনের একটাই লক্ষ্য মেয়েকে মানুষ করা ৷

সাইকেলে করে দইবড়া বিক্রি বিএসসি পাশ মহিলার

সুনীতা চোধুরীর এক ক্রেতা সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব ভাল স্বাদ এই দইবড়ার ৷ সেই সঙ্গে একজন শিক্ষিত মহিলা যেভাবে নিজের সংসার চালানোর জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন, তাঁকে কুর্নিশ জানাই ৷’’

তাঁর প্রতিবেশী সজলা সরকার বলেন, ‘‘আমি যে এলাকায় থাকি, সুনীতা ওই এলাকার ভোটার ৷ কাজ করতে গিয়ে সুনীতার সঙ্গে পরিচয় হয় ৷ তাঁর কাছ থেকে সংসারের সমস্ত কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই ৷ একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে, সন্তানকে মানুষ করার জন্য আজ দইবড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ৷’’

সুনীতা চৌধুরী বলেন, ‘‘কোনও কাজকে আমি ছোট মনে করি না ৷ আমি নিজে খেতে এবং মানুষের খাওয়াতে ভালোবাসি ৷ তাই আমার মেয়েকে মানুষ করার জন্য, আমি চিন্তা করি মানুষের কাছে এমন খাবার পৌঁছতে, যে খাবার খেলে মানুষের একদিকে যেমন ভাল লাগবে ৷ তেমনি সেই খাবার খেলে কোনও মানুষের শরীর খারাপ হবে না ৷ তখনই সিদ্ধান্ত নিই রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দইবড়া বিক্রি করব ৷ বাড়িতে আমি আর মেয়ে ছাড়া কেউ নেই ৷ তাই মেয়েকে সঙ্গে কাজে বেরিয়ে পড়ি ৷ সাইকেলের মধ্যে যাতে সমস্ত জিনিসপত্র রাখা যায় ৷ সেই মতো করে সাইকেলটা তৈরি করে নিয়েছি ৷ প্রতিদিন পায়ে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে আমি দইবড়া বিক্রি করি ৷ জীবনে এখন একটাই লক্ষ্য, মেয়েকে মানুষ করা ৷’’

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.