ঘাটাল, ১৮ মার্চ : ডাইনি অপবাদে এক মহিলাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার ঈশ্বরপুর আদিবাসীপাড়ার ঘটনা। মৃতের নাম আদরমণি হাঁসদা(৫০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে এলাকায় কয়েকটি গবাদি পশু মারা যাচ্ছিল। পাশাপাশি গ্রামের বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ওই গ্রামের জানগুরু শ্যামলী মান্ডির কাছে যায় বাসিন্দারা। গ্রামে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে নিদান দেয় জানগুরু। তিনদিন ধরে চলছিল মন্দির প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত পুজো-অর্চনা। এরই মাঝে গতকাল জানগুরুর ভর হয়, তাতে গ্রামের ছয় মহিলাকে ডাইনি বলে উল্লেখ করে সে। এদের জন্যই গ্রামে রোগ-জ্বালা এবং এদের শাস্তি না দেওয়া হলে এরা মানুষ মেরে ফেলবে, এই আশঙ্কার কথাও জানায় জানগুরু। গ্রামের মোড়লরা এরপর ওই ছয় মহিলাকে শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। সেই মতো শুরু হয় বিচারসভা। জানগুরুর নিদান অনুযায়ী ডাকা হয় ছয় মহিলাকেও। অভিযোগ, এরপর ওই ছয় মহিলার থেকে টাকা পয়সা কেড়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি, নিজেদের ডাইনি বলে স্বীকার করার জন্য লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। স্বীকার করার পর মারধরের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে চলে ওই সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী পুজো, নাচ-গান। মারের চোটে আদরমণি হাঁসদা(৫০) নামে এক মহিলা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থানেই মারা যান।
জানা যাচ্ছে, বিচারসভায় সামিল ছিল গ্রামের আট-আশি সকলেই। খবর পেয়ে পৌঁছায় ঘাটাল থানার পুলিশ। SDPO কল্যাণ সরকার ও ঘাটালের মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে এলাকায় পৌঁছায় পুলিশ বাহিনী। যদিও পুলিশের সামনেই আদরমণির মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে পুজো, নাচ-গান। পরিস্থিতি বেগতিক হতে পারে আঁচ করে পুলিশের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া উপায় ছিল না।
ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামে যান ঘাটালের বিধায়ক শংকর দোলই। এরপর গ্রামের কয়েকজনকে বুঝিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ঘাটাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকি পাঁচজনের মধ্যে গুরুতর আহত তিন মহিলাকেও হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই গ্রাম ছাড়ে পুলিশ। যদিও এখনও পর্যন্ত ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ঘটনার পর থেকেই পলাতক জানগুরু শ্যামলী মান্ডি। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে, এমনই পুলিশ সূত্রে খবর। সূত্রের আরও খবর, শ্যামলী মান্ডির স্বামী ঘাটালের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী।