খড়গপুর, 19 অগাস্ট : গুঁড়ো দুধের মতো গুঁড়ো তেল তৈরি করল খড়গপুর IIT । এই গুঁড়ো তেল থাকবে বহুদিন । যা সহজে নষ্ট হবে না । সস্তা হবে । এবং শরীরের ক্ষেত্রে সুবিধাদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত বলে দাবি গবেষকদের ।
গুঁড়ো তেল বানানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছেন IIT খড়গপুরের গবেষক-অধ্যাপকরা । আমূলভাবে বদল আসতে পারে খাদ্য প্রযুক্তি ও শিল্পের দুনিয়ায় । রান্নাঘরগুলিতেও আসবে পরিবর্তন । IIT খড়গপুরের এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক হরিনিবাস মিশ্র এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন । তাঁর নেতৃত্বে কাজ করেছেন আরও দুইজন গবেষক মৌসুমি ঘোষ ও মোনালিসা পট্টনায়েক ।
অধ্যাপক মিশ্র বলেন, "এই আবিষ্কার প্রক্রিয়ায় তেলের পাউডার বা গুঁড়ো তৈরি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য । এই তেল ভোজ্যও । প্রকৃতিজাত ও স্বাস্থ্যসম্মত । অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভারসাম্য যুক্ত ফ্যাটি আসিড সমৃদ্ধ । অর্থাৎ হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে বা ওজন বৃদ্ধিতে কোনও চাপ থাকছে না । এই তেলে কেক, পেস্ট্রি, চকোলেট ও আইসক্রিমও বানাতে পারবেন ।"
কিন্তু কীভাবে তৈরি হবে এই তেলের গুঁড়ো । সেই বিষয়ে অধ্যাপক মিশ্রর বক্তব্য, "তেলের মধ্যে আমরা কিছু কঠিন যৌগ যুক্ত করে সেই ক্বাথটিকে মেশিনের স্পেয়ারের সাহায্যে গুঁড়োতে পরিণত করব । ঠিক যেভাবে তরল দুধকে গুঁড়ো দুধে পরিণত করা হয় । এই ভোজ্য তেলকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সঞ্চিত স্থায়ী চর্বি মুক্ত করার জন্য এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে মনো-আনস্যাচুরেটেড এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড যৌগ । ফলে শরীরের মধ্যে ঘি বা ডালডা, পাম অয়েল জাতীয় স্থায়ী চর্বি জমতে পারবে না । বিশ্বজুড়ে ভোজ্য তেলের দুনিয়ায় এই পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা PUFA এখন জনপ্রিয় যা স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়া । যা কি না কোলেস্টেরল ও হৃদরোগীদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে । তাছাড়া এই তেলে যুক্ত করা হবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ । শরীরের ভেতরে জমা হওয়া ক্ষতিকারক যৌগগুলিকে বের করে দিতে সাহায্য করবে ।"
প্রাথমিক পর্যায়ে এই গুঁড়ো তেলের ব্যবহার হবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে । এর ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয় হবে বলে গবেষকরা আশা করছেন । প্যাকেজিং ও পরিবহনের সুবিধা হবে । খোলা বাতাসে না রাখলে বহুদিন পর্যন্ত একে রেখে দেওয়া যাবে । যা সাধারণ তেলের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়ে ওঠে না ।
IIT খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, "স্বাধীনতার 70 বছর পেরিয়েও আমাদের দেশের মানুষের জীবনযাপন এখন পুষ্টি ও স্বাস্থ্যর অভাব বোধ করছে । এর মূল কারণ অজ্ঞতা ও অসচেতনতা । বর্তমানে সেই ধারার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এই ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত উপাদানযুক্ত ভোজ্যতেল সস্তাও বটে । আমাদের গ্রামীণ ও প্রান্তিক জীবনের মানুষের কাছে মহামূল্যবান স্বাস্থ্যকর উপাদান হিসেবে হাজির হবে ।"
ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়ার পেটেন্ট পেয়ে গিয়েছে IIT খড়গপুর । বাণিজ্যিকভাবে বড় আকারে ব্যবহার করে বাজারজাত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে । গবেষকদের এই দল ইতিমধ্যে বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেছে । যার মধ্যে 'গান্ধিয়ান ইয়ং টেকনোলজিকাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড 2020' উল্লেখযোগ্য ।
সর্বশেষ গৃহিণীদের উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে অধ্যাপক মিশ্র একটি টিপস দেন । তিনি বলেন, "এই পাউডার বাজারে এলে তা ময়দা বা আটার সঙ্গে মিশিয়ে যেমন লেচি বানান তা বানিয়ে নিন । এরপর বেলে তাওয়ায় দিয়ে নাড়াচাড়া করুন । গরম হলেই তেল ছেড়ে বেরিয়ে আসবে আর এমনি ভাজা হয়ে যাবে । আগের থেকে আরও মুচমুচে হবে ।"