চন্দ্রকোনা, 11ফেব্রুয়ারি: কাউন্সিলর নাকি সবজি বিক্রেতা ৷ শুনতে আবাক লাগলেও জনপ্রতিনিধি হিসাবে দৃষ্টান্ত গড়লেন চন্দ্রকোনা পৌরসভার 9 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সমর দোলই । আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই, তাই সংসার চালাতে প্রতিদিন ভোরে বাজারে সবজি বিক্রেতার ভূমিকায় দেখতে পাওয়া যায় তাঁকে (TMC councillor refuses to leave vegetable selling) । একজন জনপ্রতিনিধির এমন ভূমিকাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন চন্দ্রকোনাবাসী ।
একদিকে কাউন্সিলর, অপরদিকে সবজি বিক্রেতা দুই কাজই সততার সঙ্গে পালন করে চলেছেন সমর দোলই । নেতা বা জনপ্রতিনিধি হওয়া মানেই যে আর্থিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধির মাধ্যম নয়, সেই ভাবনা খানিক হলেও বদলে দিয়েছেন সমর দোলই, এমনই ধারণা এলাকাবাসীরা । চন্দ্রকোনা পৌরসভার 9 নম্বর ওয়ার্ডের দলমাদল গ্রামে বাড়ি সমর দোলইয়ের । 34 বছর বয়সি এই কাউন্সিলরের বাড়ি বলতে দু'কামরার ছোট পাকা বাড়ি ৷ তার সামনেটা টিন দিয়ে ঘেরা । এই বাড়িতেই বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস সমররের । বাবা লক্ষ্মীকান্ত দোলইয়ের পুঁজি বলতে মাত্র বিঘা চারেক জমি ৷ সেই জমিতে বিভিন্ন সবজি ফলিয়ে, তা বাজারে বিক্রি করেন লক্ষ্মীকান্ত ।
সমর এমএ পাশ । তা সত্, সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় বাবার সঙ্গেই নিজেদের জমির সবজি নিয়ে গিয়ে চন্দ্রকোনার রেগুলেটেড বাজারে বিক্রি করতেন তিনি । বেশ কয়েক বছর ধরে বাবা আর পেড়ে ওঠেন না ৷ তাই এখন নিজেই প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠে চন্দ্রকোনা রেগুলেটেড বাজারে সবজি নিয়ে গিয়ে পাইকারি হিসাবে বিক্রি করেন এই তৃণমূল কাউন্সিলর । মাঝে দু'বছর কোভিড পরিস্থিতিতে একটি সংস্থায় ডেলিভারি বয় হিসাবেও কাজ করেছেন সমর দোলই । রুজি-রোজগারের তাগিদে হাতের সামনে যখন যে কাজটা পেয়েছেন সততার সঙ্গে করে গিয়েছেন সমর দোলই বলেই জানাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্য থেকে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ।
দোলই পরিবার বরাবরই তৃণমূল সমর্থক ৷ ফলে 2022 সালের পৌরসভা নির্বাচনে 9 নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছিল সমর দোলইকে ৷ জমি বন্ধক দিয়ে নির্বাচনের প্রচারের খরচ জুগিয়েছিলেন বলে জানান সমর নিজেই । পরে ভোটে জয়ী হয়ে ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর হন তিনি । কাউন্সিলর হয়ে নিয়মিত ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা, তাদের খোঁজ খবর রাখা এবং পৌর দফতরে সময় দেওয়ার পাশাপাশি বিকেলে জমি থেকে বিভিন্ন সবজি তুলে রাখেন তিনি ৷ সেগুলি পরদিন ভোর চারটেয় বাজারে নিয়ে গিয়ে পাইকারি বিক্রি করেন সমর ।
একজন কাউন্সিলর হয়েও কেন বাজারে গিয়ে সবজি বিক্রি করেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে সমর দোলই বলেন, "সংসার চালাতে গেলে তো রোজগার করতে হবেই ৷ আমি সৎ পথে রোজগার করি । আজ কাউন্সিলর আছি, পরের বার নাও থাকতে পারি । তবে বাজারে সবজি বিক্রি নতুন নয়, এটা আমি আগে থেকেই করে আসছি । তবে কাউন্সিলর হয়ে চাপ বাড়লেও যথাসাধ্য মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি ।"
এমন একজন সাদামাটা কাউন্সিলর পেয়ে খুশি চন্দ্রকোনাবাসীও ৷ তাদের মতে একজন জনপ্রতিনিধি তো এমনই মাটির মানুষ হওয়া দরকার ৷ যাকে নাগালের মধ্যেই পাওয়া যায় ৷ পাশাপাশি সমর দোলইয়ের ভুয়সী প্রশংসা করলেন চন্দ্রকোনা পৌরসভার চেয়ারপার্সন প্রতিমা পাত্রও । তিনি বলেন, "সমরের পারিবারিক আর্থিক স্বচ্ছলতা ভালো নয় ৷ কাউন্সিলর হয়েও বাজারে সবজি বিক্রি করেন তিনি । তবে সমর দোলই আমাদের কাছেও অনুপ্রেরণা ।"