চন্দ্রকোণা, 18 নভেম্বর: শিশুবয়সে সরকারি হোমে ঠাঁই পাওয়া মেয়ে, দীর্ঘ 16 বছর পর বাড়ি ফিরল ৷ একলাইনের সিনেমার চিত্রনাট্য মনে হলেও, এ কাহিনী বাস্তবের ৷ তাতে মেয়েটির পরিবারে তো বটেই, গোটা গ্রামে কার্যত উৎসবের আমেজ ৷ আনন্দে কার্যত আত্মহারা মেয়ের ফেরার অপেক্ষায় থাকা দীর্ঘ দেড় দশক একাকী কাটিয়ে দেওয়া বাবা ৷
বেশি দূরে নয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার ভগবন্তপুর 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বারিন্যা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে । মেয়েটির বাবা গোবিন্দ ঘোষাল । 16 বছর আগে পোলিয়ো খাওয়ানোর নাম করে দেড় বছরের মেয়ে সোহিনীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তাঁর স্ত্রী ৷ তবে মেয়েকেও সঙ্গে রাখেননি তিনি ৷ একটি সরকারি হোমে মেয়েকে কার্যত গুঁজে দিয়ে বেপাত্তা হয়ে যান স্ত্রী বলে অভিযোগ ৷
আরও পড়ুন: Child Death : সদ্যোজাত শিশুকন্যার মৃত্যু, নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ
তারপর থেকে কী গোবিন্দ, কী আত্মীয়-স্বজন, কেউই আর সোহিনীর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি ৷ কিন্তু মেয়ের ফিরে আসার আশা ছাড়েননি গোবিন্দ ৷ নিজে আর সংসারও করেননি ৷ শুধু চাষবাস আর মেয়ের খোঁজ, এই করেই গত দেড় দশক ধরে দিন কাটছিল তাঁর ৷ মঙ্গলবার মেয়েকে ফিরে পেয়ে সেই কঠোর তপস্যা সার্থক হল তাঁর ৷
এত বছর হোমে কাটিয়ে বাবার কাছে ফিরতে পেরে খুশি কিশোরী সোহিনীও ৷ মেয়েটির সাফ কথা, বাবাই এখন তার সব ৷ লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে চায় সে ৷ বাবাকে নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায় ৷ একই ভাবে মেয়েকে ছাড়াও তাঁর জীবনে আর কিছু নেই বলে জানিয়েছেন গোবিন্দবাবু ৷ মেয়ের সব স্বপ্নপূরণ তিনি পাশে আছেন বলে জানিয়েছেন ৷
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট্ট বয়সে মা সঙ্গে করে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর হোমেই ঠাঁই হয়েছিল সোহিনীর ৷ ওই বয়সে বাড়ির ঠিকানাপত্র কিছুই বলতে পারেনি ৷ শুধু বাবার নামটুকু মনে আনতে পেরেছিল ৷ কিন্তু তাতে ভার করে একটা মেয়ের পরিবারকে খুঁজে বার করা প্রায় অসম্ভব ছিল ৷ মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে (হোম) এত বছর ধরে ছিল সে ৷
কিন্তু গোবিন্দ এবং তাঁর পরিবারের তরফে চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না ৷ প্রথমে মায়ের সঙ্গেই মেয়ে রয়েছে বলে ধরে নিলেও, গোবিন্দের স্ত্রীর কোনও হদিশই পাননি কেউ ৷ তারপরই এক স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা ৷ সোহিনী ও তার মায়ের খোঁজ চালানো ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা দফতর এবং হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের যোগাযোগ তৈরি হয় ৷ তাতেই সম্প্রতি গোবিন্দ ঘোষালকে ডেকে পাঠানো হয় ৷
আরও পড়ুন: Containment Zone: কন্টেনমেন্ট জোনে বিজয়া সম্মিলনী, পৌরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
স্থানীয় প্রশাসন ও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে পরিবারের সন্ধান করে ডেকে পাঠানো হয় গোবিন্দ ঘোষালকে। সেখানে দীর্ঘ কথোপকথন, আলোচনার পর সোহিনীর সঙ্গে তাঁর রক্তের সম্পর্কে সিলমোহর পড়ে ৷ তারপর মঙ্গলবার মেদিনীপুরের ওই হোমে গিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন তিনি ৷ এত বছর পর মেয়েকে ফিরে পেয়ে আনন্দে বিহ্বল তিনি ৷ দেড় দশক পর বাবা এবং মেয়ের পুনর্মিলনে খুশি গোটা গ্রামও ৷ বাড়ি গিয়ে গোবিন্দকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসছেন সকলে ৷