মেদিনীপুর, 20 এপ্রিল: জ্বর-জ্বালা-যন্ত্রণা, শারীরিক সমস্যা হলেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের বহু মানুষ সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি ভিড় জমান প্রাইভেটে চিকিৎসক দেখানোর জন্য ৷ ডাক্তারপাড়া হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনগর এলাকায় যেমন অর্থোপেডিক, নিউরোসার্জন, বাচ্চাদের ডাক্তার রয়েছেন অপরদিকে হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো বড় অসুখের চিকিৎসকও রয়েছেন অনেক ৷ তবে সমস্যা অন্য জায়গায় ৷ চিকিৎসক থাকলেও বর্তমানে তাঁদের কাছেই যেতে ভয় পাচ্ছেন এলাকার মানুষেরা ৷ দিন দিন বেড়ে চলা ফি দিতে গিয়ে এখন নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে জঙ্গলমহলের মানুষদের ৷
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেছেন, এই অঞ্চলের একাধিক চিকিৎসকদের ফি-এর পরিমাণ এক এক রকম ৷ চোখের ডাক্তারের ফিস যদি 100-300 টাকা হয় তাহলে হার্ট, নিউরো, কিডনি, অর্থোপেডিক-সহ ডাক্তারের ফি'র পরিমাণ 500-700, এমনকি কখনও হাজার বারোশো টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। কারও কারও আবার ফি-এর পরিমাণ 1800 টাকা ৷ তার সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসকদের নির্দেশনামা অনুযায়ী বিভিন্ন প্যাথলজি সেন্টারের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা । ফলে একটা হার্টের ডাক্তারের কাছে ফি, ডায়াগনস্টিক এবং ওষুধ নিয়ে একটা মানুষের খরচা দাঁড়াচ্ছে হাজার খানেকের ওপরে ৷ তবে এখানেই শেষ নয়, এক সপ্তাহের মধ্যে ফের চিকিৎসকের কাছে গেলে দিতে হচ্ছে সমপরিমাণ টাকা ৷
অভিযোগ, কোনও কোনও ডাক্তারবাবুর নাম আবার পনেরো দিন বা এক মাস আগেও নাম লেখাতে চাইলে পারা যায় না । তার জন্য দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। ফলে জঙ্গলমহল অধ্যুষিত এই গ্রামগঞ্জ থেকে উঠে আসা সাধারণ মানুষ পড়েছেন সমস্যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের এখানে বেশিরভাগ মানুষই গরিব শ্রেণীর ৷ এখানে চিকিৎসকদের ফিয়ের পরিমাণ প্রচণ্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এটা একটা ক্রাইম ৷ সরকারের এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত ৷" অপর এক স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, "কারও যদি শরীর খারাপ হয় ওই টাকা দিয়ে চিকিৎসক দেখানো সম্ভব নয় ৷ সরকারি হাসপাতালে পরিষেবাও ভালো নয় ৷ চিকিৎসকদের এই বিষয়ে মানবিক হওয়া উচিত ৷"
আরও পড়ুন: 1 মে থেকে পার্পেল লাইনে দ্বিগুণ হচ্ছে মেট্রো পরিষেবা, চলবে 24টি মেট্রো
যদিও এ বিষয়ে বিজেপি জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস অভিযোগ করে বলেন, "এটা একটা চিন্তার বিষয় ৷ চিকিৎসকের ফি নিয়ে সাধারণ মানুষ বিরম্বনায় পড়েছেন ৷ 500 টাকার নীচে কোনও চিকিৎসকের ফিস নেই ৷ যাঁরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ তাঁরা পড়েছেন সমস্যায় ৷" অন্যদিকে, টিএমসি সভাপতি সুজয় হাজরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "সরকারি যেহেতু কোন নির্দেশিকা নেই এবং ডাক্তারদেরকে কোন নির্দেশিকার দ্বারা বাঁধা যাবে না। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোন বলার অধিকার নেই।"
যদিও এ বিষয়ে ডাক্তারদের পাশেই দাঁড়িয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল । সভাপতি কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত বলেন, "ডাক্তাররা যে পরিমাণ ফি নিচ্ছেন তা বিরাট পরিমাণ নয়। কেউ এমবিবিএস আছেন, কেউ এমডি আছেন । তাই ফি-এর পরিমাণ এক এক রকম ৷ তবে যদি এই রকম কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব ।"