মেদিনীপুর, 1 ডিসেম্বর: গবেষক, পুরোহিত থেকে জ্যোতিষী, পুরনো পঞ্জিকা ঘেঁটে দেখতে হলেই তাঁরা হাজির হন মেদিনীপুরের (Medinipur) মির্জাবাজার গয়লাপাড়ার বাসিন্দা তারাশংকর চক্রবর্তীর বাড়িতে ৷ 69 বছরের এই বৃদ্ধের বসত যেন পঞ্জিকার 'মিউজিয়াম' ! তাঁর সংগ্রহে (Panjika Collector) রয়েছে 1904, 1906, 1907 সালের পঞ্জিকা ! রয়েছে 1947-48 সালের পঞ্জিকাও ! আসলে এই সংগ্রহের মূল কাণ্ডারী ছিলেন তারাশংকরের বাবা গণেশচন্দ্র চক্রবর্তী ৷ তাঁর প্রয়াণের পর বাবার ঐতিহ্য ধরে রাখতে আসরে নামেন ছেলে ৷ পাশে পান সহধর্মিনী সোনালীকে ৷
তারাশংকর বললেন, আজকাল সবকিছুই অনলাইনে পাওয়া যায় ৷ তবুও বিভিন্ন কাজে পঞ্জিকা প্রয়োজন হয় ৷ পুরোহিত, পণ্ডিতরা সবাই ইন্টারনেটের উপর ভরসা করতে পারেন না ৷ তাঁরা আসেন তারাশংকরের কাছে ৷ বিয়ে, অন্নপ্রাশন কিংবা উপনয়নের তারিখ স্থির করা হোক, অথবা কারও কোষ্ঠী বিচার করার প্রয়োজন পড়ুক ৷ এমনকী, যেসব গবেষকরা পুরনো দিনের পুঁথিপত্র নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরাও আসেন এই বাড়িতে ৷ মন দিয়ে পড়েন নানা সময়ের পঞ্জিকা ৷
আরও পড়ুন: বইয়ের নেশায় বাড়িতেই লাইব্রেরি বানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী
প্রতি বছর নিয়ম করে সবক'টি পঞ্জিকা কেনেন তারাশংকর ৷ তাঁর সংগ্রহে চলতি বছরের পঞ্জিকাও রয়েছে ৷ তারাশংকর জানান, তাঁর বাবাকে পঞ্জিকা কিনতে, সেগুলির যত্ন করতে দেখতেন ৷ সেই কাজ ভালো লাগত তাঁরও ৷ বৃদ্ধের আশা, ভবিষ্যতে তাঁর নাতি, নাতনিরাও পঞ্জিকা সংগ্রহের এই ধারা অব্যাহত রাখতে এগিয়ে আসবে ৷ তবে, এই নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা যে নেই, তা ভালো জানেন তারাশংকরও ৷ তবুও নিজের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি ৷
স্বামীর এই সখ ভালোবাসেন স্ত্রী সোনালী চক্রবর্তীও ৷ স্বামী-স্ত্রী দু'জনে মিলে গুছিয়ে রাখেন পঞ্জিকার পাহাড় ! মাঝেমধ্যেই সেসব নামিয়ে এনে পরিচর্যা করতে হয় ৷ তা না হলে পুরনো সব বই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ এই কাজ কঠিন এবং অবশ্যই ধৈর্যের ৷ প্রসঙ্গত, তারাশংকর দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন ৷ এখন বয়স বেড়েছে ৷ বেড়েছে অবসর সময় ৷ তার অনেকটাই কেটে যায় পঞ্জিকা সংরক্ষণের খুঁটিনাটি সারতে ৷ তারাশংকরের আশা, ভবিষ্যত প্রজন্মও তাঁর হয়ে একদিন এই দায়িত্ব পালন করবে ৷