মেদিনীপুর, 10 সেপ্টেম্বর : বাংলায় মাস্টারর্স ৷ তবে পেশা ছিল অভিনয় ৷ টিভি ধারাবাহিকের পরিচিত মুখ নিশীথ দাস (Nisith Das) ৷ তবে কোভিডের গ্রাসে থমকে যায় জীবন ৷ হাতে কাজ নেই ৷ তাই 34 বছরের অভিনেতার (TV Actor) এখন নতুন চরিত্র চায়ের দোকানির ৷ রিলে নয়, রিয়েলে ৷
1987 সালে মেদিনীপুর (West Midnapore) শহরের 24 নম্বর ওয়ার্ডের রাঙামাটির আটপাড়ায় জন্ম নিশীথের । ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল অভিনেতা হওয়ার । ক্লাস ফোর পর্যন্ত একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করার পর থেকে তিনি নির্মল হৃদয় আশ্রম ক্যাথলিক চার্চ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন । তারপর নাটক নিয়ে পড়াশোনা করবেন ভেবে কলকাতায় গিয়ে রবীন্দ্রভারতীতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল নিশীথ ৷ কিন্তু সামর্থে না-কুলোনোয় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে ৷ এরপর তিনি মেদিনীপুর কলেজ থেকে 2010 সালে স্নাতক পাশ করেন ৷
একদিন এক বান্ধবীর ফোনে বদলে যায় নিশীথের জীবন । একটি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন করার জন্য নিশীথকে ডাকা হয় । এরপরই তাঁর জীবন অন্য পথে মোড় নেয় ৷ বাংলার নামকরা বিভিন্ন চ্যানেলের নানা ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি । এ ছাড়াও বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা পান । বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে ব়্যাম্প মাতিয়েছেন নিশীথ ৷ সবমিলিয়ে এলাকার হিরো হয়ে ওঠেন তিনি ৷
এরপর একটি চ্যানেলে দাদামণি নামে এক ধারাবাহিকের জুনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে কাজ করেন । প্রফুল্ল নামে একটি ধারাবাহিকেও তিনি প্রায় দেড় বছর কাজ করেছেন । এরপর অপর একটি চ্যানেলে কিরণমালাতে একটি চরিত্র পান । এরপর তাঁর অভিনয় রাজযোটকে । শুধু তাই নয়, বাংলা ছেড়ে মুম্বইয়ের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলেন ৷
আরও পড়ুন: Calcutta High Court : শিক্ষক নেতাকে গ্রেফতার করতে ‘অতিসক্রিয়’ পুলিশ, মামলা রুজুর অনুমতি হাইকোর্টের
কিন্তু হঠাৎই নেমে আসে কোভিড বিপর্যয় ৷ অতিমারির জেরে হওয়া লকডাউনে দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় স্টুডিয়ো পাড়ার কাজ ৷ ধারাবাহিক, ফিল্ম, শর্টফিল্ম-সহ সমস্ত কাজই বন্ধ হয়ে যায় ৷ নিশীথ কলকাতায় আর খরচ চালাতে না-পেরে বাধ্য হয়ে ফিরে যান নিজের বাড়িতে । বাড়িতে বসে থাকলেও তো পেট চলে না । বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন ৷ তাই সংসার চালাতে অল্প পুঁজিতে চায়ের দোকান খোলেন নিশীথ ৷ নানা ফ্লেভারর চা বানান ৷ নবাবী চা, কেশর-মালাই চা, গোলাপ পাপড়ি চা, রাবড়ি চা, কোল্ড ক্রিম কফি, ওরিও কোল্ড কফি, হট কফি, কিসমিস চা আরও কত কী ৷ বিক্রি করেন পাস্তা-ন্যুডলসও ৷ রাস্তার ধারে এমন স্বাদের চা ও খাবার পেয়ে ভিড় জমান অনেকেই ৷
ইটিভি ভারতকে নিশীথ আক্ষেপের সুরে বলেছেন, "ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে অভিনয় জগতে পা রাখার, বড় একজন নায়ক হওয়ার । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল ৷ ছোট ছোট কাজ পাচ্ছিলাম ৷ সিরিয়াল, মডেলিং করছিলাম ৷ একটু একটু করে স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম ৷ কিন্তু হঠাৎ কোভিড বিপর্যয় আর তাতেই জীবনেও নেমে আসে বিপর্যয় । প্রথম প্রথম ম্যানেজ করছিলাম কিন্তু তারপর চালানো কষ্ট হচ্ছিল । তাই কলকাতা থেকে ফিরে আসি বাড়িতে ।একেবারেই ভেঙে পড়েছিলাম কিন্তু তারপর পেটের তাগিদে কিছু করার ভাবনাচিন্তা নিয়ে অল্প পুঁজিতে চায়ের দোকান করে ফেলি বাবাকে নিয়ে । দোকানে এখন ভিড় জমান ক্রেতারা ৷ যদিও স্বপ্ন রয়েছে এই বিপর্যয় সারিয়ে আবার পরিস্থিতি ভাল হলে হয়তো ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরতে পারব । আমার স্বপ্নের হিরো অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়।"
আরও পড়ুন : Calcutta High Court: ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা ডিলারদের
কোভিড অতিমারি শুধু মানুষের জীবন নিয়েছে তা নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানে টান পড়েছে । ছোট-বড় বহু কোম্পানির দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে । প্রবল সঙ্কটে পড়েছেন সংস্কৃতি জগতের মানুষেরা ৷ অনেককেই পেট চালাতে ছাড়তে হয়েছে নিজের নেশাকে ৷ তাঁদেরই প্রতিনিধি নিশীথ ৷ তবে আশাটা এখনও মরেনি ৷ এখনও সুদিনের আশায় দিন গুনছেন নিশীথ দাসের মতো আরও অনেকে ৷