খেতুয়া, 24 জুন : ছোটো একটা ঘর ৷ অগোছালো ৷ চারপাশের দেওয়ালে টাঙানো বিভিন্ন কীর্তি ৷ শো-কেসে রাখা বিভিন্ন ছোটো ছোটো পেন্সিলের টুকরো ৷ হঠাৎ দেখলে বোঝার উপায় নেই, তাতে লুকিয়ে রয়েছে শিল্প ৷ কিন্তু, একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, পেন্সিলের শিষগুলিতে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন আর্ট ৷ কোনওটাতে দুর্গা, তো কোনওটাতে ইংরেজি বর্ণমালা ৷ আবার রয়েছে বিভিন্ন স্ট্যাচুও ৷ শুধু পেন্সিলের শিষ নয়, পালক, দেশলাই কাঠির উপরও বানানো হয়েছে বিভিন্ন মুখের ছবি ৷ এসব বানানোই শখ প্রসেনজিতের ৷
প্রসেনজিৎ কর ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানার খেতুয়া রানিয়ড়ের বাসিন্দা ৷ দু'বছর আগে ITI-র পড়া শেষ করেন ৷ বর্তমানে বাবার বাইক সারানোর দোকানে থাকেন ৷ অবসর সময়ে মাইক্রো আর্ট নিয়ে কাজ করেন ৷ ইতিমধ্যেই তাঁর বিভিন্ন কাজ সাড়া ফেলে দিয়েছে ৷ ঝুলিতে পুরে ফেলেছেন অনেক পুরষ্কারও ৷ করে ফেলেছেন বহু রেকর্ড ৷ এরপর তাঁর লক্ষ্য লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে নিজের নাম তোলা ৷ ইচ্ছে আছে এলাকায় একটা মাইক্রো আর্টের স্কুল খোলা ৷
তাঁর সৃষ্টিগুলির মধ্যে রয়েছে-
- পেন্সিলের শিষে তৈরি ক্ষুদ্র দুর্গা ৷ যেটি আয়তনে 5.5x4 মিলিমিটার ৷ এটি বানাতে তাঁর সময় লেগেছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা ৷
- একটি 3.8 সেন্টিমিটার দেশলাই কাঠিতে রয়েছে 40জন স্বাধীনতা সংগ্রামীর মুখ ৷ এটি বানাতে সময় লেগেছিল প্রায় 10 ঘণ্টা ৷
- একটি 12 সেন্টিমিটারের পালকে এঁকেছেন 16জন ভারতীয় খেলোয়াড়ের মুখ ৷ যা বানাতে তাঁর সময় লেগেছিল 70 ঘণ্টা ৷
- রয়েছে মুসুর ডালের উপর বিশ্ব বাংলার লোগো ৷
- সম্প্রতি 8-10 মিলিমিটারের 196টি সুয়াবুল পাতায় এঁকেছেন দুর্গার ছবি ৷ যা আঁকতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় 32 ঘণ্টা ৷
তিনি তাঁর কাজের মূল্যও পেয়েছেন ৷ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার ৷ সেই তালিকায় রয়েছে-
- ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ড
- ওয়ার্লড জিনিয়াস রেকর্ড
- ওয়ার্লড রেকর্ড ইন্ডিয়া
- এই মাইক্রো আর্টের দৌলতে ঝুলিতে ঢুকেছে অনেক বড় বড় সংস্থার স্বীকৃতিও ৷
শুধু মাইক্রো আর্ট নয়, ফেদার আর্টেও সমানভাবে দক্ষ প্রসেনজিৎ ৷ পালকের উপর তিনি বানিয়ে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বিরাট কোহলির ছবি ৷ প্রসেনজিৎ বলেন, "ছোটো থেকেই মাইক্রো আর্টের উপর কৌতুহল ছিল ৷ দুই বছর আগে শুরু করি এই কাজ ৷ প্রথম প্রথম তা খুব কঠিন মনে হলেও পরে তা সহজ হয়ে ওঠে ৷ মাইক্রো আর্ট নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে ৷ গিনেস বুকে নাম নথিভুক্ত করার ইচ্ছে রয়েছে ৷ আর আমি চাই, এলাকায় একটা মাইক্রো আর্টের স্কুল হোক ৷"
ছেলে প্রসেনজিতের স্বপ্নই যেন স্বপ্ন হয়ে উঠেছে মুক্তিপদ করের ৷ বলেন, "ছোটো থেকে ছেলেকে কিছু দিতে পারিনি ৷ তবে ছেলে যেটা চায়, সেটাই করুক ৷ ওর পাশে সবসময় রয়েছি ৷ সবসময় বলি সৎ পথে থাকতে ৷ অনেক বড় হোক ও ৷"