ETV Bharat / state

Kite Flying: শৈশব বন্দি মোবাইলে! তাই হারাচ্ছে নস্টালিয়ার ঘুড়ি-লাটাই, মাঞ্জা দেওয়া সুতো - বাচ্চারা আর ঘুড়ি লাটাইয়ে মজে নেই

এক সময় ছিল, যখন বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকেই ছোট কচিকাঁচা ও তরুণ কিশোররা ঘুড়ি-লাটাই হাতে বেরিয়ে পড়ত বাড়ির বাইরে। সারাদিন ধরে তারা ঘুড়ি ওড়াতো মাঞ্জা দেওয়া সুতো দিয়ে। কিন্তু সেসব এখন অতীত জঙ্গলমহল একদা অধ্যুষিত মেদিনীপুরে। এখনকার বাচ্চারা আর ঘুড়ি লাটাইয়ে মজে নেই, মজেছে সোশাল মিডিয়ায় (Social Media) ৷ তাই সেই চির পরিচিত ঘুড়ির জনপ্রিয়তা হারিয়ে যেতে চলেছে মেদিনীপুর থেকে। যদিও পুরানো নস্টালজিয়ার আবেগে এখনও দোকান দিয়ে চলেছে মেদিনীপুরের ঘুড়ি ব্যবসায়ীরা। আশা! ঘুড়ি কিনবে, ঘুড়ি ওড়াবে (Kite Flying) নতুন প্রজন্ম।

Kite Flying
ঘুড়ি ও ঘুড়ি ব্যবসায়ী
author img

By

Published : Jan 4, 2023, 6:11 PM IST

চির পরিচিত ঘুড়ির জনপ্রিয়তা হারিয়ে যেতে চলেছে মেদিনীপুর থেকে

মেদিনীপুর, 4 জানুয়ারি: একটা সময় পৌষ সংক্রান্তিতে পুলি-পিঠের পাশাপাশি মেদিনীপুরের মানুষের কাছে আরও একটা বিনোদন ছিল ঘুড়ি (Kite Flying)। দু'দিনের ছুটি পেয়ে অনেকেই ঘুড়ি-লাটাই নিয়ে উঠে যেতেন ছাদে কিংবা চলে যেতেন কোনও মাঠে ৷ তারপর সারাদিনব্যাপী আকাশজুড়ে চলত ঘুড়ির লড়াই । কিন্তু আজ সেসব অতীত ৷ মুঠোফোনের দাপটে কমেছে পেটকাটি-চাঁদিয়ালের লড়াই ৷ এখন বাচ্চারা মোবাইলে রিল, ফেসবুক (Facebook) আর টেলিগ্রামে ব্যস্ত (Kite Flying is on Decline as Kids are Now Busy with Social Media)। স্বভাবতই হাতে মাঞ্জা দেওয়া সুতোর সঙ্গে রকমারি ঘুড়ির মেলবন্ধন সেভাবে আর চোখে পড়ে না ৷ ঘুড়ির দোকানগুলো কোনওক্রমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

আগেকার ওই ঘুড়ি যেমন কাগজের হত তেমনই তার ভিন্ন ভিন্ন ধরন থাকত। থাকত দুইরঙা, তিনরঙা, চৌরঙ্গী, মাথা কাটা, দাদুভাই, পেটকাটি এবং বড় বড় ঢঙ নামে পরিচিত ঘুড়ি-লাটাই। এর সঙ্গে কাঁচের গুঁড়ি অ্যারারুট দিয়ে সুতো মাঞ্জা দেওয়ার প্রবণতা ছিল এই জঙ্গলমহলের মানুষদের। ঘুড়ি ওড়ায়নি এমন মানুষ পাওয়া সে সময় দুষ্কর ছিল। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রায় ঘন ঘন মাঞ্জা দেওয়া হত বিভিন্ন মাঠে-ঘাটে এবং নদীর ধারে। আর সাত সকালেই ছোটরা খেয়ে-দেয়ে লেগে পড়তো ঘুড়ি ওড়াতে। পাশের ঘুড়ি কেটে ভোকাট্টা বলেই তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠত ওই কিশোররা। সবমিলিয়া পৌষ সংক্রান্তির দু'দিন জমজমাট থাকত আকাশে ঘুড়ির লড়াই ৷

আরও পড়ুন: ময়দানের বিশ্বযুদ্ধ আকাশে, শিয়ালদায় 'ইন্ডিয়া কাইটে' বিশ্বকাপ ঘুড়ি

সকাল-সকাল উঠেই ঘুড়ি-লাটাই নিয়ে ছাদে চলে যেত সকলে। তারস্বরে লাউড স্পিকার বাজিয়ে গান, গানের সঙ্গে নাচ এবং সেইসঙ্গে ঘুড়ির লড়াই লেগে যেত আকাশে। ঘুড়ি কেটে গেলেই ভেসে আসত ভো-কাট্টা আওয়াজ! শুধু দিনে নয়, রাতের বেলাও ঘুড়ি ওড়ানোরও প্রবণতা ছিল। ঘুড়ির সুতোর সঙ্গে বেঁধে রাতের বেলায় আকাশে ছাড়া হত ফানুস। কিন্তু সবকিছুই এখন নস্টালজিয়া জঙ্গলমহল অধ্যুষিত মেদিনীপুরে। এখনকার বাচ্চারা আর ঘুড়ি লাটাইয়ে মজে নেই ৷ মজেছে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং গেমিংয়ে। তারা সোশাল দুনিয়া, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, রিলস, টুইটার, টেলিগ্রামে ব্যস্ত। তাই সেই চির পরিচিত ঘুড়ির জনপ্রিয়তা হারিয়ে যেতে চলেছে মেদিনীপুর থেকে।

এখন হাতে মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় ঘুড়ি ওড়ানো হয় না ৷ তার জায়গায় দখল নিয়েছে চিনা মাঞ্জা সুতো আর কাগজের ঘুড়ির জায়গায় দখল নিয়েছে প্লাস্টিকের ঘুড়ি। ঘুড়ি সুতোর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। যদিও মেদিনীপুর জেলা ও শহরের ঘুড়ির দোকানদাররা অপেক্ষা করে থাকেন সেই পুরনো দিনের। কবে সেই দিন ফিরে আসবে এবং আবার পুরনো চালচিত্র অনুসারে সেই ধুমধাম করে ঘুড়ি ওড়ানোয় মেতে উঠবে মেদিনীপুরের মানুষজন। দীর্ঘ 25-30 বছর ধরে দোকান দেওয়া আসা দোকানিরা বলেন, "আগের মতো সেই ঘুড়ি ওড়ানো পাগলামি আর নেই। এখনকার ছেলেমেয়েরা এই কৃত্রিম সুতো-লাটাই নিয়ে নামমাত্র ঘুড়ি উড়িয়েই ল্যাঠা চুকিয়ে ফেলে।"

Kite Flying
নানা রঙা ঘুড়ি

আরও পড়ুন: বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ির দোকানে নেই ভিড়, কপালে চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের

তাঁরা আরও বলেন, "এখন আর হাতে দেওয়া মাঞ্জা সুতো বিক্রি হয় না, এই সুতো সম্পূর্ণটাই তৈরি করা কোম্পানির। আমাদের প্রজন্মই হয়তো শেষ ঘুড়ির ব্যবসা করবে, আগামী প্রজন্ম আর করবে না। তাছাড়া বাচ্চাদের এই মোবাইলের নেশার দাপটেই কমেছে সেই চিরাচরিত ঘুড়ি ওড়ানো। আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঘুড়ি।" যদিও ঘুড়ি কিনতে আসা ক্রেতাদের বক্তব্য ঘুড়ি হারিয়ে যাওয়ার আরও কারণ রয়েছে। তাঁদের কথায়, "মোবাইলের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর সুতোর দাম পাল্লা দিয়ে বেড়ে গিয়েছে এবং সঙ্গে পরিবেশগত পরিবর্তনও হয়েছে। কারণ ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য যে প্রয়োজনীয় বাতাস লাগে তাও নেই এই সময়ে। যার ফলেই বাচ্চাদের মোবাইলের প্রতি প্রবণতা বাড়ছে ও ঘুড়ি ওড়ানোর প্রবণতা কমেছে ৷"

আরও পড়ুন: 'ধর্ষণ বন্ধ হোক' বার্তা লেখা 8 ফুটের ঘুড়ি বানালেন সুরাতের এক ব্যবসায়ী

চির পরিচিত ঘুড়ির জনপ্রিয়তা হারিয়ে যেতে চলেছে মেদিনীপুর থেকে

মেদিনীপুর, 4 জানুয়ারি: একটা সময় পৌষ সংক্রান্তিতে পুলি-পিঠের পাশাপাশি মেদিনীপুরের মানুষের কাছে আরও একটা বিনোদন ছিল ঘুড়ি (Kite Flying)। দু'দিনের ছুটি পেয়ে অনেকেই ঘুড়ি-লাটাই নিয়ে উঠে যেতেন ছাদে কিংবা চলে যেতেন কোনও মাঠে ৷ তারপর সারাদিনব্যাপী আকাশজুড়ে চলত ঘুড়ির লড়াই । কিন্তু আজ সেসব অতীত ৷ মুঠোফোনের দাপটে কমেছে পেটকাটি-চাঁদিয়ালের লড়াই ৷ এখন বাচ্চারা মোবাইলে রিল, ফেসবুক (Facebook) আর টেলিগ্রামে ব্যস্ত (Kite Flying is on Decline as Kids are Now Busy with Social Media)। স্বভাবতই হাতে মাঞ্জা দেওয়া সুতোর সঙ্গে রকমারি ঘুড়ির মেলবন্ধন সেভাবে আর চোখে পড়ে না ৷ ঘুড়ির দোকানগুলো কোনওক্রমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

আগেকার ওই ঘুড়ি যেমন কাগজের হত তেমনই তার ভিন্ন ভিন্ন ধরন থাকত। থাকত দুইরঙা, তিনরঙা, চৌরঙ্গী, মাথা কাটা, দাদুভাই, পেটকাটি এবং বড় বড় ঢঙ নামে পরিচিত ঘুড়ি-লাটাই। এর সঙ্গে কাঁচের গুঁড়ি অ্যারারুট দিয়ে সুতো মাঞ্জা দেওয়ার প্রবণতা ছিল এই জঙ্গলমহলের মানুষদের। ঘুড়ি ওড়ায়নি এমন মানুষ পাওয়া সে সময় দুষ্কর ছিল। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রায় ঘন ঘন মাঞ্জা দেওয়া হত বিভিন্ন মাঠে-ঘাটে এবং নদীর ধারে। আর সাত সকালেই ছোটরা খেয়ে-দেয়ে লেগে পড়তো ঘুড়ি ওড়াতে। পাশের ঘুড়ি কেটে ভোকাট্টা বলেই তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠত ওই কিশোররা। সবমিলিয়া পৌষ সংক্রান্তির দু'দিন জমজমাট থাকত আকাশে ঘুড়ির লড়াই ৷

আরও পড়ুন: ময়দানের বিশ্বযুদ্ধ আকাশে, শিয়ালদায় 'ইন্ডিয়া কাইটে' বিশ্বকাপ ঘুড়ি

সকাল-সকাল উঠেই ঘুড়ি-লাটাই নিয়ে ছাদে চলে যেত সকলে। তারস্বরে লাউড স্পিকার বাজিয়ে গান, গানের সঙ্গে নাচ এবং সেইসঙ্গে ঘুড়ির লড়াই লেগে যেত আকাশে। ঘুড়ি কেটে গেলেই ভেসে আসত ভো-কাট্টা আওয়াজ! শুধু দিনে নয়, রাতের বেলাও ঘুড়ি ওড়ানোরও প্রবণতা ছিল। ঘুড়ির সুতোর সঙ্গে বেঁধে রাতের বেলায় আকাশে ছাড়া হত ফানুস। কিন্তু সবকিছুই এখন নস্টালজিয়া জঙ্গলমহল অধ্যুষিত মেদিনীপুরে। এখনকার বাচ্চারা আর ঘুড়ি লাটাইয়ে মজে নেই ৷ মজেছে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং গেমিংয়ে। তারা সোশাল দুনিয়া, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, রিলস, টুইটার, টেলিগ্রামে ব্যস্ত। তাই সেই চির পরিচিত ঘুড়ির জনপ্রিয়তা হারিয়ে যেতে চলেছে মেদিনীপুর থেকে।

এখন হাতে মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় ঘুড়ি ওড়ানো হয় না ৷ তার জায়গায় দখল নিয়েছে চিনা মাঞ্জা সুতো আর কাগজের ঘুড়ির জায়গায় দখল নিয়েছে প্লাস্টিকের ঘুড়ি। ঘুড়ি সুতোর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। যদিও মেদিনীপুর জেলা ও শহরের ঘুড়ির দোকানদাররা অপেক্ষা করে থাকেন সেই পুরনো দিনের। কবে সেই দিন ফিরে আসবে এবং আবার পুরনো চালচিত্র অনুসারে সেই ধুমধাম করে ঘুড়ি ওড়ানোয় মেতে উঠবে মেদিনীপুরের মানুষজন। দীর্ঘ 25-30 বছর ধরে দোকান দেওয়া আসা দোকানিরা বলেন, "আগের মতো সেই ঘুড়ি ওড়ানো পাগলামি আর নেই। এখনকার ছেলেমেয়েরা এই কৃত্রিম সুতো-লাটাই নিয়ে নামমাত্র ঘুড়ি উড়িয়েই ল্যাঠা চুকিয়ে ফেলে।"

Kite Flying
নানা রঙা ঘুড়ি

আরও পড়ুন: বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ির দোকানে নেই ভিড়, কপালে চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের

তাঁরা আরও বলেন, "এখন আর হাতে দেওয়া মাঞ্জা সুতো বিক্রি হয় না, এই সুতো সম্পূর্ণটাই তৈরি করা কোম্পানির। আমাদের প্রজন্মই হয়তো শেষ ঘুড়ির ব্যবসা করবে, আগামী প্রজন্ম আর করবে না। তাছাড়া বাচ্চাদের এই মোবাইলের নেশার দাপটেই কমেছে সেই চিরাচরিত ঘুড়ি ওড়ানো। আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঘুড়ি।" যদিও ঘুড়ি কিনতে আসা ক্রেতাদের বক্তব্য ঘুড়ি হারিয়ে যাওয়ার আরও কারণ রয়েছে। তাঁদের কথায়, "মোবাইলের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর সুতোর দাম পাল্লা দিয়ে বেড়ে গিয়েছে এবং সঙ্গে পরিবেশগত পরিবর্তনও হয়েছে। কারণ ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য যে প্রয়োজনীয় বাতাস লাগে তাও নেই এই সময়ে। যার ফলেই বাচ্চাদের মোবাইলের প্রতি প্রবণতা বাড়ছে ও ঘুড়ি ওড়ানোর প্রবণতা কমেছে ৷"

আরও পড়ুন: 'ধর্ষণ বন্ধ হোক' বার্তা লেখা 8 ফুটের ঘুড়ি বানালেন সুরাতের এক ব্যবসায়ী

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.