মেদিনীপুর, 13 এপ্রিল : বেলদার এক ব্যক্তির ওড়িশায় কোরোনা ধরা পড়েছে ৷ কিন্তু তার আগে একটি নার্সিংহোমে ছিলেন ৷ সেই নার্সিংহোমে থাকার সুবাদে স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না গ্রামের কিছু মানুষ । শুধু ওই নার্সিংহোমের সদস্যই নয়, তার দূর-দুরান্তের আত্মীয়দেরও বাড়িতে জল বন্ধ করেছে স্থানীয়রা । অবশেষে 127 জন নার্সিং স্টাফের জন্য সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হন নার্সিংহোমের মালিক ।
গত 10 এপ্রিল দাঁতনের 2 নম্বর ব্লকের সাউরি গ্রামে এক বৃদ্ধের ওড়িশায় কোরোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে । ওড়িশায় স্থানান্তর হওয়ার আগে মেদিনীপুরের একটি নার্সিংহোমে ভরতি ছিলেন । এই খবর প্রকাশ হতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তর নড়েচড়ে বসে । তড়িঘড়ি ওই নার্সিংহোমের কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী ও কয়েকজন চিকিৎসককে পাঠানো হয় কোয়ারান্টাইনে । এরপর তাঁদের টেস্ট করা হয় ৷ পরীক্ষায় কোরোনা নেগেটিভ আসে । দফায় দফায় আরও কয়েকজনের পরীক্ষা চলছে ৷ কিন্তু এরই মধ্যে একটি বড় সমস্যা শুরু হয়েছে ।
ওই নার্সিংহোমে কর্মরত 127 জন সদস্যকে ভাড়াবাড়ি ও নিজের বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না স্থানীয়রা । এমনই অভিযোগ করেছেন নার্সিংহোমের সদস্যরা । অভিযোগ, তাদের দূর-দূরান্তের আত্মীয়দেরও হেনস্থা করছেন গ্রামবাসীরা ৷ তাদের বাড়ির কেউ এই নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত তাই হেনস্থা করা হচ্ছে । হেনস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে তাদেরকে বয়কট করেছে গ্রামের মানুষ । জল পর্যন্ত দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । পুকুরে স্নান করতে চাপিয়েছে শর্ত ৷
এই ঘটনার ভিত্তিতে আজ সাংবাদিক বৈঠক করেন ওই নার্সিংহোমের ডিরেক্টর পার্থ মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, "কাজে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে ৷ 127 জন কর্মীক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন এই শহরে এবং গ্রামে ৷ তাঁদের কিছুতেই বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না স্থানীয়রা । এলাকা থেকেও বয়কট করে রাখা হয়েছে । পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর্মীদের আত্মীয়রা বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ৷ তাদের জন্যেও ফরমান জারি করছে গ্রামবাসীরা । তাঁদের কলের জল থেকে সবজি বাজার, রেশন থেকেও বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে ৷ পুকুর নদীতে স্নান করতে গেলো নির্দেশিকা টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন এই স্বাস্থ্যকর্মী ও তাঁদের আত্মীয়রা । যদিও এই ঘটনার পর থেকে সমস্ত স্টাফদের নার্সিংহোমে রেখেই খাওয়া-দাওয়া থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ এই অবস্থা কতদিন চালাতে পারব সেটাই প্রশ্নের ৷ এই অসুবিধ হলে জেলাবাসীকে স্বাস্থ্যপরিষেবা দেবেন কীভাবে । "
নার্সিংহোমের কর্মী আশা দাস বলেন, " কোরোনার গুজবে আমাকে তো বাড়িতে ঢুকতেই দেয়নি । পাশাপাশি, আমাদের পাড়ার লোকেরা আমার বাড়ির লোকদের জল এবং সবজি বাজার করতে দিচ্ছে না । বলছে আমাদের নাকি কোরোনা হয়ে গিয়েছে ৷ তাই বয়কট করে রাখা হচ্ছে । " অন্য এক কর্মী অমিত দাস বলেন, " আমি এই নার্সিংহোমে মার্কেটিংয়ের কাজ করি ৷ আমাকে স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে হোম কোয়ারান্টাইন করেনি ৷ অথচ আমার গ্রামের বাড়িতে স্থানীয়রা আমার পরিবারকে বয়কট করেছে । দেখলেই গালিগালাজ করছে । জল নিতে দিচ্ছে না । আমার পরিবারের তরফে সরকারি আধিকারিক ও পুলিশকে বলে কোনও সুরাহা হয়নি । আমি কি স্বাস্থ্যকর্মী হয়ে ভুল কাজ করেছি ? " অন্য এক কর্মী মায়া নন্দী বলেন, " আমি এখানেই আছি ৷ কিন্তু আমার বাড়িকে বয়কট করেছে স্থানীয়রা । খাবার জলটাও বন্ধ করে দিয়েছে । আমরা যাব কোথায় । "
যদিও এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার দিনেশ কুমার বলেন , "নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব । " অন্যদিকে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, " শুধু নার্সিংহোম নয় সরকারি কর্মীরাও বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছে । বারবার মুখ্যমন্ত্রী হাতে আইন না তোলার এবং গুজবে কান দেওয়ার সচেতন বার্তা দিচ্ছেন ৷ কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না । পুলিশ প্রশাসনকে বলব আরও সচেতন হয়ে কাজ করতে ৷ এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে । কারণ আমরা যদি স্বাস্থ্য পরিষেবা বন্ধ করে দিই তাহলে আরও সমস্যা বাড়বে । কোরোনার গুজবে এই স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করছে সাধারণ মানুষ । এই বিষয়ে পুলিশকে আরও সচেতন হতে হবে ৷ পুলিশের এগিয়ে আসা দরকার । না হলে গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে । চিকিৎসা পাবে না কেউই । "