মেদিনীপুর, 2 অক্টোবর : 1947 সালে 15 অগাস্ট ভারত স্বাধীন হল৷ 1948 সালের 30 শে জানুয়ারি গান্ধিজি প্রাণ হারালেন ৷ 1948 সালের 12 ফেব্রুয়ারি গান্ধিজির চিতাভস্ম দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে ভাসানো হয়েছিল ৷ গান্ধিজির চিতাভস্ম গোটা দেশের নদ-নদীর পাশাপাশি মেদিনীপুরের কাঁসাই নদীর ঘাটেও ভাসানো হয়েছিল৷ পরবর্তীকালে এই ঘাটের নাম দেওয়া হয় গান্ধিঘাট৷ জেলা কংগ্রেসের উদ্যোগে ঘাটে বসানো হয়েছিল গান্ধিজির একটি আবক্ষ মূর্তি । সেই ঘাট আজও বহন করে চলছে গান্ধিজির অবদানের ইতিহাস ৷
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে একত্রিত করতে গোটা দেশে ঘুরেছেন গান্ধিজি ৷ বেশ কয়েকবার মেদিনীপুর শহরেও এসেছিলেন তিনি ৷ 1921 সালের 20 ও 21 সেপ্টেম্বর দু'দিন গান্ধিজি মেদিনীপুর শহরের গোলকুঁয়া চকে কিশোরী পতি রায়ের বাসভবনে ছিলেন ৷ সেই সময় মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের ময়দানে সভা করেছিলেন তিনি৷ সেই সভায় সভাপতি ছিলেন দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল৷ গান্ধিজির বাণী শুনে হাজার হাজার মানুষ অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল সেই সভা থেকেই ৷
এরপর দেশব্যাপী ইংরেজবিরোধী আন্দোলন বাড়তে থাকে ৷ 1947 সালে দেশ স্বাধীন হল ৷ স্বাধীন হওয়ার এক বছরও পেরোয়নি ৷ হত্যা করা হল গান্ধিজিকে ৷ বাপুর মৃত্যুর পর তাঁর চিতাভস্ম নিয়ে প্রতিটি রাজ্যে পথ পরিক্রমা করেছেন হাজার হাজার ভারতবাসী ৷ মহাত্মার চিতাভস্ম সারা দেশের পাশাপাশি নিয়ে আসা হয় মেদিনীপুর শহরেও৷
চিতাভস্ম নিয়ে শোকযাত্রার আয়োজন করেছিলেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব, সেই যাত্রায় হেঁটেছিল গোটা মেদিনীপুর শহর৷ এই শোকযাত্রার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মেদিনীপুরের বিপ্লবী মদনমোহন খান ও তার স্ত্রী বিজনবালা খান ৷ শোকযাত্রা শেষে গান্ধিজির চিতাভস্ম ভাসানো হয় কাঁসাই নদীর ঘাটে ৷ এই ঘাটে প্রতি বছর শহরের সমস্ত দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন হয় ৷ সারা বছর বহু মানুষের সমাগম হয় মেদিনীপুর শহরের গান্ধিঘাটে৷
গান্ধিজির চিতাভস্ম ভাসানোর পর তৎকালীন মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব গান্ধিঘাট সাজানোর ব্যাবস্থা করে৷ 1952 সালে বসানো হয় বাপুজির আবক্ষ মূর্তি ৷ প্রতি বছর বিভিন্ন সময়ে এই গান্ধিমূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ ধীরে ধীরে মেদিনীপুর শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে গান্ধিঘাট ৷