মেদিনীপুর, 2 মে : কোয়ারানটিন সেন্টারের নাম করে ভুয়ো ভিডিয়ো পোস্ট করে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে , এই অভিযোগ তুলে সাংসদ তথা বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা করল জেলা পুলিশ। অভিযোগ, এই ভিডিয়োটিতে যে জায়গাটি দেখানো হচ্ছে সেটা ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটিন সেন্টার নয়। মানুষকে বিপথে পরিচালনা জন্যই এই ধরনের ভিডিয়ো। সাংসদের দ্বারা মানুষকে বিপথে পরিচালনা করলে তা বরদাস্ত করবে না পুলিশ প্রশাসন, জানানো হয়েছে এমনই।
এই বিতর্কের সূত্রপাত গত মঙ্গলবার ৷ দিলীপবাবু তাঁর ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন । ভাইরাল এই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল একসঙ্গে গাদাগাদি করে জেলার রোগীও তাঁদের আত্মীয় স্বজনদের রাখা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি ইনস্টিটিউশনাল সেন্টারে। তাছাড়াও ওই ভিডিয়োতে এও দেখা গিয়েচ্ছে যে রুমে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের রাখা হয়েছে সেই ঘরের নিকাশি ব্যবস্থাও খারাপ । ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছে নোংরা জল । আর সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই দিন কাটাতে হচ্ছে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের । এর থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন দিলীপবাবু ।
পাশাপশি মুখ্যমন্ত্রীকে দিলীপবাবু প্রশ্ন করেন যে "কোরোনা সংক্রমণ রোধে যেখানে জমায়েত এড়িয়ে চলতে বলা হচ্ছে সেখানে কী করে কোয়ারানটিন সেন্টারে এভাবে গাদাগাদি করে রোগীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে ।" এই বিষয়ে দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক জানিয়ে ছিলেন," দিলীপবাবু যিনি মেদিনীপুর জেলা সহ দাঁতনের সাংসদ তিনি এই দুঃসময়ে আসেননি মানুষের সঙ্গে দেখা করতে । তিনি কোনও দিনও খোঁজখবর নেননি এলাকার মানুষের। কিন্তু একটি বিতর্কিত ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে তিনি মানুষের কাছে অতি প্রিয় এবং সবার খোঁজ খবর নেন।'
এই ভিডিয়োটিকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন ," ভিডিয়োটি এখানকার নয়। এ হয়তো কোনও একটা সময় কোথাও একটা লজে বৃষ্টির জন্য বাইরের মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হয়েছিল আর সেই ভিডিয়োকে পোস্ট করে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন এই মহামারীর সময় মানুষ অসুস্থ অবস্থায় আছে ।" তিনি BJP সাংসদের উপর অভিযোগ তুলে বলেন , " এই ধরনের কুরুচিকর পুরানো কোনও ছবি তুলে তাঁকে পোস্ট করে এ সময় রাজনীতি করছেন। আদৌ তিনি সোনাকোনিয়া এবং দাঁতন কোথায় আছে সেটাই চেনেন না। এইটা শুধু তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে নয়, রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তাঁর এই ধরনের পোস্ট করেছেন। এছাড়া তিনি আরও অভিযোগ তোলেন যে ,"ওঁরা পয়সা দিয়ে আগেও এরকম ভিডিয়ো করেছিলেন।"
এই বিষয়ে বার বার সাংসদকে ফোন করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷ BJP জেলা সভাপতি সমিত দাস বলেছিলেন," ভিডিয়োটি সত্য। রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ যে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন সেটা সঠিক। কিন্তু রাজ্যের শাসক দল ও পুলিশ প্রশাসন এটা জানার পর সরিয়ে দেবে বা দিয়েছে ।"
যদিও পুলিশের সূত্রে খবর, সেই দিন রোগী ও তাঁদের সহযোগীদের মিলিয়ে ২৪ এবং ২৫ এপ্রিল রাতে হাজারের বেশি মানুষ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় দাঁতন থানার অন্তর্গত এলাকায় এসে হাজির হন। অ্যাম্বুলেন্স আটকে পড়ায় হেঁটে হেঁটে এসেছিলেন। সেই সময় ওখানকার পুলিশ প্রশাসন সেই মানুষদেরকে বাঁচাতে তড়িঘড়ি একটি হোটেলে থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি পরিবহনের দ্বারা তাঁদের পরে সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানো হয়েছে ৷
অভিযোগ, এই ভিডিয়োটিতে যে জায়গাটিকে দেখানো হচ্ছে যেটাকে সাংসদ ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটিন সেন্টার বলছেন সেটা সঠিক নয় । এটা কোন ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারানটিন সেন্টার নয়। তাই সাংসদ জেলাবাসীকে ভুল পথে চালিত করছেন ৷ যা বরদাস্ত করা হবে না। বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন," আমরা ওই সাংসদের বিরুদ্ধে একটি FIR করে তদন্ত করছি ।"