মেদিনীপুর, 19 সেপ্টেম্বর : আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা ৷ তারপরই শুরু হয়ে যাবে দেবীপক্ষ ৷ আর সেই কারণেই দম ফেলার সময় নেই চিত্রশিল্পী সুজিত চক্রবর্তীর ৷ গত কয়েক বছর ধরে তিনিই মেদিনীপুরের মির্জা বাজারের চক্রবর্তী বাড়ির পুজোর দেবীমূর্তি অঙ্কনের দায়িত্বে রয়েছেন ৷ তাই ব্যস্ততা তুঙ্গে ! ভাবছেন দেবীমূর্তি ‘অঙ্কন’ কেন ? কারণ বংশপরম্পরায় চলে আসা এই দুর্গা আরাধনায় মূর্তি বা প্রতিমা গড়ার নিয়ম নেই ৷ পুজো শুরু হয়েছিল পটে আঁকা ছবি দিয়ে ৷ এখনও সেই ধারা অব্যাহত ৷
আরও পড়ুন : Tea Seller Sister : জীবনযুদ্ধে অজেয় মান্টু-ঝর্নারা যেন সত্যিকারের দুর্গা !
মেদিনীপুর শহরের মির্জা বাজারের রাখাল চক্রবর্তীর বাড়ির পরিচিতি আছে ভালই ৷ পরিবারের সদস্য আভারানি চক্রবর্তী জানালেন, তাঁদের বাড়ির এই পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় 150 বছর আগে, রাজ আমলে ৷ কিন্তু, প্রতিমা গড়ার অনুমতি এই পরিবারের ছিল না ৷ তাই পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুটের পটচিত্রে পুজো শুরু করেন রাখাল চক্রবর্তী ৷ তিনি নিজেই ছিলেন রাজপুরোহিত ৷ এই পুজোর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে ৷ যার মধ্যে আমিষ ব্যঞ্জনে মায়ের ভোগ নিবেদন থেকে প্রসাদে ল্যাটা মাছ পোড়া অন্যতম ৷
এই বাড়ির দুর্গা সিংহবাহিনী ৷ আর পাঁচটা জায়গার মতোই পুজো শুরু হয় ষষ্ঠীতে ৷ ওই দিন পুজোর প্রধান নৈবেদ্য হল ভাত, রুই মাছের ঝোল-সহ পঞ্চব্যঞ্জন ৷ এরপর সপ্তমীর ভোরে সাতটি কুয়োর জল দিয়ে অভিষেক করিয়ে মাকে মন্দিরে ঢোকানো হয় ৷ সকল সন্তানের মঙ্গল কামনায় বলির প্রচলন থাকলেও চক্রবর্তী বাড়ির পুজোয় ছাগল বা অন্য কোনও পশুর বলি দেওয়া হয় না ৷ বদলে চালকুমড়ো বলি দিয়ে নিয়মরক্ষা করা হয় ৷ সপ্তমী থেকে নবমী টানা তিনদিন ধরে চলে মহাযজ্ঞ ৷ অষ্টমীতে 108টি নীলপদ্ম অর্পণ করে মায়ের পুজো হয় ৷ নবমীর দিন মাকে নিরামিষ অন্নের ভোগ দেওয়া হয় ৷ সবশেষে দশমীতে ফল-মূল ও ফুল দিয়ে পুজো করা হয় ৷ এই দিনই মাকে নৈবেদ্য হিসাবে ঝিঙ্গে পোড়া আর ল্যাটা মাছ, শোল মাছ পোড়া অর্পণ করা হয় ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja : উৎসবের আবহে ভাতা চাইছেন রায়গঞ্জের মৃৎশিল্পীরা, সায় বিজেপি-র
প্রথা মেনে পটের দুর্গার বিসর্জন হয় দশমীতেই ৷ রাজ আমলে মহা ধুমধাম করে বিসর্জন করা হত ৷ ঝলমলে শোভাযাত্রায় থাকত সুসজ্জিত হস্তিবাহিনী ৷ আজ আর অবশ্য বিসর্জনে হাতি আনা হয় না ৷ তবে ঢাক, ঢোল বাজিয়ে মাকে নিরঞ্জন করা হয় ৷ গত 150 বছর ধরে এভাবেই পুজোয় কিছু কিছু পরিবর্তন এসেছে ৷ সময়ের ধারা বেয়েই পট আঁকার দায়িত্ব বর্তেছে চিত্রশিল্পী সুজিত চক্রবর্তীর উপর ৷ ঐতিহ্য মেনে সেই কর্তব্য পালন করলেও সুজিতের আঁকায় আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে ৷
বড় কাজ ৷ হাতে সময় বাঁধা-ধরা ৷ তাই জোরকদমে তুলি চালিয়ে যাচ্ছেন সুজিত ৷ কিছুদিন পর তাঁর এই শিল্পকর্মেই প্রথা মেনে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন চক্রবর্তী বাড়ির পূজারীরা ৷ আর উৎসবের আবহে মাতবে গোটা পরিবার ৷ আপাতত অপেক্ষা সেই দিনগুলোরই ৷