ETV Bharat / state

কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে বিক্রি কমেছে কাগজের, সংকটে বিক্রেতারা

author img

By

Published : Aug 24, 2020, 2:36 PM IST

কোরোনা আতঙ্কে বাড়িতে কাগজ নেওয়া বন্ধ করেছে অনেকেই ৷ যার জেরে সংকটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েক হাজার কাগজ বিক্রেতা ৷ কাজ হারানোর আশঙ্কায় দিন গুনছে তারা ৷

paper hawker
কাগজ বিক্রেতা

মেদিনীপুর, 24 অগাস্ট : কাগজ পড়তে পড়তে চায়ে চুমুক ৷ একটা সময় কাগজ ছাড়া গৃহকর্তার দিন যেন শুরুই হত না ৷ আর এখন, সেই ছবি প্রায় অমিল ৷ কোরোনা সংক্রমণের আতঙ্কে কাগজ নয়, বরং মোবাইলেই গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলিতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে বেশিরভাগজন ৷ ফলে বিক্রি কমেছে কাগজের ৷ যার জেরে সংকটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েক হাজার কাগজ বিক্রেতা ৷ কাজ হারানোর আশঙ্কায় দিন গুনছে তারা ৷

কেউ 25 তো কেউ 30 বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ অনেক শিক্ষিত যুবক রয়েছে যারা এই কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালায় ৷ অনেক বেকার যুবক বাড়ি বাড়ি কাগজ বিক্রি করে হাত খরচের পাশাপাশি সংসার সামলায় ৷ ডিজিটাইজ়েশনের জেরে বিগত কয়েকবছর ধরে এমনিতেই ক্ষতির মুখে কাগজ বিক্রির ব্যবসা ৷ তার উপর খাঁড়ার ঘা কোরোনা, লকডাউন ৷

paper hawkers
কোরোনার জেরে কমেছে বিক্রি, সংকটে কাগজ বিক্রেতারা

কোরোনা আতঙ্কে বাড়িতে কাগজ নেওয়া বন্ধ করেছে অনেকেই ৷ রণজিৎ মণ্ডল ৷ প্রায় 30 বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ বললেন, "ফ্ল্যাটের আবাসিকরা আগে কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ৷ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে ৷ আমরা যতই বলি না কেন কম্পানি থেকে আসার পর সরাসরি আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দি ৷ কিন্তু কোরোনার ভয়ে মানুষ কিনছে না ৷ আগে মাসিক গ্রাহক অনেক ছিল ৷ খুচরো বিক্রিও ভালো হত ৷ কিন্তু এখন বিক্রি অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে ৷ দিনযাপন করা কষ্টের হয়ে গেছে ৷ ধার দেনা হয়ে যাচ্ছে৷"

আরও এক কাগজ বিক্রেতা অরূপকুমার দে বলেন, "বিক্রিই নেই ৷ এক, মানুষ তো লকডাউনের কারণে বাইরে বের হতে পারছে না ৷ বিক্রি হবে কী করে? দুই, অনেকে আছেন কাগজ বাড়িতে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন ৷ " বসন্ত পণ্ডিত ৷ 1977 সাল থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ বলেন, "গ্রাহকরা বলছেন বাড়িতে বাচ্চা আছে ৷ বয়স্ক মানুষ আছে ৷ কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে কাগজ কিনছেন না ৷ অনেকে বলছেন পুজো অবধি কাগজ দেওয়া বন্ধ রাখতে ৷ "

একই সুর মিলন দাসের গলাতেও ৷ ডিজিটাইজ়েশনের জন্য অনেক ছোটো, বড় সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে । সোশাল মিডিয়া, ই-পেপার, অ্যাপের দাপটে এমনিতেই কমে গেছে কাগজের বিক্রি ৷ তার উপর কোরোনা সংক্রমণের জেরে অনেকেই কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ৷ আগের মতো আর টাকা রোজগার হয় না ৷ আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন মিলন ।

কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে বিক্রি কমেছে কাগজের, কাজ হারানোর আশঙ্কায় পশ্চিম মেদিনীপুরের কাগজ বিক্রেতারা

মাঝরাতে ট্রেনে করে কাগজ এসে পৌঁছাত মেদিনীপুর স্টেশনে ৷ ট্রেন থেকে নামার পর সেই কাগজের ভাগবাটোয়ারা হত । কে কোন অঞ্চলে বা কোন জ়োনে কাগজ বিলি করবে তা ঠিক হত ৷ কিন্তু মার্চ মাসের পর থেকে ছবিটাই বদলে গেছে ৷ লকডাউনের জন্য বন্ধ স্বাভাবিক ট্রেন পরিষেবা ৷ এখন গাড়ি করে আসে কাগজ ৷ সীমিত সংখ্যক কাগজ আসায় দামও বেড়ে গেছে ৷ এখন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে ভোররাতে কাগজের ভাগবাটোয়ারা হয় ৷ এ বিষয়ে কাগজ বিক্রেতাদের এজেন্সির মালিক অসীম ত্রিপাঠী বলেন, "আগে 14 টা কাগজ আসত ৷ এখন 11 টা আসছে ৷ কাগজের সংখ্যাও অর্ধেক হয়ে গেছে ৷ কারণ আগে ট্রেনে করে কাগজ আসত ৷ আর এখন গাড়িতে আসছে ৷ গাড়িতে পাঠানো খরচ সাপেক্ষ তাই কয়েকটি কাগজ আসছে না ৷ " অসীমবাবু আরও জানান, সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই এখন কাগজ কিনছেন না ৷ অনেক দিনের পুরোনো গ্রাহকরাও কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ৷

এই পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন অসীমবাবুরা ৷ বলেন, "আমরা জেলা শাসককে জানিয়েছিলাম ৷ স্থানীয় বিধায়ককেও জানিয়েছিলাম ৷ অনুরোধ করেছিলাম লকডাউনে অন্তত হকারদের জন্য কার্ড করে দিন যাতে পুলিশ না ধরে ৷ কারণ হ্যান্ডেলে কাগজ না থাকলে পুলিশও জেরা করে ৷ এলাকায় ঢুকতে দেয় না ৷ " জানান, প্রশাসনের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৷

মেদিনীপুর, 24 অগাস্ট : কাগজ পড়তে পড়তে চায়ে চুমুক ৷ একটা সময় কাগজ ছাড়া গৃহকর্তার দিন যেন শুরুই হত না ৷ আর এখন, সেই ছবি প্রায় অমিল ৷ কোরোনা সংক্রমণের আতঙ্কে কাগজ নয়, বরং মোবাইলেই গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলিতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে বেশিরভাগজন ৷ ফলে বিক্রি কমেছে কাগজের ৷ যার জেরে সংকটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েক হাজার কাগজ বিক্রেতা ৷ কাজ হারানোর আশঙ্কায় দিন গুনছে তারা ৷

কেউ 25 তো কেউ 30 বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ অনেক শিক্ষিত যুবক রয়েছে যারা এই কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালায় ৷ অনেক বেকার যুবক বাড়ি বাড়ি কাগজ বিক্রি করে হাত খরচের পাশাপাশি সংসার সামলায় ৷ ডিজিটাইজ়েশনের জেরে বিগত কয়েকবছর ধরে এমনিতেই ক্ষতির মুখে কাগজ বিক্রির ব্যবসা ৷ তার উপর খাঁড়ার ঘা কোরোনা, লকডাউন ৷

paper hawkers
কোরোনার জেরে কমেছে বিক্রি, সংকটে কাগজ বিক্রেতারা

কোরোনা আতঙ্কে বাড়িতে কাগজ নেওয়া বন্ধ করেছে অনেকেই ৷ রণজিৎ মণ্ডল ৷ প্রায় 30 বছর ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ বললেন, "ফ্ল্যাটের আবাসিকরা আগে কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ৷ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে ৷ আমরা যতই বলি না কেন কম্পানি থেকে আসার পর সরাসরি আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দি ৷ কিন্তু কোরোনার ভয়ে মানুষ কিনছে না ৷ আগে মাসিক গ্রাহক অনেক ছিল ৷ খুচরো বিক্রিও ভালো হত ৷ কিন্তু এখন বিক্রি অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে ৷ দিনযাপন করা কষ্টের হয়ে গেছে ৷ ধার দেনা হয়ে যাচ্ছে৷"

আরও এক কাগজ বিক্রেতা অরূপকুমার দে বলেন, "বিক্রিই নেই ৷ এক, মানুষ তো লকডাউনের কারণে বাইরে বের হতে পারছে না ৷ বিক্রি হবে কী করে? দুই, অনেকে আছেন কাগজ বাড়িতে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন ৷ " বসন্ত পণ্ডিত ৷ 1977 সাল থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ বলেন, "গ্রাহকরা বলছেন বাড়িতে বাচ্চা আছে ৷ বয়স্ক মানুষ আছে ৷ কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে কাগজ কিনছেন না ৷ অনেকে বলছেন পুজো অবধি কাগজ দেওয়া বন্ধ রাখতে ৷ "

একই সুর মিলন দাসের গলাতেও ৷ ডিজিটাইজ়েশনের জন্য অনেক ছোটো, বড় সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে । সোশাল মিডিয়া, ই-পেপার, অ্যাপের দাপটে এমনিতেই কমে গেছে কাগজের বিক্রি ৷ তার উপর কোরোনা সংক্রমণের জেরে অনেকেই কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ৷ আগের মতো আর টাকা রোজগার হয় না ৷ আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন মিলন ।

কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে বিক্রি কমেছে কাগজের, কাজ হারানোর আশঙ্কায় পশ্চিম মেদিনীপুরের কাগজ বিক্রেতারা

মাঝরাতে ট্রেনে করে কাগজ এসে পৌঁছাত মেদিনীপুর স্টেশনে ৷ ট্রেন থেকে নামার পর সেই কাগজের ভাগবাটোয়ারা হত । কে কোন অঞ্চলে বা কোন জ়োনে কাগজ বিলি করবে তা ঠিক হত ৷ কিন্তু মার্চ মাসের পর থেকে ছবিটাই বদলে গেছে ৷ লকডাউনের জন্য বন্ধ স্বাভাবিক ট্রেন পরিষেবা ৷ এখন গাড়ি করে আসে কাগজ ৷ সীমিত সংখ্যক কাগজ আসায় দামও বেড়ে গেছে ৷ এখন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে ভোররাতে কাগজের ভাগবাটোয়ারা হয় ৷ এ বিষয়ে কাগজ বিক্রেতাদের এজেন্সির মালিক অসীম ত্রিপাঠী বলেন, "আগে 14 টা কাগজ আসত ৷ এখন 11 টা আসছে ৷ কাগজের সংখ্যাও অর্ধেক হয়ে গেছে ৷ কারণ আগে ট্রেনে করে কাগজ আসত ৷ আর এখন গাড়িতে আসছে ৷ গাড়িতে পাঠানো খরচ সাপেক্ষ তাই কয়েকটি কাগজ আসছে না ৷ " অসীমবাবু আরও জানান, সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই এখন কাগজ কিনছেন না ৷ অনেক দিনের পুরোনো গ্রাহকরাও কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন ৷

এই পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন অসীমবাবুরা ৷ বলেন, "আমরা জেলা শাসককে জানিয়েছিলাম ৷ স্থানীয় বিধায়ককেও জানিয়েছিলাম ৷ অনুরোধ করেছিলাম লকডাউনে অন্তত হকারদের জন্য কার্ড করে দিন যাতে পুলিশ না ধরে ৷ কারণ হ্যান্ডেলে কাগজ না থাকলে পুলিশও জেরা করে ৷ এলাকায় ঢুকতে দেয় না ৷ " জানান, প্রশাসনের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.