মেদিনীপুর, 7 অগস্ট : পশ্চিম মেদিনীপুরে আজও জেলাশাসকের বাংলোর নাম থেকে গিয়েছে হেস্টিংস হাউস নামেই ৷ অথচ গোটা দেশ তথা বাংলার পাশাপাশি এই বিপ্লবী শহর মেদিনীপুরেও স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন কত বিপ্লবী । তাই সাধারণ মানুষ এবার সেই শহিদ বিপ্লবীদের নামে জেলাশাসকের বাংলোর নামকরণ চাইছেন ৷ সেই তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রীও ৷ তাঁরা সবাই চাইছেন নাম পরিবর্তন হোক হেস্টিং হাউসের । পরিবর্তে রাখা হোক অখণ্ড মেদিনীপুরের আত্মত্যাগী শহিদের নাম ।
মেদিনীপুরের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে রয়েছে বিপ্লবীদের বৈপ্লবিক কর্মধারা, যা গোটা ইংরেজ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ৷ ক্ষুদিরাম বসু, দীনেশ গুপ্ত, মৃগেন দত্ত, অনাথবন্ধু পাঁজা, নির্মলজীবন ঘোষের মতো বিপ্লবী প্রাণ দিয়েছেন এই মাটিতেই ৷ অবিভক্ত মেদিনীপুরে বৈপ্লবিক চিন্তাধারার বিকাশ, তার অভ্যুত্থান এবং ইংরেজদের বিতাড়ন এইসব বিপ্লবীদের প্রধান কাজ হয়ে উঠেছিল ৷ অনেকেই ফাঁসির দড়ি গলায় ঝুলিয়ে কম বয়সে যেমন মৃত্যুবরণ করেছেন, অনেকেই আবার বিষ খেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন দেশের জন্য । এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন বহু বিপ্লবী ৷ সেই সংখাটাও কম নয় ।
ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতের গর্ভনর জেনারেল হিসাবে 1774 থেকে 1785 সাল পর্যন্ত দায়িত্ব সামলেছিলেন । তাঁর শাসনকালেই মেদিনীপুরে তৈরি হয় একটি প্রশাসনিক ভবন ৷ নাম হয় হেস্টিংস হাউস । সেই থেকেই বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যালয় চলে আসছে এই ভবনে ৷ বর্তমানে সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের বাংলো ৷ স্বাধীনতার 74 বছর পরও এই ভবনের নাম রয়ে গিয়েছে এক ইংরেজের নামেই ৷ এবার সেই বাংলোরই নাম বদলের দাবি উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে ৷ তাঁদের দাবি, কোনও শহিদের নামে তার নামকরণ হোক ৷
কবি ও স্বাস্থ্যকর্মী অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় বলেন, "মেদিনীপুরে বহু বিপ্লবীর জন্ম । বহু বিপ্লবী নিজের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন ৷ কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়ে কেন ইংরেজদের নামে এখনও জ্বলজ্বল করে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ৷ যদি সেই বাংলোর নাম পরিবর্তন করে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামে রাখা যায় তাহলে খুবই ভাল হয় ।"
একই ভাবে সংগীত শিল্পী অর্ণব সেন বলেন, "বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর হল এই মেদিনীপুর । বহু বিপ্লবীর জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন ৷ তারপরও আমাদের প্রজন্ম সেই ইংরেজদের চিহ্ন বহন করে চলছি । এর নাম পরিবর্তন করে আমরা যেকোনও শহিদের নাম দিতেই পারি ।"
স্কুল শিক্ষক বীরেন পাল বলেন, "ইংরেজরা চলে গিয়েছে, কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই এখনও সেই ইংরেজদের দাসত্ব বহন করে চলেছি আমরা । তাই আমার দাবি, অবিলম্বে এই ভবনের নাম পরিবর্তন করা হোক ।"
এরই মধ্যে ইংরেজদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল গবেষক অরিন্দম ভৌমিক । তিনি দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ৷ মেদিনীপুরের বিভিন্ন পুরানো গ্রন্থ এবং তথ্য নিয়ে লেখালেখি করা অরিন্দম বলেন, "ইংরেজদের অত্যাচার চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই ওয়ারেন হেস্টিংস গর্ভনর হিসাবে বহু ভাল কাজও করেছেন । সেই প্রেক্ষিতে বলা চলে ওই বাংলোর নাম হেস্টিংস হাউস থাকলে খুব একটা সম্মান নষ্ট হবে বলে মনে হয় না । তবে কোনও শহিদের নামে ভবনের নাম রাখলে তাও মন্দ হয় না ।"
এনিয়ে সরকারি আধিকারিকরা কোনও বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া অবশ্য বলেন, "এই নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে । অনেক দাবিও উঠেছে । এটার একটা ঐতিহাসিক স্মরণীয় ব্যাপার রয়েছে । আরেকটা রয়েছে স্বাধীনতার টানে পরিবর্তনের টান । আশা করি মানুষ বুঝতে পারবেন, আগামী দিনে পরিবর্তন হবে ।" তিনি শেষে এও বলেন, "হোস্টিংস-এর নাম ইতিহাসের পাতায় থাক কিন্তু বিল্ডিংটার নাম নতুন করে হোক ।"
বাংলা তথা অখণ্ড মেদিনীপুরের বিপ্লবীরা আজও অবহেলিত । এখনও বহু বিপ্লবীর বাড়ি সংরক্ষণের অভাবে পড়ে রয়েছে ৷ সেদিকে নজর নেই সরকারের ৷ কিন্তু ইংরেজ আমলের বিভিন্ন ভবন এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে এখানে সেখানে । মেদিনীপুর শহরেও সেভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে হেস্টিংস হাউস ৷ তাই মেদিনীপুরবাসী চাইছেন অবিলম্বে, তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হোক শহিদের নামে ।
আরও পড়ুন : স্বাধীনতার 74 বছর পরেও অবহেলায় বসন্তকুমার বিশ্বাসের ভিটে