ETV Bharat / state

Deaf and Dumb brother sister : মালিয়াড়ায় মূক ও বধির ভাইবোনের দিন কাটে ভিক্ষায়, জোটেনি সরকারি সাহায্য

দুই ভাই-বোন, কেউই কানে শুনতে পান না, কথাও বলতে পারেন না ৷ মেদিনীপুরে কালগাঙ মালিয়াড়ার বাসিন্দা এঁদের দু'জনের রোজগার বলতে ভাই অজিতের ভিক্ষেয় পাওয়া অর্থ ( deaf and dumb youth has been begging to make ends meet of family) ৷ কোনও সরকারি সাহায্য আসেনি এঁদের দুয়ারে ৷

Usha Rana and Ajit Rana
ঊষা রানা ও অজিত রানা
author img

By

Published : Dec 29, 2021, 8:50 PM IST

মেদিনীপুর, 29 ডিসেম্বর : এ এক অন্য মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক কাহিনি ৷ মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে কালগাঙ মালিয়াড়ায় প্রায় 40 বছর বা তার কিছুটা বেশি সময় ধরে থাকেন ভাই অজিত রানা আর বোন ঊষা রানা । দু'জনে মূক-বধির এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম । ঊষা রানার দিন কাটে রাস্তাঘাটে, এলাকার আনাচে কানাচে ৷ ভাই সারাদিন ঘুরে বেড়ায় ভিক্ষে করতে । সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত যা জোটে, তাতেই কোনওক্রমে চলে সংসার । শারীরিক ভাবে অন্যদের থেকে আলাদা হলেও এঁরা পাননি কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধে ৷ খোঁজ নেননি কোনও নির্বাচিত সরকারি প্রতিনিধি (Deaf and Dumb brother, sister face problem) ।

জানা গিয়েছে, কালগাঙ মালিয়াড়ায় এক সময় আকলু রানা নামের এক দম্পতির 12টি বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে । এদের মধ্যে 6 জন ছেলে, 6 জন মেয়ে । তাঁদের মধ্যে দুই ভাই-বোন মূক, বধির আর বিশেষ ভাবে সক্ষম । বাবা-মা মারা গেলে আরও কয়েকজন বোনের মৃত্যু হয় ৷ তখন বাকিরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম থাকায় যে যার মতো নিজের পরিবার নিয়ে এঁদের থেকে আলাদা হয়ে যায় ৷

আর ভাঙা টালি ও ময়লা ধুলোয় পড়ে থাকে মূক-বধির ঊষা আর অজিত রানা ৷ ভাই অজিত সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন পেটের তাগিদে ৷ কখনও মেদিনীপুর তো কখনও খড়্গপুর, কখনও বা ভিক্ষের আশায় ভিন জেলায় । অজিত বিয়ে করেছেন । পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে । স্ত্রী অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন ৷

আরও পড়ুন : Youth Chained in Medinipur : 22 বছর পেরিয়েও শিকলবন্দি জীবন মেদিনীপুরের শাহাজানের

পশ্চিম মেদিনীপুরে দুয়ারে সরকার, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান একাধিক নেতা নেত্রী, অভিনেত্রী বিধায়ক দাবাং পুলিশ অফিসার থাকা সত্ত্বেও সরকারি উদাসীনতায় ধুঁকছে এই পরিবার । কোনদিন আধপেটা, কোনদিন না খেয়েই দিন কাটে সকলের । ভাই-বোন মূক ও বধির হওয়ায় সরকারি সাহায্যের কথা বলতে পারেন না । ভাইয়ের কোনও ভাবে আধার কার্ড হলেও, বোনের আজও তা হয়ে ওঠেনি ৷ নেই ভোটার কার্ড । ফলে সরকারি সাহায্যের বাইরেই রয়ে গিয়েছে পরিবার ।

এই দিন অজিতের দাদা তরুণ রানা জানান, অজিত ও বোন ঊষা ছোট থেকে মূক ও বধির । এছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ নয় ৷ ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না ৷ ভাই অজিতের ভিক্ষের রোজগারে কোনওক্রমে পেট চলে এই পাঁচজনের । দাদা বলেন, "আমি লেবারের কাজ করি এবং আমারও পরিবার রয়েছে ৷ তাই আমিও তাদের সাহায্য করে উঠতে পারিনি । বহুবার নেতা, মন্ত্রী ও সরকারি আবেদন-নিবেদন করেছি ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রকল্প পাইনি ৷"

মালিয়াড়ায় মূক ও বধির ভাই বোনের কাছে পৌঁছায়নি কোনও সরকারি সাহায্য

অজিত রানার স্ত্রী লক্ষ্মী রানারও বক্তব্য একই । তিনি বলেন, "স্বামীর ভিক্ষা করে দিন কাটে ৷ আমি লোকের বাড়িতে রান্না করি ৷ দুপুরে এসে দু'টি ভাত ফুটিয়ে রান্না করে খেতে দিই এই ভাই-বোনকে । আজ পর্যন্ত সরকারি কোনও সাহায্য, প্রকল্পের সুবিধা মেলেনি ।" বহু মন্ত্রী, নেতা বিধায়ক সাংসদরা এই ভাই-বোনেদের পাশ দিয়ে যাতায়াত করেছেন ৷ কিন্তু কেউ ফিরে তাকাননি তাঁদের দিকে ।

প্রতিবেশী শেখ আফসারও জানালেন, মূক-বধির বোন রাস্তায় নর্দমার ধারে পড়ে থাকেন ৷ দিন কাটছে ভিক্ষা করে । তিনিও সরকারি প্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করার কথা জানালেন ৷

আরও পড়ুন : Etv Bharat News Impact : আর নয় শিকলবন্দি জীবন, সাহায্যের বার্তা নিয়ে শাহাজানের বাড়ি গেলেন প্রশাসনিক কর্তারা

এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের মারা গিয়েছেন ৷ পাশের বুথের পঞ্চায়েত সদস্য নিরঞ্জন হালদার বলেন, "এর আগে ওই পরিবার খেতে পেত না ৷ রাস্তার ধারে পড়ে পড়ে দিন কাটে । ওর বাবা বহুবার ভাতার আবেদন করেছিল ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার তা দিতে পারেনি । অকালে মারা যান ঊষা-অজিতের বাবা । এই অভিযোগ আমরা অনেকবার শুনেছি । আমরা বিষয়টা উপরমহলে জানিয়ে ব্যবস্থা নেব দ্রুত।"

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে বারবার একাধিক প্রকল্পের সুবিধা ঘোষণা করেছেন রাজ্যবাসীর জন্য । বিশেষত পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ গরিব মানুষের জন্য ৷ কেন এই ধরনের পরিবার এখনও সরকারি প্রকল্প থেকে বাদ গিয়েছে, প্রশ্ন সেটা । সম্প্রতি এই মালিয়াড়াতে 22 বছরের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য শিকলে বেঁধে রাখার ঘটনা সামনে আসে । আর সেই খবর ইটিভি ভারতে প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন । তড়িঘড়ি তার কাছে সরকারি সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল ।

মেদিনীপুর, 29 ডিসেম্বর : এ এক অন্য মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক কাহিনি ৷ মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে কালগাঙ মালিয়াড়ায় প্রায় 40 বছর বা তার কিছুটা বেশি সময় ধরে থাকেন ভাই অজিত রানা আর বোন ঊষা রানা । দু'জনে মূক-বধির এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম । ঊষা রানার দিন কাটে রাস্তাঘাটে, এলাকার আনাচে কানাচে ৷ ভাই সারাদিন ঘুরে বেড়ায় ভিক্ষে করতে । সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত যা জোটে, তাতেই কোনওক্রমে চলে সংসার । শারীরিক ভাবে অন্যদের থেকে আলাদা হলেও এঁরা পাননি কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধে ৷ খোঁজ নেননি কোনও নির্বাচিত সরকারি প্রতিনিধি (Deaf and Dumb brother, sister face problem) ।

জানা গিয়েছে, কালগাঙ মালিয়াড়ায় এক সময় আকলু রানা নামের এক দম্পতির 12টি বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে । এদের মধ্যে 6 জন ছেলে, 6 জন মেয়ে । তাঁদের মধ্যে দুই ভাই-বোন মূক, বধির আর বিশেষ ভাবে সক্ষম । বাবা-মা মারা গেলে আরও কয়েকজন বোনের মৃত্যু হয় ৷ তখন বাকিরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম থাকায় যে যার মতো নিজের পরিবার নিয়ে এঁদের থেকে আলাদা হয়ে যায় ৷

আর ভাঙা টালি ও ময়লা ধুলোয় পড়ে থাকে মূক-বধির ঊষা আর অজিত রানা ৷ ভাই অজিত সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন পেটের তাগিদে ৷ কখনও মেদিনীপুর তো কখনও খড়্গপুর, কখনও বা ভিক্ষের আশায় ভিন জেলায় । অজিত বিয়ে করেছেন । পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে । স্ত্রী অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন ৷

আরও পড়ুন : Youth Chained in Medinipur : 22 বছর পেরিয়েও শিকলবন্দি জীবন মেদিনীপুরের শাহাজানের

পশ্চিম মেদিনীপুরে দুয়ারে সরকার, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান একাধিক নেতা নেত্রী, অভিনেত্রী বিধায়ক দাবাং পুলিশ অফিসার থাকা সত্ত্বেও সরকারি উদাসীনতায় ধুঁকছে এই পরিবার । কোনদিন আধপেটা, কোনদিন না খেয়েই দিন কাটে সকলের । ভাই-বোন মূক ও বধির হওয়ায় সরকারি সাহায্যের কথা বলতে পারেন না । ভাইয়ের কোনও ভাবে আধার কার্ড হলেও, বোনের আজও তা হয়ে ওঠেনি ৷ নেই ভোটার কার্ড । ফলে সরকারি সাহায্যের বাইরেই রয়ে গিয়েছে পরিবার ।

এই দিন অজিতের দাদা তরুণ রানা জানান, অজিত ও বোন ঊষা ছোট থেকে মূক ও বধির । এছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ নয় ৷ ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না ৷ ভাই অজিতের ভিক্ষের রোজগারে কোনওক্রমে পেট চলে এই পাঁচজনের । দাদা বলেন, "আমি লেবারের কাজ করি এবং আমারও পরিবার রয়েছে ৷ তাই আমিও তাদের সাহায্য করে উঠতে পারিনি । বহুবার নেতা, মন্ত্রী ও সরকারি আবেদন-নিবেদন করেছি ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রকল্প পাইনি ৷"

মালিয়াড়ায় মূক ও বধির ভাই বোনের কাছে পৌঁছায়নি কোনও সরকারি সাহায্য

অজিত রানার স্ত্রী লক্ষ্মী রানারও বক্তব্য একই । তিনি বলেন, "স্বামীর ভিক্ষা করে দিন কাটে ৷ আমি লোকের বাড়িতে রান্না করি ৷ দুপুরে এসে দু'টি ভাত ফুটিয়ে রান্না করে খেতে দিই এই ভাই-বোনকে । আজ পর্যন্ত সরকারি কোনও সাহায্য, প্রকল্পের সুবিধা মেলেনি ।" বহু মন্ত্রী, নেতা বিধায়ক সাংসদরা এই ভাই-বোনেদের পাশ দিয়ে যাতায়াত করেছেন ৷ কিন্তু কেউ ফিরে তাকাননি তাঁদের দিকে ।

প্রতিবেশী শেখ আফসারও জানালেন, মূক-বধির বোন রাস্তায় নর্দমার ধারে পড়ে থাকেন ৷ দিন কাটছে ভিক্ষা করে । তিনিও সরকারি প্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করার কথা জানালেন ৷

আরও পড়ুন : Etv Bharat News Impact : আর নয় শিকলবন্দি জীবন, সাহায্যের বার্তা নিয়ে শাহাজানের বাড়ি গেলেন প্রশাসনিক কর্তারা

এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের মারা গিয়েছেন ৷ পাশের বুথের পঞ্চায়েত সদস্য নিরঞ্জন হালদার বলেন, "এর আগে ওই পরিবার খেতে পেত না ৷ রাস্তার ধারে পড়ে পড়ে দিন কাটে । ওর বাবা বহুবার ভাতার আবেদন করেছিল ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার তা দিতে পারেনি । অকালে মারা যান ঊষা-অজিতের বাবা । এই অভিযোগ আমরা অনেকবার শুনেছি । আমরা বিষয়টা উপরমহলে জানিয়ে ব্যবস্থা নেব দ্রুত।"

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে বারবার একাধিক প্রকল্পের সুবিধা ঘোষণা করেছেন রাজ্যবাসীর জন্য । বিশেষত পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ গরিব মানুষের জন্য ৷ কেন এই ধরনের পরিবার এখনও সরকারি প্রকল্প থেকে বাদ গিয়েছে, প্রশ্ন সেটা । সম্প্রতি এই মালিয়াড়াতে 22 বছরের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য শিকলে বেঁধে রাখার ঘটনা সামনে আসে । আর সেই খবর ইটিভি ভারতে প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন । তড়িঘড়ি তার কাছে সরকারি সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.