ETV Bharat / state

Pen Hospital: ডট কলমের যুগে ব্রিটিশ আমলের পেন হাসপাতালে কমেছে মানুষের ভিড়

ব্রিটিশ আমলে ফাউন্টেন বা নিব পেনের রমরমা থাকলেও বর্তমানে ডট পেনের বাজার ৷ পুরনো কিছু গ্রাহক নিয়ে এখনও অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে জঙ্গলমহলের একমাত্র নিব কলমে কালি ভরার দোকান পেন হাসপাতাল ৷

Pen Hospital
পেন হাসপাতাল
author img

By

Published : May 10, 2023, 9:30 PM IST

মেদিনীপুরের পেন হাসপাতালে কমেছে মানুষের ভিড়

মেদিনীপুর, 10 মে: অসুখ হলে তার চিকিৎসা করতে সবাই ছুটে যায় হাসপাতালে ৷ কিন্তু পেনকে কোনদিন হাসপাতালে যেতে দেখেছেন ? মেদিনীপুরে রয়েছে এমনই এক পেন হাসপাতাল ৷ যেখানে পেনের অসুখ সারাতে আসেন দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন ৷ ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি দোকানের নাম আসলে পেন হাসপাতাল ৷ সেখানে ফাউন্টেন বা নিব পেনে কালি ভরা থেকে সারানো সবই হয় ৷ তবে বর্তমানে ওইসব পেনের চলন বেশি না থাকায় কমেছে পেন হাসপাতালের বাজার ৷

সালটা 1932-33 ৷ সেই সময় আজকের মত ডটপেন ব্যবহৃত হত না ৷ সবাই ব্যবহার করত ফাউন্টেন পেন বা নিব পেন । আর এই পেনের কালি ভরা থেকে নিব পালটানো ছিল বিরাট ঝক্কির কাজ । তবে সবাই তাও ওই পেন ব্যবহার করত । তখন অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই পেনের অপারেশন বা সারানোর জন্য এক মাত্র দোকান ছিল পেন হাসপাতাল । যেটি শহরের স্কুল বাজারে রয়েছে ৷ সেই হাসপাতালে অধ্যাপক থেকে ছাত্র উকিল থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের শখের নিব পেনগুলি সারাতে আসতেন । পেনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হত বলে এই দোকানের নাম দেওয়া হয়েছিল পেন হাসপাতাল ।

এখন ওই দোকানের মালিক মেহেতাবউদ্দিন ৷ তাঁর দাদুর আমল থেকে এই ব্যবসা চলে আসছে । দাদুর পর বাবা রফিকউদ্দিন ব্যবসা চালিয়েছেন । এখন সেই পেন হাসপাতালের দায়িত্ব বছর 60-এর মেহতাবউদ্দিনের হাতে । তিন মেয়ে ও স্ত্রী বাড়িতে রয়েছেন । তাঁর সংসার চলে এই পেন হাসপাতাল থেকে । যদিও একসময় নাওয়া খাওয়া ভুলে হাসপাতালে পেনের ট্রিটমেন্ট করতে সময় ফুরিয়ে যেত । তৎকালীন সময়ে বিদেশি হিরো, লিলি, উইলিয়ান সন, হোয়াইট ফেদার-এর সঙ্গে দেশি শক্তি, বিনা, কমান্ডার, রাইটার-সহ একাধিক কলমের অস্ত্রোপচার করে বিরল থেকে বিরল পেনের রোগ সারিয়েছে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা দোকানিরা ।

আরও পড়ুন: সহজপাঠ-সঞ্চয়িতা এখন আর কেবল বিশ্বভারতীর নয়, তবে কতটা পাঠযোগ্য অন্য প্রকাশনার বইগুলি?

যদিও বর্তমানে সেই হাসপাতালে আর নিব পেনের রমরমা নেই । কালের নিয়মে হারিয়েছে সেই লেখার কলম । এখন তার জায়গায় চলে এসেছে ইউজ অ্যান্ড থ্রো এবং নামিদামি ডট পেন । তবে সেইসব কলমের এখনও ট্রিটমেন্ট হয় এই হাসপাতালে । বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র ক্ষেত্রে এবং অফিস আদালতেও এখনও নিব পেনের প্রচলন রয়েছে । সেখান থেকে গোটা কয়েক মানুষ আসেন পেন সারাতে ও কালি ভরতে ৷ তাই রমরমা না থাকলেও পেশাগত কারণে ব্যবসা কোনওক্রমে টিকিয়ে রেখেছে এই দোকানি ৷ পেনের সঙ্গে জীবিকা অর্জন করতে গ্যাস লাইটার সারাই-সহ একাধিক ব্যবসা তিনি করছেন সেখানে । তবে এখনও তিনি মনে মনে তৃপ্তি পান যখন জেলার-সহ বিভিন্ন জায়গার অভিজ্ঞ বয়স্ক মানুষেরা তাদের নিব পেন নিয়ে হাসপাতালে আসেন এবং পেনের ট্রিটমেন্ট করে নিয়ে যান তাঁর কাছ থেকে ।

দোকানের বর্তমান মালিক মেহতাবউদ্দিন বলেন, "বাপ ঠাকুরদার আমলের এই দোকান ৷ তখন ব্রিটিশ আমল । তখন এত কলমের রমরমা ছিল না । সকলে ফাউন্টেন বা এই নিব পেন ব্যবহার করত ৷ সাহেবরা একটু নিজেদের স্ট্যাটাস মেন্টেন করতেন । তখনকার সময় থেকেই পেন সারিয়ে আসছি আমরা । কালির দোয়াত পালটানো থেকে বিভিন্ন ধরনের রিফিল পরিবর্তন করি । তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখনও এই ফাউন্টেন পেনের সামান্য চাহিদা রয়েছে ৷ কিছু পুরানো গ্রাহক আসে । তাই আজও আমরা সেই হাসপাতালের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি ।"

যদিও এই পেন হাসপাতালের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন শিক্ষক বিশ্বজিৎ দাস ও অনির্বাণ দাসরা । তাঁরা বলেন, "একটা সময় ছিল যখন নিব পেনই সবাই ব্যবহার করত ৷ লেখার প্রধান মাধ্যম ছিল ওই পেন । সেই সময় কলমের কোনও সমস্যা হলেই ছুটে যেতে হয়েছে এই পেন হাসপাতালে । কিন্তু যুগের সঙ্গে পরিবর্তনে আজ হারিয়েছে সেই পেন ৷ সঙ্গে গুরুত্ব হারাচ্ছে ওই পেন হাসপাতালের । তবে এই নিব পেনের স্মৃতি সত্যিই সুন্দর ।"

আরও পড়ুন: বিরল স্নায়ুরোগ! খুদের চিকিৎসার খরচ 18 কোটি, আর্থিক সাহায্যের আবেদন পরিবারের

মেদিনীপুরের পেন হাসপাতালে কমেছে মানুষের ভিড়

মেদিনীপুর, 10 মে: অসুখ হলে তার চিকিৎসা করতে সবাই ছুটে যায় হাসপাতালে ৷ কিন্তু পেনকে কোনদিন হাসপাতালে যেতে দেখেছেন ? মেদিনীপুরে রয়েছে এমনই এক পেন হাসপাতাল ৷ যেখানে পেনের অসুখ সারাতে আসেন দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন ৷ ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি দোকানের নাম আসলে পেন হাসপাতাল ৷ সেখানে ফাউন্টেন বা নিব পেনে কালি ভরা থেকে সারানো সবই হয় ৷ তবে বর্তমানে ওইসব পেনের চলন বেশি না থাকায় কমেছে পেন হাসপাতালের বাজার ৷

সালটা 1932-33 ৷ সেই সময় আজকের মত ডটপেন ব্যবহৃত হত না ৷ সবাই ব্যবহার করত ফাউন্টেন পেন বা নিব পেন । আর এই পেনের কালি ভরা থেকে নিব পালটানো ছিল বিরাট ঝক্কির কাজ । তবে সবাই তাও ওই পেন ব্যবহার করত । তখন অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই পেনের অপারেশন বা সারানোর জন্য এক মাত্র দোকান ছিল পেন হাসপাতাল । যেটি শহরের স্কুল বাজারে রয়েছে ৷ সেই হাসপাতালে অধ্যাপক থেকে ছাত্র উকিল থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের শখের নিব পেনগুলি সারাতে আসতেন । পেনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হত বলে এই দোকানের নাম দেওয়া হয়েছিল পেন হাসপাতাল ।

এখন ওই দোকানের মালিক মেহেতাবউদ্দিন ৷ তাঁর দাদুর আমল থেকে এই ব্যবসা চলে আসছে । দাদুর পর বাবা রফিকউদ্দিন ব্যবসা চালিয়েছেন । এখন সেই পেন হাসপাতালের দায়িত্ব বছর 60-এর মেহতাবউদ্দিনের হাতে । তিন মেয়ে ও স্ত্রী বাড়িতে রয়েছেন । তাঁর সংসার চলে এই পেন হাসপাতাল থেকে । যদিও একসময় নাওয়া খাওয়া ভুলে হাসপাতালে পেনের ট্রিটমেন্ট করতে সময় ফুরিয়ে যেত । তৎকালীন সময়ে বিদেশি হিরো, লিলি, উইলিয়ান সন, হোয়াইট ফেদার-এর সঙ্গে দেশি শক্তি, বিনা, কমান্ডার, রাইটার-সহ একাধিক কলমের অস্ত্রোপচার করে বিরল থেকে বিরল পেনের রোগ সারিয়েছে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা দোকানিরা ।

আরও পড়ুন: সহজপাঠ-সঞ্চয়িতা এখন আর কেবল বিশ্বভারতীর নয়, তবে কতটা পাঠযোগ্য অন্য প্রকাশনার বইগুলি?

যদিও বর্তমানে সেই হাসপাতালে আর নিব পেনের রমরমা নেই । কালের নিয়মে হারিয়েছে সেই লেখার কলম । এখন তার জায়গায় চলে এসেছে ইউজ অ্যান্ড থ্রো এবং নামিদামি ডট পেন । তবে সেইসব কলমের এখনও ট্রিটমেন্ট হয় এই হাসপাতালে । বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র ক্ষেত্রে এবং অফিস আদালতেও এখনও নিব পেনের প্রচলন রয়েছে । সেখান থেকে গোটা কয়েক মানুষ আসেন পেন সারাতে ও কালি ভরতে ৷ তাই রমরমা না থাকলেও পেশাগত কারণে ব্যবসা কোনওক্রমে টিকিয়ে রেখেছে এই দোকানি ৷ পেনের সঙ্গে জীবিকা অর্জন করতে গ্যাস লাইটার সারাই-সহ একাধিক ব্যবসা তিনি করছেন সেখানে । তবে এখনও তিনি মনে মনে তৃপ্তি পান যখন জেলার-সহ বিভিন্ন জায়গার অভিজ্ঞ বয়স্ক মানুষেরা তাদের নিব পেন নিয়ে হাসপাতালে আসেন এবং পেনের ট্রিটমেন্ট করে নিয়ে যান তাঁর কাছ থেকে ।

দোকানের বর্তমান মালিক মেহতাবউদ্দিন বলেন, "বাপ ঠাকুরদার আমলের এই দোকান ৷ তখন ব্রিটিশ আমল । তখন এত কলমের রমরমা ছিল না । সকলে ফাউন্টেন বা এই নিব পেন ব্যবহার করত ৷ সাহেবরা একটু নিজেদের স্ট্যাটাস মেন্টেন করতেন । তখনকার সময় থেকেই পেন সারিয়ে আসছি আমরা । কালির দোয়াত পালটানো থেকে বিভিন্ন ধরনের রিফিল পরিবর্তন করি । তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখনও এই ফাউন্টেন পেনের সামান্য চাহিদা রয়েছে ৷ কিছু পুরানো গ্রাহক আসে । তাই আজও আমরা সেই হাসপাতালের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি ।"

যদিও এই পেন হাসপাতালের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন শিক্ষক বিশ্বজিৎ দাস ও অনির্বাণ দাসরা । তাঁরা বলেন, "একটা সময় ছিল যখন নিব পেনই সবাই ব্যবহার করত ৷ লেখার প্রধান মাধ্যম ছিল ওই পেন । সেই সময় কলমের কোনও সমস্যা হলেই ছুটে যেতে হয়েছে এই পেন হাসপাতালে । কিন্তু যুগের সঙ্গে পরিবর্তনে আজ হারিয়েছে সেই পেন ৷ সঙ্গে গুরুত্ব হারাচ্ছে ওই পেন হাসপাতালের । তবে এই নিব পেনের স্মৃতি সত্যিই সুন্দর ।"

আরও পড়ুন: বিরল স্নায়ুরোগ! খুদের চিকিৎসার খরচ 18 কোটি, আর্থিক সাহায্যের আবেদন পরিবারের

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.