দাসপুর, 30 অক্টোবর : ভিন ধর্মের মানুষ হয়েও ইসমাইল চিত্রকরের তৈরি কালীপ্রতিমা পুজিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে ৷ তাঁর এই কাজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির তৈরি করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে ৷ প্রতি বছরই কালীপুজোর সময় ক্রেতারা ভিড় জমান ইসমাইলের বাড়িতে ৷ ঠাকুর কিনতে মানুষজন আসেন ভিন জেলা থেকেও ৷
আরও পড়ুন : Kali Puja 2021: কালীপুজোয় লাগে না কোনও পুরোহিত, হয় পাঁঠাবলি
প্রায় চার দশক ধরে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি, পট তৈরি করে চলেছেন ইসমাইল ৷ এই কাজে পরিবারের বাকি সদস্যরাও তাঁকে সাহায্য করেন ৷ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার নাড়াজোল গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল চিত্রকর ৷ বয়স 61 বছর ৷ পট আর মূর্তি তৈরি করেই সংসার চালান ইসমাইল ৷ স্ত্রী ও মেয়েদের সহযোগিতায় একের পর এক গড়ে তোলেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী, কার্তিক, গণেশের প্রতিমা ৷ এলাকায় তাঁর কাজের কদর রয়েছে ৷ তাই ক্রেতার অভাব হয় না ৷ ফলে সারা বছরের খোরাকিটুকু জুটে যায় ৷ তবে সঞ্চয় কিছুই হয় না ৷
ইসমাইল জানালেন, রাজ আমল থেকে এই কাজ করে আসছেন তাঁদের পূর্বপুরুষরা ৷ এখন রাজার রাজত্ব না থাকলেও বাপ, ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারেননি তাঁরা ৷ হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা গড়ে রোজগার করতেই স্বাচ্ছন্দ্য় বোধ করেন ইসমাইলরা ৷ গত বছর করোনা আবহে বরাত তেমন জোটেনি ৷ তবে এবছর কিছুটা হলেও কপাল ফিরেছে ৷ কালীপুজোয় ভালই কাজ পেয়েছেন বৃদ্ধ শিল্পী ৷ সেই কাজ চলছে জোরকদমে ৷ কারণ, হাতে আর সময় নেই বললেই হয় ৷
দাসপুরের এই ঘটনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়েছে ৷ বর্তমানে স্রেফ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিছু মানুষ ধর্মকে শিখণ্ডি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে ৷ তাঁদের গালে জোর থাপ্পড় মারছেন ইসমাইলের মতো মানুষরা ৷ তাঁদের পাশে রয়েছেন অমর কুণ্ডুর মতো প্রতিবেশীরাও ৷ যাঁদের কাছে হিন্দু, মুসলমানের হানাহানি একেবারেই অনভিপ্রেত ৷ অমর জানালেন, ইসলাম ধর্মাবলম্বী শিল্পী হিন্দু দেবীর অবয়ব গড়ছেন, এমন দৃশ্য দেখেই বড় হয়েছেন তাঁরা ৷ তাই তাঁদের কাছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ অর্থহীন ৷ তাঁরা ভালবাসেন মিলেমিশে থাকতে ৷ ভালবাসেন একসঙ্গে উৎসবে মাততে ৷