আসানসোল, ১৯ ফেব্রুয়ারি : পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় যখন সরব গোটা দেশ, তখন সহকর্মীদের হারানোর স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে। কারণ সেই মর্মান্তিক ঘটনাকে একেবারে সামনে থেকে দেখেছেন তিনি। চোখ বন্ধ করলেই ওই ঘটনার ছবি ভেসে উঠছে তাঁর সামনে। তবে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও এখন আর বিচলিত নন। বরং এই ঘটনার বদলা না নেওয়া পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ১০৭ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান জয় গাঙ্গুলি। ETV ভারতের মুখোমুখি হয়ে সেই ঘটনার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বছর আটেক আগে CRPF-এ যোগ দেন বাঁকুড়ার সোনামুখীর বাসিন্দা জয় গাঙ্গুলি। ১৪ ফেব্রুয়ারি শহিদ জওয়ানদের গাড়ির ঠিক ঠিক পিছনের গাড়িতেই ছিলেন জয়। হেডকোয়ার্টারে যাওয়ার জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি CRPF জওয়ানদের কনভয় কাশ্মীর থেকে শ্রীনগরে রওনা দিয়েছিল। জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই একটা গাড়ি তাঁদের কনভয়ে থাকা তিন নম্বর গাড়িতে ধাক্কা মারে। ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গেই উড়ে যায় তিন নম্বর গাড়িটি। শহিদ হন ৪৫ জন জওয়ান। পরে জানা যায় যে গাড়িটি ধাক্কা দিয়েছিল তাতে ভরতি ছিল RDX। এই গোটা ঘটনার নিজের চোখের সামনে দেখেছিলেন জয়। নিমেষের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে দেখেছেন সহকর্মীদের।
আসানসোলের হিরাপুরে জয়ের শ্বশুরবাড়ি। ঘটনার সময় স্ত্রী শ্রাবণী গাঙ্গুলি বাবারবাড়িতেই ছিলেন। টিভিতে জঙ্গি হামলার খবর দেখার পর জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, সফল হননি। এমন কী, নিজের ঠিক থাকার কথা সেই মুহূর্তে পরিবারের সদস্যদের জানাতে পারেননি জয়। ফলত স্বামীর কোনও খবর না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শ্রাবণী। আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি আসানসোল পৌঁছান জয়।
সেই হাসপাতালে ETV ভারতের মুখোমুখি হয়ে ঘটনার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, "ঘটনার পর কিছুক্ষণের জন্য আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। কী ঘটেছে সেটা বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। তারপর গাড়ি থেকে নেমে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলি। তার মধ্যে কোনও স্থানীয় বাসিন্দাকে ঢুকতে দিইনি। আর আহত ও শহিদ জওয়ানদের ঘিরে রেখেছিলাম। যাতে তাঁদের কাছে কেউ না আসতে পারে।"
শহিদ জওয়ানদের বদলার কথা বলতেই জয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বলেন, "শহিদ জওয়ানরা আমাদের সহকর্মী নয়। তারা আমাদের ভাই, বন্ধু। এতদিন একসঙ্গে সব কিছু করেছি আমরা। তবে তাদের মৃত্যুর বদলা আমরা নেবই। দোষীদের ছেড়ে দেব না। সঠিকভাবে বদলা নিয়ে পাকিস্তানকে বোঝাতে চাই যে আমরা চুপ থাকার লোক নই।"
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "প্রত্যাঘাত আনার সিদ্ধান্ত জওয়ানদের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।" আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়তে জওয়ানদের হাত শক্ত করার জন্য দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।