দুর্গাপুর, 26 ফেব্রুয়ারি : "দয়া করে জল নষ্ট করবেন না ৷ আমাদের কাছে আগামী পাঁচ দিনের পানীয় জল মজুত আছে৷" দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় আচমকা এমন পোস্টারে চাঞ্চল্য ছড়াল শ্রমিকমহলে। কিন্তু এমন পোস্টার কেন? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, দামোদরের পাশাপাশি ফিডার ক্যানেলেও দীর্ঘদিন পলিসংস্কার না হওয়ার কারণে নজিরবিহীনভাবে দুর্গাপুর রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানাতে নিরবিচ্ছিন্ন পানীয় জল পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে জলসংকটে দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের বাসিন্দাসহ কারখানার শ্রমিকরা।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা পত্তনের সময় দামোদরের জল ধরে রাখার জন্য দুর্গাপুর ব্যারেজ তৈরি হয়। DVC-র অংশে নদীর রক্ষাণাবেক্ষণ ও ব্যারেজ দেখভালের দায়িত্ব ছিল রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের হাতে। কিন্তু দুর্গাপুর ব্যারেজ প্রতিষ্ঠার পর বহুবার দামোদরের পলিসংস্কারের আবেদন জানানোর পরেও আজও সে কাজ হয়নি। পরে দামোদরের পাশাপাশি শহরের বাসিন্দাদের জলের যোগানের জন্য যে ফিডার ক্যানেলগুলি কাটা হয়৷ কিন্তু সেগুলিও পলি জমতে জমতে মজে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী ফিডার ক্যানেল সংস্কারের দায়িত্বও DVC-র। এদিকে ফিডার ক্যানেলের জলধারন ক্ষমতা কমায় দীর্ঘদিন ধরেই স্টিল টাউনশিপের প্রায় ২৫০০ পরিবারকে দু'বেলার বদলে বর্তমানে একবেলা পানীয় জল দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে এমনিতেই অসুবিধায় রয়েছে ইস্পাত কারখানা ও ASP (আ্যলয় স্টিল প্ল্যান্ট) আবাসনের ১০ হাজার মানুষ। এর উপর এবার নজিরবিহীনভাবে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় কোন কোন সময়ে জল পরিষেবা মিলবে তার নোটিশ দিল কর্তৃপক্ষ।
DSP-র ওয়াটার ট্রিটমেন্ট বিভাগ থেকে জানা গিয়েছে, ইস্পাত নগরীতে দৈনিক ২৫০০ থেকে ২৭০০ মিটার কিউব প্রতি ঘণ্টাতে জল লাগে৷ অন্যদিকে ইস্পাত কারখানায় ২৮০০ থেকে ৩০০০ মিটার কিউব/প্রতি ঘন্টায় পানীয় জল প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার মানুষ এই পানীয় জল পরিষেবার আওতায় পড়েন। এই ১২ হাজার মানুষ যে অদূর ভবিষ্যতে বড়সড় জলসংকটে পড়তে চলেছেন তা বলা বাহুল্য৷এক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠন CITU ও INTTUC একযোগে কারখানার শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারগুলির সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছে।
CITU নেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "দুর্গাপুরেই আমার জন্ম৷ বাবা 40 বছর এখানে চাকরি করেছেন৷ কারাখানা জল নেওয়ার সময় ঠিক করে দিচ্ছে, কোনওদিন এমন দেখিনি৷" INTTUC নেতা জয়ন্ত রক্ষিতের কথায়, "ফিডার ক্যানেলের যা অবস্থা হয়েছে তাতে পলিসংস্কারে না হলে ভবিষ্যতে চরম দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে৷