দুর্গাপুর, 23 মার্চ : ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন না মেলায় আগামী 12 এপ্রিল আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনে ফের ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল হরিশপুর গ্রাম (Election Boycott) ৷
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনও প্রভাব পড়েনি এখানে । কোনও মিসাইল হানাও হয়নি । কিন্তু অন্ডাল থানার অধীনে থাকা হরিশপুর গ্রাম প্রায় যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা । ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িগুলি দেখে মনে হবে মিসাইল হানা হয়েছে । প্রায় 21 মাসে আগে ধ্বসের কবলে গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে । পুনর্বাসনের জন্য একাধিকবার ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করছেন । কিন্তু কোনও কাজ হয়নি । প্রতিবাদে গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোট বয়কট করেছিলেন হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দারা । নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা গ্রামে এসে ভোট দানের আহ্বান জানিয়েছিলেন । কিন্তু গ্রামের একজন বাসিন্দাও বুথে যাননি । ফের একবার ভোট বয়কটের ডাক দিল হরিশপুর ।
আরও পড়ুন : "ভোটের পর কেউ দেখা করে না, তাই এবার ভোট দেব না"
আগামী 12 এপ্রিল আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচন । এই নির্বাচনেও ভোট দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামবাসী । ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে গ্রামে দেওয়াল লেখা হয়েছে । গ্রামের আট-আশি সকলে ভোট বয়কটের দাবিতে সরব হয়েছেন । ইসিএলের কাছে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে শিশুরা সাইকেলের সামনে পোস্টার লাগিয়ে ঘুরছে । পুনর্বাসনের দাবি সংক্রান্ত ব্যানার শরীরে ঝুলিয়ে ঘুরছেন বৃদ্ধরা । গ্রামে প্রবেশের পথে কালো পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
বলরাম ঘোষ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, "2020 সালের 14 জুলাই প্রথমবার ধস হয় গ্রামে । তিনদিন পরে 17 জুলাই দ্বিতীয়বার ধস নামে । কয়েকটা বাড়ি ধসে তলিয়ে গেছে । বহু বাড়ি মাটির নিচে বসে গিয়ে ভেঙে যায় । চাষের জমি মাটির তলায় তলিয়ে গেছে । কর্মহীন হয়ে পড়েছে পরিবার ৷ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে একাধিকবার ইসিএল কর্তৃপক্ষের অফিস ঘোরাও করেছি । কিন্তু কিছুই হয়নি । তাই গত বিধানসভায় ভোট দিইনি। এবার লোকসভা উপনির্বাচনেও ভোট দেব না।"
গ্রামের বাসিন্দা শোভা চৌধুরী বলেন, "পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে দিলে আমরা ভোট দেব না । জীবনের ঝুকি নিয়ে কিভাবে ভাঙাচোরা বাড়িতে বাস করছি । আমাদের জীবনের মূল্য নেই যখন ভোট দিয়ে কি হবে ।" বাড়ি, কুয়ো, আস্ত গাড়ি এমনকি রাস্তা পর্যন্ত মাটির নিচে তলিয়ে যায় । তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের একদিক মাটির নিচে বসে যায় । পরে কার্যালয়টি ভেঙে ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয় । আতঙ্কে গ্রামবাসী বাড়ি ছেড়ে কেউ আত্মীয়র বাড়িতে কেউ আবার ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন । ইসিএলের আধিকারিকরা গ্রাম পরিদর্শন করে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন । কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও পুনর্বাসান মেলেনি । কতদিন আর ভাড়া বাড়ি ও আত্মীর বাড়িতে থাকবেন । তাই বাসিন্দারা গ্রামে ফিরে এসেছেন ।
গ্রামের এক মহিলা মাধবী ঘোষ বলেন, "পরিবার নিয়ে ভাঙা বাড়িতে কিভাবে বাস করি তা আমরাই জানি । আতঙ্কে রাতে ঘুম হয় না ।"
রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক হরিশপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য ইসিএলের কাছে দরবার করেছিলেন । রানিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্ভুক্ত এই এলাকা সেখানকার বিধায়ক তাপস বন্দ্য়োপাধ্যায় স্পষ্টভাবে ইসিএলের ভূমিকার কড়া সমালোচনার পাশাপাশি জানান হরিশপুর গ্রামের বসিন্দাদের ক্ষোভ ন্যায়সংগত কিন্তু তাঁরা ধীরে ধীরে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন ।