আসানসোল, 11 মে: অনুব্রত মণ্ডলের দাপটে এক সময় বীরভূমে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত ৷ তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর কি সেই দাপট আর অবশিষ্ট নেই ৷ বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতির কথা শুনলে তেমনটা মনে হতেই পারে ৷ কারণ, বৃহস্পতিবার আসানসোল সিবিআই আদালতে শুনানির সময় তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ভোলে ব্যোম রাইস মিলে বহু জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে । চুরি বাড়ছে ৷
প্রসঙ্গত, গরুপাচার মামলায় এ দিন তিহাড় জেল থেকে আসানসোল সিবিআই আদালতে অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গলের ভার্চুয়াল প্রোডাকশন হয় । সেখানেই তিনি এই কথা বলেন ৷ আসলে তিনি তাঁর রাইস মিলের অ্যাকাউন্ট ডি ফ্রিজ করার বিষয়ে উত্থাপন করেছিলেন বিচারকের সামনে ৷ সেই সময়ই চুরির বিষয়টি উল্লেখ করেন অনুব্রত মণ্ডল ৷
তিনি বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীকে বলেন, "স্যার রাইস মিলের অ্যাকাউন্টটা ডি ফ্রিজ করে দিন ।" বিচারক অনুব্রত মণ্ডলের কাছে কোন রাইস মিল, তা জানতে চান । অনুব্রত বলেন, ‘‘ভোলে ব্যোম রাইস মিল । রাইস মিলের দু’টো অ্যাকাউন্ট যেন খুলে দেওয়া হয় । 200 শ্রমিক বেতন পাচ্ছে না । বহু জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে । চুরি বাড়ছে ৷’’ বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী স্পষ্ট বলেন, "আপনার কথায় আমি কোনও অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারি না ৷ আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করুন । আপনার ও সিবিআই দু’পক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।"
এদিকে এ দিনের শুনানিতে অনুব্রত মণ্ডলের কোনও আইনজীবী ছিলেন না । বা তাঁর জামিনের জন্য কোনও আবেদন এ দিন করা হয়নি । বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গল হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন । এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী 7 জুন । বিচারক তিহাড় জেলের সুপারকে অনুব্রত মণ্ডলের চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন ।
ভার্চুয়াল শুনানিতে সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী অনুব্রত মণ্ডলের কাছে জানতে চান, "আপনাকে খুব ক্লান্ত লাগছে । অনুব্রত বাবু, কেমন আছেন ? উত্তরে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, "শরীর ভালো নেই । নানারকম অসুবিধা হচ্ছে ।" এরপরে বিচারক জানতে চান, "ডাক্তার দেখছে তো ?" অনুব্রত বলেন, "ডাক্তার দেখাচ্ছি । জেলের মেডিক্যাল ওয়ার্ডে পড়ে আছি ।"
বিচারক অনুব্রত মণ্ডলের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে তিহাড় জেলের সুপারকে অর্ডারে লিখিত পাঠিয়েছেন । সায়গল হোসেনের শুনানিতে এদিন পুনরায় তাঁর গয়নার প্রসঙ্গ উঠে আসে । সায়গলের আইনজীবী আগেই আবেদন করেছিলেন গয়না ফেরত পাওয়ার জন্য । বৃহস্পতিবার শুনানিতে সায়গলের উদ্দেশ্যে বিচারক বলেন, "সায়গল তোমার গয়নার রিপোর্ট অর্ধেক এসেছে ।"
এরপর সরকারি আইনজীবীর কাছে সিবিআই বিচারক জানতে চান, ‘‘গয়নার রিপোর্টটা কী হল?’’ সরকারি আইনজীবী বলেন, "তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি ।" এরপর বাইরে গিয়ে সিবিআই তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে কথা বলেন সরকারী আইনজীবী । ফিরে এসে বলেন, "স্যার তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয়েছে । পরবর্তী শুনানির দিনই সম্পূর্ণ রিপোর্ট জমা করা হবে ।" এরপর সায়গলকে বিচারক বলেন, "আমি দেখছি । অনেকদিন ধরেই বিষয়টা বাকি পড়ে আছে । এবার দ্রুত ব্যবস্থা হবে ।"
আরও পড়ুন: 12 কোটি টাকা মূল্যের জমি অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎবরণ কিনেছিলেন মাত্র 7.71 কোটিতে