আসানসোল , 12 জুলাই : জলই জীবন ৷ জল ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না ৷ আর সেই জল নানাভাবে অপচয় হচ্ছে ৷ ভূ-জলস্তর নেমে যাচ্ছে ৷ জলের অভাব তৈরি হচ্ছে ৷ আসানসোলের কুলটি এলাকায় চিরকালই জলের অভাব ৷ তাই আজ জল সংরক্ষণ দিবসে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আসানসোল শহরবাসীকে সচেতন করতে শহরজুড়ে হোর্ডিং লাগানো হয়েছে । হোর্ডিংয়ে লেখা ," জল বাঁচান , জীবন বাঁচান " ৷ আগেও বাম আমলে জল সংরক্ষণের জন্য় সালানপুরে ''রেইনসেন্টার'' প্রকল্প চালু করা হয়েছিল ৷ কিন্তু সরকার বদলেছে ৷ তাই পূর্ব ভারতের প্রথম রেইনসেন্টার এখন অবহেলায় ৷ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে ৷ প্রকল্পটি মানুষকে সচেতন করতেই তৈরি করা হয়েছিল । যাতে বৃষ্টির জলকে মানুষ বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে ধরে রাখে । কিন্তু প্রকল্পও বন্ধ ৷ মানুষও সচেতন হচ্ছে না ৷ তবু এর মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছেন কেউ কেউ । যেমন কুলটির মিঠানি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংশুক মুখোপাধ্যায় ৷ স্বল্প খরচে নিজের বাড়িতেই করে ফেলেছেন জল সংরক্ষণ প্রকল্প ।
কুলটির মিঠানি স্কুলের শিক্ষক কিংশুক মুখোপাধ্যায় । পাশাপাশি বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য । নিজের বাড়িতেই স্বল্প খরচে কিংশুকবাবু তৈরি করে ফেলেছেন জল সংরক্ষণ প্রকল্প । এর মাধ্যমে বৃষ্টির জলকে যেমন ধরে রাখা যায় , তেমনই এই জল দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে যেমন কাপড় কাচা , বাসন মাজা বা ঘর মোছায় ব্যবহার করা যায় ৷ খুব স্বল্প খরচেই বাড়িতে বানিয়ে নেওয়া যায় জল সংরক্ষণ প্রকল্পটি ৷ এর জন্য মাত্র দুই থেকে তিনটি সামগ্রী লাগবে -
- রেইন পাইপ
- বড় ট্যাঙ্ক
- মশারি বা নেটে জাতীয় কোনও বস্তু
এই সামগ্রীগুলির মাধ্য়মে কীভাবে জল সংরক্ষণ করা যায় ?
কিংশুকবাবু জানাচ্ছেন , " এর জন্য বাড়ির ছাদ করতে হবে একেবারে মসৃণ ৷ নির্দিষ্ট দিকে ঢালু করতে হবে ৷ যাতে সেই ঢালু পথ দিয়ে বৃষ্টির জলকে রেইন পাইপের মাধ্যমে নিচে নিয়ে আসা যায় । এরপর পাইপের মুখ একটি বড় জলের পাত্র বা ট্যাংক রাখতে হবে ।"
তিনি আরও জানিয়েছেন , বৃষ্টি শুরু হলে প্রথম 10 মিনিট সেই জল তিনি বাইরে ফেলে দেন । এরপর থেকে যে জল পড়ে তাতে মাত্র পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে একটি বড় 500 লিটারের ট্যাংক ভরতি হয়ে যায় । মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেই তা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন তিনি ৷ তবে বৃষ্টির জল ট্যাংকে ভরার আগে অবশ্যই মশারি জাতীয় কিছু ব্যবহার করে তা ছেঁকে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।
এখানেই শেষ নয় । কিংশুকবাবু জানাচ্ছেন , বৃষ্টির জলে ট্যাংক ভরে গেলে উলটোদিকে আরেকটা পথ করে রাখা হয়েছে যে দিক দিয়ে জল বের হতে পারে । ট্যাংক থেকে সেই জল যেখানে পরে সেখানে বড় গর্ত করে সেই জলকে মাটির তলায় পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । অর্থাৎ এক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থে যে জলের স্তর নেমে যাচ্ছে সেটা রিচার্জ করার ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে ।
সামান্য পাইপের খরচ আর ট্যাংক কিনতে পারলেই কিন্তু এই প্রকল্প যেকোনও বাড়িতেই করা যায় । কিংশুকবাবুর এই প্রকল্প দেখে উৎসাহিত হয়ে কুলটির সোদপুর গ্রামে এমনকী কুলটি কলেজেও এই প্রকল্প তৈরি হয়েছে । তিনি নিজে কুলটির বিজ্ঞান মঞ্চের অফিসে এই প্রকল্পটি তৈরি করেছেন ৷ যেখানে সংরক্ষিত জল গাছে দিয়ে কাজে লাগানো হচ্ছে ৷ এছাড়া , সোদপুর , দিশাগড়ে এই প্রকল্প তৈরি করেছেন তিনি ৷
চিরকালই কুলটি অঞ্চলে জলের অভাব থাকে । এই ধরনের প্রকল্প সবাই যদি বাড়িতে তৈরি করে নেন , তাহলে বর্ষাকালে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করার জল সহজেই পাওয়া যাবে বলে দাবি শিক্ষকের ।