দুর্গাপুর, 13 ডিসেম্বর: কলকাতার পরে দক্ষিণবঙ্গের অণ্ডালে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বেসরকারি বিমাননগরী কি দুর্গাপুরের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এটা স্পষ্ট যে অণ্ডাল বিমাননগরী দুর্গাপুরের শিল্প ভবিষ্যৎ, শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে দুর্গাপুরের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলির উন্নয়নে বড় ভূমিকা নিয়েছে। পাশাপাশি, দুর্গাপুর ও আসানসোলে আজ ভিন রাজ্যের বড় বড় হাসপাতালের বিশিষ্ট নামী চিকিৎসকদের আনাগোনার মূল কারণ অণ্ডাল বিমানবন্দর।
এছাড়াও দুর্গাপুর-ঘেঁষা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও পূর্ব-বর্ধমানের বহু মানুষ আজ দুর্গাপুরকেই দেশের বিভিন্ন শহরে বিমানযোগে যাতায়াতের ডেস্টিনেশন করে ফেলেছেন অণ্ডাল বিমানবন্দর থেকে। অণ্ডালে কার্গো পরিষেবা চালু হওয়ার পরে আরও বড় জায়গায় এই বিমাননগরী। কার্গো পরিষেবা চালু হওয়ার ফলে কলকাতার পরে এরাজ্যের দুর্গাপুরকে কেন্দ্র করে কাঁচা সবজি, ফল, ডিম, দুধ-সহ বহু পণ্যের আদান-প্রদান বাড়ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ব্যবসায়িক স্বার্থ সম্পর্কিত কার্গো পরিষেবা অণ্ডাল বিমানবন্দরকে এক আলাদা মাত্রা দিয়েছে।
একদিন 11টি মৌজার জমি অধিগ্রহণ করে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বেসরকারি উদ্যোগে অণ্ডাল বিমান নগরী গড়ে ওঠার লগ্নে এই বিমানবন্দর কতটা সফল হবে আমিও বহু সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু আজ এই অণ্ডাল থেকেই দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, মুম্বই এবার পরিষেবা চালু এবং তাতে প্রতিদিন যে পরিমাণ যাত্রী যাতায়াত করছে, তা দেখলে একথা স্পষ্ট আগামিদিনে এই বিমানবন্দর আরও বড় আকার ধারণ করবে। দুর্গাপুরকে সামনে রেখে অণ্ডাল বিমানবন্দরের মাধ্যমে আগামিদিনে শান্তিনিকেতন-সহ এরাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, প্রতিবেশী বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বহু পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড় জমবে বলেও আশা করা যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, দুর্গাপুরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে এখন নেপাল ও বাংলাদেশের বহু রোগী আসছে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে। দুর্গাপুর বণিক সভার সভাপতি চন্দন দত্ত ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "আমরা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি যে দুর্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশের যে রোগীরা আসছেন তার জন্য অবিলম্বে অল বিমান পরিষেবা চালু হোক। অণ্ডাল বিমানবন্দরে বিভিন্ন ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে তার লাভ পাবে দুর্গাপুর-সহ আশপাশের জেলাগুলির বহু মানুষ। অণ্ডাল বিমাননগরী সম্পূর্ণতা পাওয়ার পর দুর্গাপুরের ছবি অনেকটা বদলে যাবে। আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বিরাট উন্নয়ন ঘটবে।"
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা দক্ষিণবঙ্গের বিশিষ্ট উদ্যোগপতি কবি দত্ত বলেন, "আজ অণ্ডাল বিমানবন্দর শুধু দুর্গাপুর নয় কলকাতার বাইরে বহু জেলার মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর আগামিদিনে দিশা দেখাবে দক্ষিণবঙ্গকে। বিমাননগরীতে যা যা প্রজেক্ট গড়ে ওঠার কথা সেগুলি সম্পূর্ণতা পাওয়ার পর দুর্গাপুরের ভোল বদল হয়ে যাবে।" শিল্পাঞ্চল ও কয়লাঞ্চলের বেকার যুবকরা অনেকেই আশায় বুক বাঁধছেন দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই বিমাননগরীকে কেন্দ্র করে।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য অণ্ডাল বিমাননগরীর চারপাশে যে জমির দাম ছিল একেবারে নগণ্য, এখন সেই জমির দাম আকাশছোঁয়া। সেই জমির কারবার করে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের আঙুল ফুলে কলা গাছ। জমির মালিকরাও কোনওদিন ভাবেননি এত চড়া দাম তারা পাবেন। বিমাননগরীর পাশে আরতী, আমলৌকা, বাঙুড়ি, যমুনা, গোপালমাঠ, দক্ষিণখণ্ড, দুবচুড়ুরিয়া মৌজার জমির দাম এখন বিরাট অংক ছুঁয়েছে। তাই অণ্ডাল বিমানবন্দরকে সামনে রাখে আর্থিক সমৃদ্ধির পথ যে অনেকটাই খুলে গেছে, তা কিন্তু স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: