আসানসোল, 23 জানুয়ারি: সাইকেলে ঝোলানো রং-তুলি। শহর, মফস্বল, গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে একমনে নেতাজি এঁকে চলেছেন। কালো রঙে তুলি ডুবিয়ে এক মুহূর্তেই নেতাজির (Netaji Subhash Chandra Bose) ছবি ফুটে উঠছে। দেওয়ালে একটি নেতাজির ছবি আঁকতে বড় জোর 2 মিনিট সময় লাগে। 45 বছরের বেশি সময় ধরে আসানসোল-সহ আশেপাশের জেলা এমনকী ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় দেওয়ালে নেতাজির এঁকেই দিন গুজরান করেন কুলটির বেজডি গ্রামের বিশ্বনাথ বাউরি।
কুলটির বেজডি নামে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ বাউড়ি। বয়স আনুমানিক 60 বছর। চাষাবাদ করে দিন চলত তাঁর। কিন্তু বাম আমল আসতেই বিশ্বনাথের দিন বদলে যায়। কুলটির তৎকালীন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ছিলেন মানিকলাল আচার্য। তিনিই খোঁজ পেয়েছিলেন বিশ্বনাথ বাউরির। জানতে পারেন তাঁর বিধানসভা এলাকায় বিশ্বনাথ বাউরি নামে এক যুবক ভালো দেওয়াল লিখন করেন। বিশ্বনাথের কাছে মানিক লাল আচার্য জানতে চেয়েছিলেন নেতাজির ছবি আঁকতে পারবে কি না।
ফরওয়ার্ড ব্লকের আদর্শ নেতাজি, আর সেই কারণে কুলটির বিভিন্ন দেওয়ালে নেতাজির ছবিতে ভরিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের সেই নেতার। বিশ্বনাথ সম্মতি জানালে শুরু হয় দেওয়ালে বিশ্বনাথের নেতাজি আঁকা। 1977 সাল থেকেই বিশ্বনাথ দেওয়ালে নেতাজি আঁকছেন। শুধু নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষেই নয়, বছরের সবসময়েই তাকে নেতাজি আঁকতে হয়। দিনে প্রায় 70 থেকে 80টি করে নেতাজির ছবি আঁকেন বিশ্বনাথ বাউরি। আগে 1 মিনিটেই একটি নেতাজি আঁকতে পারতেন বিশ্বনাথ। কিন্তু বছর দুয়েক আগে হঠাৎই স্ট্রোক হয় বিশ্বনাথের।
তারপরে তাঁর প্যারালাইসিস হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর আবার শুরু করেন আঁকা। এখন একটি নেতাজি ছবি আঁকতে তার দেড় থেকে 2 মিনিট সময় লাগে বলে বিশ্বনাথ বাউরি জানিয়েছেন। একটি নেতাজির ছবিতে 60 টাকা মজুরি পান। এর পাশাপাশি ফরোয়ার্ড ব্লকের বাঘ ও অন্যান্য দেওয়াল লিখনও করেন। কোলিয়ারিতে রুক্ষ জমিতে চাষাবাদ করলে কতটুকুই বা লাভ হত। তাই নেতাজির ছবি এঁকে তার ভালোই দিন চলছিল। কিন্তু রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ায় কুলটিতে আসনটি হাত ছাড়া হয় ফরওয়ার্ড ব্লকের।
আরও পড়ুন: 450টি স্টিলের বাটি ও 6 টন বালিতে নেতাজিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য সুদর্শনের
ফলে দলের সেই প্রতিপত্তি কম হয়ে আসে এবং বিশ্বনাথের ভাড়ারে টান পড়ে। এখন বিশেষ বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানের আগে বিশ্বনাথের ডাক পড়ে তাঁর। দেওয়ালে নেতাজির ছবি আঁকা শুরু হয় বিশ্বনাথের। তবে আগের মতো নয়। রোজগার কমেছে। বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দিন চলে। কিন্তু তাও তিনি শিবির বদলে কখনোই অন্য কোনও প্রতীক চিহ্ন আঁকতে যাননি। হয়তো ছবি আঁকতে গিয়েই কোথাও বিশ্বনাথ বাউরি নেতাজির আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়ে গিয়েছেন।