আসানসোল, ২২ জুন : ছেলে চোর ! সহ্য করতে পারেননি মা ৷ তাই ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার দু‘দিনের মধ্যেই আত্মঘাতী হলেন তিনি ৷ সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে দু’বছরেরও বেশি সময় ৷ কিন্তু তার পরও বদলাননি ছেলে ৷ বরং সম্প্রতি একই কাজ করার অভিযোগে তাঁর আবার ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে ৷
এতক্ষণ যাঁর কথা পড়লেন, তিনি সৌমাল্য চৌধুরী ৷ সম্প্রতি হাওড়ার সাঁকরাইল থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে ৷ জেলার নাজিরগঞ্জে একটি চুরির ঘটনায় তিনি মূল অভিযুক্ত ৷ ঘটনার কথা পৌঁছেছে সৌমাল্যর বাবা সলিলকুমার চৌধুরীর কাছে ৷ এই খবর পেয়ে স্ত্রীকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ এই বৃদ্ধর চোখে জল ৷ কাঁদতে কাঁদতেই বলছেন, ‘‘ছেলেটা আমাকে পুরো নিঃস্ব করে দিয়েছে ৷’’
আরও পড়ুন : ECL coal mines : ইসিএলের খনি এলাকায় ধস, বিষাক্ত ধোঁয়ায় আতঙ্ক
সলিলবাবু পূর্ত বিভাগে কাজ করতেন ৷ স্ত্রী মধুছন্দাদেবী ছিলেন বার্নপুর গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা ৷ অবস্থাপন্ন, স্বচ্ছল পরিবার ৷ সেই পরিবারে বড় হয়েও কেন চুরির নেশা হল সৌমাল্যর ? উত্তর হাতড়াচ্ছেন ওই বৃদ্ধ ৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, ‘‘ছোটবেলায় মায়ের থেকে, আমার থেকে টাকা সরাত ৷’’ কিন্তু সেটাই যে বড় হয়ে চুরির নেশায় পেয়ে বসবে কে জানত ?
আর সেই নেশার কথা যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন তা মেনে নিতে পারেননি মধুছন্দাদেবী ৷ সলিলবাবু জানালেন, ২০১৮ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি চুরির দায়ে প্রথম গ্রেফতার হয় সৌমাল্য । সেই ঘটনা মেনে নিতে না পেরেই দু’দিন পর আত্মঘাতী হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী ৷ তার পর থেকে আসানসোলের কোর্ট মোড় এলাকায় বহুতল আবাসনে তাঁর নিঃসঙ্গ জীবনযাপন শুরু ৷
আরও পড়ুন : Kaliachak Murder Case : কীভাবে খুন-কীভাবেই বা বাঁচল দাদা, ঘটনার পুনর্নির্মাণে দেখাল আসিফ
যদিও পরে ছেলে ছিল কিছুদিন ৷ তিনি ভেবেছিলেন ছেলে বোধহয় শুধরে গিয়েছে ৷ কিন্তু নাহ ! বরং বাবার সঞ্চয়, মায়ের সঞ্চয় সব নিয়েই নিয়ে চলে যান সৌমাল্য ৷ সলিলবাবুর দাবি, সব মিলিয়ে প্রায় 19 লক্ষ টাকা নিয়ে চলে গিয়েছে ছেলে ৷ এমনকী, বাড়ির দলিলও নিয়ে গিয়েছে ৷
তার পর... ! এবার সলিলবাবুর কথায় কিছুটা আক্ষেপ ধরা পড়ে ৷ তিনি জানান, ছেলে যোগাযোগ করেছিল ৷ জানিয়েছিল, মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় থাকে ৷ চাকরিও পেয়েছে ৷ সেখানে গিয়েওছিলেন তিনি ৷ তার পর কী যে হল, এখনও ধন্দে সলিলবাবু ৷ তবে ছেলে যদি সত্যিই চোর হয়, তাহলে সৌমাল্যর শাস্তির দাবি এখনই জানিয়ে রাখলেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Crime in Malda : বাবার টাকা হাতাতে অপহরণের নাটক ছেলের, অপরাধের সিরিজ মালদায়
কিন্তু বাবা তো ! তাই ফের হতাশা ঝরে পড়ে তাঁর গলায় ৷ বলেন, ‘‘ছেলেকে বলেছিলাম, কুসঙ্গ ত্যাগ করে ব্যবসা কর । আমার ছেলে খুব সৎ ছিল ।’’
হয়তো তিনি ভাবছেন, ‘‘যদি আমার কথা শুনত সৌমাল্য ৷ তাহলে.... ৷’’