আসানসোল, 27 মার্চ: একসময় দল, গণসংগঠন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা কুলটির রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এখন তাঁরাই নাকি বঞ্চিত ৷ আর এমনই অভিযোগ তুলে 'বঞ্চিত তৃণমূল' মঞ্চ (Banchit Trinamool Manch in Asansol) তৈরি করে প্রতিবাদে সামিল হলেন সেই সব তৃণমূল নেতারা ৷ তাঁদের অভিযোগ কুলটিতে জনৈক তৃণমূল নেতা অসামাজিক লোকজনের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন ৷ আর আসল তৃণমূল নেতাদের বঞ্চিত করতে চাইছেন ৷ তাই তাঁরা প্রতিবাদে নেমেছেন ৷ প্রয়োজনে তারা বাস ভরতি লোক নিয়ে গিয়ে নবান্ন এবং তৃণমূল ভবন অভিযানও করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ৷ রবিবার বঞ্চিত তৃণমূলের এই সভাকে ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ৷
একসময় কুলটি ছিল কংগ্রেসের ঘাঁটি ৷ পরবর্তীকালে তৃণমূলের দখলে আসে কুলটি ৷ 2009 সালে রাজ্য পালা বদলের আগেই কুলটি পৌরসভা দখল করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস ৷ 2011 সালে কুলটির বিধায়ক হন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ৷ মূলত তাঁর নেতৃত্বেই কুলটিতে তৃণমূল কংগ্রেস চলতে শুরু করে ৷ কিন্তু, উজ্জ্বল বাবুকে পছন্দ করতেন না কুলটিতেই দলের একাংশ ৷ ধীরে ধীরে সেই দূরত্ব বাড়তে শুরু করে ৷ এরপর পরপর লোকসভা ভোটে কুলটিতে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয় তৃণমূল ৷
শুধু তাই নয়, গত বিধানসভা ভোটেও কুলটিতে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় পরাজিত হন ৷ জেতে বিজেপি ৷ কুলটির বাকি নেতারা দোষ দিতে শুরু করেন উজ্জ্বলকে ৷ আর যার ফলে স্পষ্টত বিভাজন হয়ে যায় দুই শ্রেণির ৷ বর্তমানে উজ্জ্বল বিরোধীরা তৃণমূলের কোনও কাজে ডাক পাচ্ছেন না বলেই অভিযোগ উঠেছে ৷ তারা কার্যত বঞ্চিত হয়ে রয়েছে বলে দাবি ৷ আর তাই 'বঞ্চিত তৃণমূল মঞ্চ' তৈরি করে পুরনো সেই তৃণমূল নেতারা একত্রিত হয়েছেন ৷ রবিবার একটি কর্মী সম্মেলন করে তারা দলকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ৷
'বঞ্চিত তৃণমূল' মঞ্চে রয়েছেন কুলটি পৌরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চৌধুরী, কুলটি ব্লকের তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক প্রেসিডেন্ট বিমান আচার্য, তাঁর ছেলে চন্দন আচার্য এবং তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্যস্তরের নেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যরা ৷ পূর্ণেন্দু রায় তাঁর বক্তব্যে সরাসরি জানিয়েছেন, কুলটির এই পতন তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না ৷ তাঁরা তৃণমূলকে বাঁচাতে চান ৷ প্রয়োজনে নবান্ন এবং তৃণমূল ভবন অভিযানও করতে রাজি ৷ কুলটি থেকে বেশ কয়েকটি বাস নিয়ে এই বঞ্চিত তৃণমূলদের নিয়ে গিয়ে সুব্রত বক্সি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা ৷
আরও পড়ুন: মমতার সতর্কবার্তার পরদিনই নানুরে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
তৃণমূল যুব নেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমরা দলে থাকতে চাই ৷ দলের কাজ করতে চাই ৷ কিন্তু আমাদের কোনও মিটিং-মিছিলে ডাকা হয় না ৷ কুলটির এক নেতা কিছু অসামাজিক লোকজনকে নিয়ে চলছেন ৷ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে ৷ আমাদের ডাকা হচ্ছে না । আমাদের সংগঠনকে কাজে লাগানো হচ্ছে না বলেই কুলটিতে পরপর পরাজিত হচ্ছে দল ৷"
নাম না করলেও সবাই ইঙ্গিত করেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের দিকেই ৷ বিষয়টি নিয়ে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "কে কি অভিযোগ করছে আমি তা জানি না ৷ আমি কোনও অসামাজিক লোকজন নিয়ে চলি না ৷ যাঁরা চাইছেন তাঁরা আসুন, দলের কাজ করুন ৷ আমি তো সবাইকে নিয়ে চলতে চেয়েছি ৷"