দুর্গাপুর, 28 সেপ্টেম্বর : ছেলেধরা সন্দেহে ক্ষুব্ধ জনতা বেধড়ক মারধর করেছিল অণ্ডালের কাজোড়া এলাকার হরিশপুরের বাসিন্দা বিনদানন্দ গোপকে । ক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিল, "তোর জাত কী ?" আধমরা অবস্থায় উত্তরে বলেছিলেন, হিন্দু । উত্তরটা শুনে ক্ষুব্ধ জনতা একটু শান্ত হয়েছিলেন । বন্ধ হয়েছিল তাঁর উপর প্রহার । কিন্তু ততক্ষণে প্রায় সব শেষ । হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি তাঁকে । গণপিটুনির এই ঘটনায় কার্যত নাম না নিয়ে BJP-কেই দুষতে দেখা গেল CPI(M)ও তৃণমূলকে ।
বৃহস্পতিবার (26 সেপ্টেম্বর) রাতে একটি ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে । তারপরেই বিনদানন্দের গণপিটুনির বিষয়টি গোচরে আসে । গতকাল এই ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে একে অপরকে দুষতে দেখা যায় । তৃণমূল ও CPI(M)-এর তরফে কার্যত নাম না করে এই ঘটনার জন্য BJP কে দায়ি করা হয় । তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই ঘটনা মর্মান্তিক । সারা বিশ্বে বিশেষ করে বাংলায় জাতপাতের যে লড়াই নতুন করে তৈরি হয়েছে তার রহস্য বের করার জন্য সাংবাদিকের কাছে আমার অনুরোধ । যদি এই ঘটনায় কোনও রাজনৈতিক দলের মদত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি । "
পশ্চিম বর্ধমানের CPI(M) সদস্য পঙ্কজ রায় বলেন, "দেশ, সভ্যতা, সমাজ কোথায় যাচ্ছে আমি জানি না । আজ থেকে 10 বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের ঘটনার কথা ভাবতে যেত না । যারা এই ছেলেধরা গুজব রটিয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । আমি বলছি, এর পিছনে মাস্টারমাইন্ড আছে ।"
পশ্চিম বর্ধমান জেলার BJP-র গুণীজন সেলের অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা কোনওভাবে এই ঘটনার সমর্থন করি না । যদি এরকম ভবঘুরেকে কেউ দেখতে পায় তাহলে তাকে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া উচিত । যদিও পশ্চিবঙ্গের প্রশাসনের অবস্থা খুবই খারাপ । তারা নিজেরাই দোষ ঢাকার জন্য দৌঁড়ে বেরাচ্ছে । তাও আমি বলব এরকমভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয় । "
প্রসঙ্গত, 30 অগাস্ট বিধানসভায় পাশ হয় দা ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অফ লিঞ্চিং বিল 2019 বা গণপ্রহার রোধ বিল । এই বিল অনুযায়ী, গণপ্রহারে কারও মৃত্যু হলে দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হবে । গণপ্রহারে কেউ জখম হলে দোষীর সর্বোচ্চ তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে । কিন্তু বিল পাশ হওয়ার পরেও এ বিষয়ে যে জনমানসে এখনও সেভাবে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি তা দুর্গাপুরের ঘটনায় ফের একবার প্রমাণিত হল ।