আসানসোল, 2 জুন : তালা খুলে ঘরে ঢুকতেই নাকে আসে বাজে গন্ধ । পুরো বাড়ি অগোছালো । রান্নাঘর থেকে বাথরুম, সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নোংরা । শোওয়ার ঘরে খাট থাকলেও নেই তোশক । এই সবের মাঝেই পড়ে আছে বছর 12-র একটি ছেলের মৃতদেহ । কপালে গুলির দাগ । কপাল বেয়ে রক্ত নেমেছে মেঝেতে । মাথার চারিপাশে পড়ে রয়েছে চাপ-চাপ রক্ত ।
কিন্তু, হিসেব মিলছে না পুলিশের । তালা-বন্ধ ঘরে কীভাবে ওই কিশোরকে খুন করল কেউ তা-ই বুঝে উঠতে পারছে না পুলিশ । কিশোরের বাবা ভূপিন্দর সিংয়ের মতে, বাড়ির জানালা খোলা ছিল, সেখান থেকেই কেউ গুলি চালিয়ে মেরে ফেলেছে ছেলেকে । কিন্তু, খটকা থেকেই যাচ্ছে । তাই দফায় দফায় ভূপিন্দরকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ । পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, যদি শরণদীপ আত্মহত্যা করে তাহলে ঘটনাস্থান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হত। তা পাওয়া যায়নি। জানালার বাইরে থেকে যদি গুলি করা হয় তাহলে কপালে আরও বড় গর্ত হত কিংবা খুলি উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এক্ষেত্রে তা হয়নি। মনে করা হচ্ছে, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমেই ভূপিন্দর সিং বলেছেন, সন্ধ্যাবেলায় ছেলে শরণদীপ সিং বলেছিল সিঙাড়া খাবে । রাতে বাবা-ছেলে মিলে হালুয়া খাওয়া হবে । তাই পাড়ার দোকানে সিঙাড়া ও সুজি কিনতে গিয়েছিলেন । ছেলে একা বাড়িতে থাকায় বাইরে থেকে তাল দিয়েই যান । বাড়ি ফিরে ছেলেকে ডাকাডাকি করেন । কিন্তু, ছেলের কোনও সাড়া পাননি তিনি । তিনটি ঘরে খোঁজাখুঁজি করেন । তারপরই একটি ঘরে দেখতে পান ছেলের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে । কপালের মাঝে গুলির দাগ ।
পুলিশের তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, শরণদীপের খুনের জন্য ভূপিন্দরকেই সন্দেহ করছে তারা । তাই গতরাত থেকেই দফাই দফাই চলছে জেরা । আজ রাধানগর রোডের পাঞ্জাবি পাড়ায় তাঁদের বাড়িতে ফের নিয়ে আসা হয় ভূপিন্দরকে । ঘটনাস্থানে আসেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ACP শান্তব্রত দাস । যে ঘর থেকে শরণদীপের দেহটি উদ্ধার হয়েছে, সেই ঘরেই দরজা বন্ধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । বেরিয়ে আসার সময় পুলিশকে কিছু হাতে নিয়েও বের হতে দেখা যায় । তবে, সঙ্গে কী ছিল তা এখনই তদন্তের জন্য খোলসা করে বলতে নারাজ পুলিশ । জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফের ভূপিন্দরকে সঙ্গে নিয়ে যায় পুলিশ ।
প্রসঙ্গত, গতরাতে আসানসোলের হিরাপুর থানার অন্তর্গত রাধানগর রোড পঞ্জাবি পাড়া এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে শরণদীপ সিংয়ের দেহ উদ্ধার হয় । ঘটনায় দফায় দফায় ভূপিন্দর সিং ও পরিবারের বাকি সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ । অন্যদিকে, পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকায় তারাও ঘটনার পর ভূপিন্দরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয় । অনুমান করা হচ্ছে, পুলিশ ঘটনার তদন্তের একেবারে শেষ মুহূর্তে । তদন্ত শেষ হলেই পুলিশের তরফে বিষয়টি নিয়ে জানানো হবে ।